স্টাফ রিপোর্টার : মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত সাবেক প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের ১৯তম সাক্ষী নায়েব আলীকে আসামিপক্ষের জেরা শেষ হয়েছে।

মঙ্গলবার ২০তম সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।

সোমবার সাক্ষী নায়েব আলীকে জেরা শেষ করেন কায়সারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম। রোববার সাক্ষ্য দেওয়ার পর তাকে জেরা শুরু করেছিলেন কায়সারের অপর আইনজীবী এস এম শাহজাহান। মঙ্গলবার কায়সারের বিরুদ্ধে ২০তম সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেন চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল।

গত ৯ মার্চ শুরুর পর এ পর্যন্ত কায়সারের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আরও ১৮ জন সাক্ষী। তারা হচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধা কাজী কবির উদ্দিন, মোহাম্মদ আলী টিপু, কায়সার বাহিনীর সদস্য হাজী মো. তাজুল ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী পাঠান, কায়সারের অপরাধের শিকার একজন বৃদ্ধা নারী (ক্যামেরা ট্রায়াল), মো. ইয়াকুব আলী, শাহ হাসান আলী ফুলু মিয়া, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা শাহ হোসেন আলী সাবু, শহীদপুত্র মো. মোস্তফা আলী, কায়সারের অপরাধের শিকার একজন সাক্ষী (ক্যামেরা ট্রায়াল), শহীদপুত্র মো. নওশাদ আলী, মুক্তিযোদ্ধা গৌর প্রসাদ রায়, মোঃ গোলাম নুর, মুক্তিযোদ্ধা মো. নায়েব আলী, আলহাজ নিশামন, মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মতিন জামাল, মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক ফুলু মিয়া এবং বাসু সাওতাল। তাদেরকে জেরা করেছেন আসামিপক্ষ।

গত ৪ মার্চ কায়সারের বিরুদ্ধে সূচনা বক্তব্য (ওপেনিং স্টেটমেন্ট) উপস্থাপন করেন প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম।

গত ২ ফেব্রুয়ারি সৈয়দ কায়সারের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। কায়সারকে গণহত্যার একটি, হত্যা, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠনের ১৩টি এবং ধর্ষণের দু’টিসহ মোট ১৬টি মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

এর আগে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত কায়সারের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পক্ষে এবং ২৬ ডিসেম্বর ও গত ১৩ জানুয়ারি অভিযোগ গঠন না করার পক্ষে আসামিপক্ষে শুনানি করেন আব্দুস সোবহান তরফদার।

গত বছরের ১৪ নভেম্বর কায়সারের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। ১০ নভেম্বর রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে ট্রাইব্যুনালে ২ হাজার ৪শ’ ৪৭ পৃষ্ঠার এ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ, জেয়াদ আল মালুম, তাপস কান্তি বল ও রেজিয়া সুলতানা চমন। আনুষ্ঠানিক অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ১৮টি অভিযোগ আনা হয়েছিল। এর মধ্য থেকে ১৬টি অভিযোগে তাকে অভিযুক্ত করা হয়।

কায়সারের বিরুদ্ধে ২০১২ সালের ২৮ মার্চ তদন্ত শুরু করে গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর শেষ করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা মনোয়ারা বেগম। ২২ সেপ্টেম্বর তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশনের কাছে জমা দেন তদন্ত সংস্থা।

তদন্তের স্বার্থে তদন্ত সংস্থা ১ সেপ্টেম্বর সৈয়দ কায়সারের ঢাকার বাসায় গিয়ে সকাল ১০টা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত তিন ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

গত বছরের ৫ আগস্ট শর্তসাপেক্ষে জামিন পেয়ে বর্তমানে রাজধানীতে ছেলের বাসায় রয়েছেন কায়সার। কায়সার হচ্ছেন দ্বিতীয় কোনো আসামি যাকে জামিনে রেখে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকাজ পরিচালিত হচ্ছে।

গত বছরের ২১ মে বিকাল পৌনে চারটায় সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারকে রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতাল থেকে গ্রেফতার করে হাজির করা হলে ট্রাইব্যুনাল তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন। পরদিন ২২ মে কায়সারের জামিন আবেদন খারিজ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।

এর আগে ১৫ মে প্রসিকিউশনের আবেদনের ভিত্তিতে কায়সারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল।

কায়সারের বিরুদ্ধে অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরে সৈয়দ কায়সার প্রথমে হবিগঞ্জ মহাকুমা শান্তি কমিটির সদস্য ও রাজাকার কমান্ডার ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি ৫০০/৭০০ স্বাধীনতাবিরোধী লোক নিয়ে নিজের নামে ‘কায়সার বাহিনী’ নামে পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগিতা করার জন্য একটি সহযোগী বাহিনী গঠন করেন। তিনি নিজে ওই বাহিনীর প্রধান ছিলেন। ‘কায়সার বাহিনী’ নামাঙ্কিত এ বাহিনীর নিজস্ব ইউনিফরমও ছিল।

কায়সার এ বাহিনীর মাধ্যমে হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বৃহত্তর কুমিল্লায় হত্যা, গণহত্যা, মুক্তিযোদ্ধা হত্যা, ধর্ষণ, হামলা, নির্যাতন, লুটপাট, অগ্নিসংযোগসহ ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালান। তিনি পাকিস্তানি সেনাদের পথ দেখিয়ে বিভিন্ন গ্রামে নিয়ে স্বাধীনতার পক্ষের লোক এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ চালান।

(ওএস/এটিআর/জুন ০৯, ২০১৪)