বান্দরবান প্রতিনিধি : বান্দরবানের রোয়ংছড়ি উপজেলার আংগা পাড়া এলাকায় ভুল বুঝাবুঝির ঘটনায় হত্যা মামলার এক আসামীসহ ২ জনকে কাঠের বাঠাম দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে সন্ত্রাস ও জাঙ্গীবাদ দমন কমিটির আহবায়ক থোয়াই চিং মং মারমা। মঙ্গলবার গভীর রাতে এ ঘটনা ঘটে। আজ সকালে জেলা প্রশাসক দীলিপ কুমার বণিক ও পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ঘটনার পর থেকে আসামী পলাতক রয়েছে

রোয়াংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওমর আলী জানান, রোয়াংছড়ি উপজেলার আংগা পাড়া এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে চাঁদাবাজীসহ নানা অপকর্ম চালিয়ে আসছিল উ ক্য হ্লা মারমা ও তার সহযোগী আপ্রুমং মারমা। তাদের বাড়ী লামা উপজেলায়। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রোয়াছড়ির লিরাগাও সেনা ক্যাম্পে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমন কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দমন কমিটির আহবায়ক থোয়াই চিং মং মারমা ঐ দু’জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন এমন সংবাদে ক্ষিপ্ত হন ২ চাঁদাবাজ।

মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টায় উক্ত ২ চাঁদাবাজ মদপান করে মদ্যপ অবস্থায় সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দমন কমিটির আহবায়ক থোয়াই চিং মং মারমার বাড়ীতে হামলা চালায়। তারা বাড়ীর বেড়া ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপাতে থাকে এবং একজন বাড়ীতে প্রবেশ করতে চাইলে থোয়াইচি মং মারমা কাঠের বাঠাম দিয়ে চাঁদাবাজ উ ক্য হ্লা মারমা মাথায় আঘাত করে। এতে সে মাটিতে পড়ে যায়। আপ্রুমং মারমাও ঘরে প্রবেশ করতে চাইলে তাকেও কাঠের বাঠাম দিয়ে আঘাত করলে সেও পড়ে যায়। এতে দুজনই ঘটনাস্থলে মারা যায়।

পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় জানান, একটি অভিযোগকে কেন্দ্র করে ভুল বুঝাবুঝির কারণে উ ক্য হ্লা মারমা ও তার সহযোগী আপ্রুমং মারমা রাত ১০ টায় মদ্যপ অবস্থায় থোয়াই চিং মং মারমার বাড়ীতে হামলা চালায়। এতে থোয়াই চিং মং মারমার কাঠের বাঠামের আঘাতে ২ জনই ঘটনাস্থলে মারা যায়। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে।

জেলা প্রশাসক দীলিপ কুমার বণিক জানান, এ ঘটনাটি একটি স্বাভাবিক ঘটনা। রাজনৈতিক কিংবা অন্যকোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ভুল বুঝাবুঝির কারণে হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্থ নিহত ২ পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে ৫০ হাজার টাকা অনুদান দেয়া হয়েছে। এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং আইন নিজের হাতে তুলে না নিতে সকলের প্রতি আহবান জানান।
এ ঘটনায় নিহত উ ক্য হ্লা মারমার স্ত্রী মে নু চিং মারমা বাদী হয়ে রোয়াংছড়ি থানায় মামলা করেছে।

এদিকে হত্যাকান্ডে জড়িত থোয়াইচিং মং মারমার স্ত্রী উ ম্য য়ই মারমা জানান, নিহত ২ জন রাতের আধারে ধারালো অস্ত্র দিয়ে বাড়ীর বেড়া কাটতে থাকে। মুল সন্ত্রাসী উ ক্য হ্লা মারমা মাচাং ঘরের উপরে উঠে দরজা ভাঙ্গার চেষ্টা করে। তার স্বামী থোয়াইচিং মং মারমা আত্মরক্ষার্থে ঘরে থাকা কাঠের বাঠাম দিয়ে সন্ত্রাসীর মাথায় আঘাত করলে সে মাটিতে পড়ে যায়।

অপর সন্ত্রাসীও তার উপর হামলা চালালে তার স্বামী পাল্টা হামলা চালায়। তাকেও কাঠের বাঠাম দিয়ে মাথায় আঘাত করে। এ সময় তিনি শিশুকে কোলে নিয়ে শোর চিৎকার করলে এলাকাবাসীর ঘুম ভেঙ্গে যায়। স্থানীয় লোকজন এসে ২ জনের রক্তাক্ত লাশ দেখতে পায়। এ ঘটনার পর থেকে তার স্বামী পলাতক রয়েছে বলে জানান তিনি।

(এএফবি/এএস/সেপ্টেম্বর ০৭, ২০১৬)