সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : মার্কেটের শোভা বর্ধনের জন্য জেলা পরিষদের আওতাধীন একটি মেহগণি ও চারটি সৃষ্টিফুল গাছ কেটে সাবাড় করার সময় ক্ষুব্ধ জনতার ধাওয়া খেয়ে পালিয়ে গেলেন জেলা পরিষদের সার্ভেয়র হাসানুজ্জামান ও তার সহকর্মীরা। শুক্রবার সকাল ১০ টার দিকে  সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ব্রহ্মরাজপুর বাজারের সাতক্ষীরা-আশাশুনি সড়কের ধারে এ ঘটনা ঘটে।

ব্রহ্মরাজপুর বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, আশাশুনি - সাতক্ষীরা সড়কের পাশে গৌরাঙ্গ মল্লিক ও সাধন মল্লিক নিজস্ব জমিতে সম্প্রতি একটি মার্কেট নির্মাণ করেন। ওই মার্কেটের পাশে বাজার কমিটির কোষাধ্যক্ষ ফারুক হোসেনের লেদ মেশিনের কারখানা রয়েছে। লেদ কারখানা ও মার্কেটের সামনে রাস্তার পাশে লাগানো একটি মেহগণি গাছ ও চারটি সৃষ্টিফুল গাছ লাগানো ছিল। ওই মার্কেট ও লেদ কারখানার সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য গাছ কেটে ফেলতে সংশ্লিষ্ট মালিক পক্ষ জেলা পরিষদের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। চুক্তি অনুযায়ি ওই পাঁচটি গাছ মৃত দেখিয়ে মানুষের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ দেখিয়ে জেলা পরিষদ প্রশাসকের অনুমতি নেয় হাসানুজ্জামান। জেলা পরিষদ প্রশাসক মুনসুর আহম্মেদ ভারতে অবস্থান করার সুযোগে শুক্রবার ছুটির দিনে ভোর থেকে কমপক্ষে ১০ জন শ্রমিক দিয়ে ওইসব গাছের ডাল কাটা শুরু করান হাসানুজ্জামানও তার দু’ সহকর্মী। শ্রমিকরা করাত ও কুড়াল দিয়ে পাঁচটি গাছের বড় বড় ডাল কেটে ফেলতে থাকায় স্থানীয়রা বিষয়টি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করেন। সরকারি কোন কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে আসার আগেই কয়েকটি ট্রলী করে দু’লক্ষাধিক টাকার মোটা ডালগুলো নিকটবর্তী একটি ইটভাটায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়। সকাল ১০টার দিকে ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারি তহশীলদার রফিকুল ইসলাম ও এমএলএসএস কবীর হোসেন ঘটনাস্থলে আসার আগেই ক্ষুব্ধ জনতার ধাওয়া খেয়ে পালিয়ে যান হাসানুজ্জামান ও তার সহযোগিরা। পরে কাঠভর্তি ১১ টি ট্রলী জেলা পরিষদে নিয়ে যাওয়া হয়। রাস্তার পাশে পড়ে থাকা অবশিষ্ট গাছের ডালগুলো স্থানীয় বাজার কমিটির জিম্মায় রেখে যাওয়া হয়।

স্থানীয়রা আরো অভিযোগ করেন, শহরের সুলতানপুর এলাকার শরিফুল ইসলাম মিঠু জেলা পরিষদ প্রমাসক মুনুসর আহম্মদকে মামা হিসেবে নাম ভাঙিয়ে ও জেলা পরিষদের সার্ভেয়ার হাসানুজ্জামান দু’জনের যোসাজশে জেলা পরিষদের সড়কের ধারের জীবন্ত গাছ গুলো এভাবে মরা দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কেটে তা বিক্রি করে আসছিল।

এ ব্যাপারে জেলা পরিষদের সার্ভেয়ার হাসানুজ্জামান ঘুষ গ্রহণের কথা অস্বীকার করে বলেন, গাছ গুলো বিপদজ্জনক হওয়ায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে সেগুলো কেটে ফেলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানেরা সুবিধার জন্য নয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি আরো বলেন, জেলা পরিষদের উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে গাছ কাটা বন্ধ করে দেয়া হয়।
এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ আব্দুল সাদী জানান, স্থানীয় জনগনের মাধ্যমে অভিযোগ পেয়ে ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদারকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। তিনি যেয়ে গাছ কাটা বন্ধ করে দেন। বেশ কিছু কাটা গাছ ট্রলিতে করে জেলা পরিষদে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বাকী কাটা ডালগুলো স্থানীয় বাজার কমিটির জিম্মায় রাখা হয়েছে মর্মে তিনি শুনেছেন।

ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এস এম শহীদুল ইসলাম জানান, দিনভর তিনি বাড়িতে না থাকায় ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানেন না।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান সাংবাদিকদের জানান সড়ক ধারের জীবিত গাছ কাটার কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। সব কিছু জানার পর প্রয়োজনে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।



(আরএনকে/এস/আগস্ট ২০, ২০১৬)