মো. নাসির উদ্দিন, টাঙ্গাইল : বছর ঘুরে আবার দুর্গতি নাশিনী দশভুজা দেবী দুর্গা আসছেন আমাদের মাঝে। শারদীয় দুর্গাপূজা হলেও এবার শরৎ কালে আসছেন মা। এতে অপেক্ষার প্রহর বেড়েছে। কিন্তু তাতে কি মার আগমনে আনন্দ তো আজ প্রতিটি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ঘরে ঘরে। আসছে ৩০ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মধ্যদিয়ে শুরু হবে দেবীর আগমনের ঢামাঢোল।

এবার দেবী দুর্গার ঘোটকে আগমন। আবার ফিরেও যাবেন ঘোটকে। দেবীর আগমনে প্রতিমা শিল্পীরা এখন প্রতিমার গায়ের শেষ তুলির আঁচড় দিতে ব্যস্ত মায়ের ভক্তরা। ঘর-দুয়ার পরিষ্কার আর নতুন সাজে নিজেকে সাজিয়ে তুলতে ব্যস্ত সবাই।

আগামী ৬ অক্টোবর বৃহস্পতিবার দেবীর বোধনের মধ্যদিয়ে শুরু হবে ছয় দিনের শারদীয় দুর্গা পূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা। ৭ অক্টোবর শুক্রবার দেবীর মহা-ষষ্ঠী পূজা ও দেবীর আমন্ত্রণ অধিবাস। ৮ অক্টোবর শনিবার দেবীর মহাসপ্তমী, ৯ অক্টোবর রবিবার মহাষ্টমী, ১০ অক্টোবর সোমবার মহানবমী, ১১ অক্টোবর মঙ্গলবার বিজয়া দশমী, প্রতিমা বিসর্জন ও বিজয়া শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে শেষ হবে শারদীয় দুর্গোৎসব।

টাঙ্গাইল জেলায় এবার মোট ১০৫০টি পূজা মণ্ডপে দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হবে। টাঙ্গাইল শহরের কালীবাড়ি, আদালত পাড়া, রেজিস্ট্রি পাড়া, সাবালিয়া, কলেজ পাড়া, থানা পাড়া, প্যারাডাইস পাড়া, করটিয়া, পাথরাইল সহ বিভিন্ন পূজা মন্ডপ ঘুরে দেখা যায় দুর্গোৎসবের শেষ মুহূর্তের ব্যাপক ব্যস্ততা। দেবী দুর্গাকে স্বাগত জানাতে সব জায়গায় চলছে সাজ সাজ রব। মন্ডপে মন্ডপে চলছে দেবী দূর্গাকে সাজাতে অষ্টপ্রহর প্রাণাস্তকর চেষ্টা। প্রতিমা শিল্পীদের হাতের যাদুতে মহালয়ার আগেই যেন প্রাণ পেয়েছে দেবী দুর্গা। আর তাতেই বোঝা গেল এবারও কাঠাম নির্মাণের মাঝে শেষ তুলির ছোঁয়া দিতে ব্যস্ত তারা।

টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. মাহবুব হোসেন বলেন, পূজার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে প্রশাসন ও পূজা উদযাপন পরিষদের যৌথ নজরদারি থাকবে। এতে করে প্রতিটা পুজা মণ্ডপে শতভাগ নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। আশা করছি শান্তিপূর্ণভাবেই দুর্গাপুজা উদযাপিত হবে।

আদালত পাড়া পূজা সংসদের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ সাহা লিটন বলেন, গত এক মাস ধরে প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন। কাজ প্রায় শেষ দিকে। সাতদিন যাবৎ ডেকোরেশনের কাজ চলছে। দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হতে আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। আদালত পাড়া পূজা সংসদের সকল সদস্য দিনরাত পরিশ্রম করছে। এলাকার প্রতিটি মানুষ এই দুর্গা পূজাকে ঘিরে উৎসব মুখর হয়ে উঠেছে। তিনি দুর্গা পূজাকে ঘিরে প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছেন।

টাঙ্গাইল জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সুভাস চন্দ্র সাহা বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ বাংলাদেশ। রাষ্ট্র সবার, উৎসব সবার। যেহেতু সরকার দেশেরে সার্বিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে। প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন সার্বিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবে। অতীতে শারদীয় দুর্গোৎসব নির্বিঘ্নে উদযাপন হয়েছে। এবারও শান্তিপূর্ণভাবে শারদীয় দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হবে।

আদালত পাড়া পূজা সংসদের প্রতিমা শিল্পী দুলাল পাল বলেন, আমরা বংশ পরম্পরায় এই কাজ করছি। এটা আমাদের পারিবারিক ঐতিহ্য ও পারিবারিক ব্যবসা। আমি আমার বাবার কাছ থেকে কাজ শিখেছি। আমার বাবা শিখেছে আমার দাদুর কাছে। বর্তমানে আমি আমার ছেলেদের নিয়ে কাজ করছি। ওরাও কাজ শিখছে। এবছর আমি মধুপুর, ঘাটাইল, পাথরাইল, আদালত পাড়া, সাবালিয়া, কান্দা পাড়াসহ মোট ১১টি প্রতিমা তৈরির কাজ নিয়েছি। এদের মধ্যে আদালত পাড়া পূজা সংসদের প্রতিমার মূল্য সর্বোচ্চ এক লক্ষ টাকা।

তারুটিয়া ভাতকুড়ার প্রতিমা কারিগর মহাদেব পাল বলেন, এবছর আমি ও আমার দুই ছেলে মিলে মোট প্রায় ৩০টি প্রতিমা তৈরির কাজ করছি। আমি দীর্ঘ ৪০ বছর যাবৎ এ কাজ করছি। আমার তিন ছেলেকেই কাজ শিখিয়েছি। দুই জনই প্রতিমা তৈরির এই কাজ করে। আমি বিগত ৩১ বছর যাবৎ টাঙ্গাইল পৌর এলাকার রেজিস্ট্রি পাড়ার দুর্গা প্রতিমা তৈরি করি। তবে প্রতিমা তৈরির কাঁচামালের মূল্য অনেক বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে এই কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

বর্তমানে সারা দেশে উদীয়মান উগ্রবাদ, জঙ্গিবাদ, পুরোহিত হত্যা যেভাবে মাথা চাড়া দিয়ে উঠার পাঁয়তারা করছিল। আমরা বিশ্বাস করি, প্রশাসনের নজরদারির বাইরে কেউ নেই, সেই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনগোষ্ঠীর হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবে।

(এমএনইউ/এএস/সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৬)