সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : বেহাল সড়ক ও বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের ছয়টি গ্রামে। ফলে আধুনিকতার ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত এসব এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সেবামূলক প্রতিষ্ঠান ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরা শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ পূর্বে কাকশিয়ালী নদীর তীরে অবস্থিত কালিগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়ন। এ ইউনিয়ন পরিষদের আওতায় রয়েছে সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা ১১টি গ্রাম। এ ইউনিয়নের আয়তন পাঁচ দশমিক ৫৭ বর্গমাইল। বর্তমান জনসংখ্যা ১৮ হাজার ৬৬১জন। এরমধ্যে নারী নয় হাজার ১৩৯জন, পুরুষ নয় হাজার ৪৫১জন ও শিশু এক হাজার ৯৩৭ জন।

এ এলাকার মানুষ চিংড়ি ঘের ও কৃষি সম্পদের উপর নির্ভরশীল। ৮০ শতাংশ পরিবার নিম্ন মধ্যবিত্ত । শিক্ষার হার ৬২ শতাংশ। এখানে রয়েছে নয়টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তিনটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও দু’টি সিনিয়র মাদ্রাসা। এ ছাড়া রয়েছে ২৬টি মসজিদ ও ১৮টি মন্দির। একটি পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, তিনটি কমিউনিটি ক্লিনিক, একটি পাঠাগার, তিনটি ডাকঘর, একটি মাছের,সেট ও দু’টি চিংড়ি পোনার হ্যাচারি রয়েছে এ ইউনিয়নে। ২০০১ সালের প্রথম দিকে নির্মিত কালিগঞ্জ- বাঁশতলা পাকা সড়কটি হলো এ ইউনিয়নের প্রধান সংযোগ সড়ক। এ ইউনিয়নের গোবিন্দকাটি গ্রামটি ২০০০ সালে খুলনা বিভাগের মধ্যে একমাত্র পোল্টি ভিলেজ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।

ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন দক্ষিণ শ্রীপুর গ্রামে আনুমানিক দেড় শতাধিক বছর আগে গড়ে ওঠে দক্ষিণ শ্রীপুর বাজার। ব্রিটিশ আমলে দক্ষিণ শ্রীপুর গ্রামে বসবাস করতো ৩৫৩টি ব্রাহ্মণ পরিবার। মূলতঃ তাদের উদ্যোগে গড়ে ওঠে দক্ষিণ শ্রীপুর বাজার। আর এ বাজারকে ঘিরে বর্তমানে গড়ে উঠেছে মহিলা মার্কেট, খেজুরতলা মাছের সেট, দু’টি চিংড়ির হ্যাচারিসহ বিভিন্ন শিক্ষা ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। দক্ষিণ শ্রীপুর বাজারকে কেন্দ্র করে জীবন জীবিকা নির্ভর করে প্রায় এক হাজার পরিবারের।

বিশিষ্ট সমাজকর্মী আলমগীর হোসেন ও রবিউল ইসলাম ছোট্টু জানান,দেশ স্বাধীনের পর থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ শ্রীপুরে কোন উন্নয়নের ছোঁয়া না লাগলেও পরবর্তীতে এখানে চিংড়ি চাষ ও কৃষিক্ষেত্রে প্রসার ঘটে। তবে বিদ্যুৎ সংযোগ না পাওয়া ও ২০১২ সালের কালিগঞ্জ- বাঁশতলা সড়কটির দক্ষিণ শ্রীপুর বাজার পর্যন্ত নয়টি স্থান খানা খন্দে পরিণত হওয়ায় পণ্য পরিবহন ও মানুষ চলাচল হুমকির মুখে পড়েছে।

গত জুলাই মাসের প্রথম দিকে গোবিন্দকাটি, টোনা, বাঁশদহ, ঘোজা, শ্রীকলা ও ফতেপুরের একাংশে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হলে ও ইউনিয়নের প্রাণকেন্দ্র দক্ষিণ শ্রীপুর, উত্তর শ্রীপুর, সোনাতলাসহ ছয়টি গ্রামে আজও বিদ্যুতের ছোঁয়া লাগেনি। এসব গ্রামে ধান ও সবজি চাষে বৈদ্যুতিক মোটরের পরিবর্তে ডিজেল চালিত পাম্পে চাষ করতে যেয়ে অধিক খরচ হওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের। হাতে গোনা কয়েকটি বাড়িতে সোলার ব্যবহৃত হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের কেরোসিনের আলোয পড়তে হয়। মেঘ ডাকলেই কেরোসিনের ল্যাম্প জ্বেলে রান্না করতে হয় গৃহিনীদের।

কম্পিউটর প্রশিক্ষণ নিতে যেতে হয় ছয় থেকে আট কিলোমিটার দূরে বাঁশতলা বাজার, কালিগঞ্জ সদর বা মৌতলায়। রাস্তা, বিদ্যুৎ ও সুপেয় পানির অভাবে অস্তিত্ব সংকটে পড়ে গোবিন্দকাটি পোল্ট্রি ভিলেজ ও এলাকার অধিকাংশ পোল্ট্রি শিল্প। পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র বা কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে ভ্যাকসিন বা টিকা আনতে হয়ে সুদূর কালিগঞ্জ থেকে। জেনারেটরের উপর নির্ভরশীল চিংড়ি হ্যাচারি ও ঘের মালিকরা। বিদ্যুৎ অভাবে সংরক্ষণ না করতে পারায় মাছ ও পণ্য উপজেলা ও জেলা শহরে পাঠানো যায় না। ফলে ওইসব পণ্য স্থানীয় ব্যবসায়িদের কাছে কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হয় কৃষক ও মাছ চাষীরা।।

উন্নয়নের প্রেক্ষাপটে বিদ্যুৎ ও রাস্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বর্তমান সরকার দক্ষিণশ্রীপুরবাসির আর্থ সামজিক উন্নয়নে এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ ও কালিগঞ্জ- বাঁশতলা সড়ক সংস্কারের কাজ অতি দ্রুত শেষ করবেন বলে মনে করেন দক্ষিণ শ্রীপুর ইউপি চেয়ারম্যান প্রশান্ত সরকার।

কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ গোলাম মাঈন উদ্দিন হাসান জানান,কালিগঞ্জ রোডস এণ্ড হাইওয়ে থেকে দক্ষিণ শ্রীপুর হয়ে বাঁশতলা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার রাস্তার সংস্কার কার্যক্রম চলছে। যা’ জাইকার সহায়তায় ২০ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে।

প্রাথমিক পর্যায়ের কার্যক্রম শেষ হয়ে গেছে। আশা করা যাচ্ছে অতি দ্রুতই রাস্তা সংস্কারের কার্যক্রম শুরু হবে। দক্ষিল শ্রীপুর ইউনিয়নে বিদ্যুতের যে সমস্যা চলছে তা ধীরে ধীরে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে। কিছুদিন হলো পাঁচটি গ্রামে বিদ্যুৎ চলে গেছে। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুিত অনুযায়ি যেখানে বিদ্যুৎ নেই সেখানে দ্রুত বিদ্যুৎ পৌঁছে যাবে।

(আরকে/এএস/সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৬)