নওগাঁ প্রতিনিধি : এক সময়ের মাছের ভান্ডার খ্যাত নওগাঁর আত্রাইয়ে এবার দেশীয় প্রজাতির মাছের সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে এলাকার শুটকি ব্যবসায়ীরা পরিবার পরিজন নিয়ে চরম হতাশায় দিনাতিপাত করছেন। অন্যান্য বারের তুলনায় এবারে ভরা বর্ষা মৌসুমেও দেশী মাছ বাজারে মিলছে না। এলাকার শতাধিক শুঁটকি ব্যবসায়ী বেকার হয়ে পড়ছেন। সেই সঙ্গে পুরো বছর পরিবারের ভরনপোষনের চিন্তায় তারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।

জানা গেছে, উত্তরাঞ্চলের মৎস্য ভান্ডার খ্যাত আত্রাইয়ের নদী ও বিভিন্ন বিলে বর্ষা মৌসুমে পর্যাপ্ত পরিমান মাছ ধরা পড়ত। আর এসব মাছের মধ্য হতে পুঁটি, খলিসা, টেংরা, চান্দা, গুঁচি, সাঁটি, শোল ও বোয়াল মাছ ক্রয় করে শুঁটকি তৈরী করে দেশের বিভিন্ন জেলায় বাজারজত করতেন এখানকার শতাধিক শুঁটকি ব্যবসায়ী। ভাদ্র মাস থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত শুঁটকি ব্যবসায়ীদের ঘুম হারাম হয়ে যেত। এ আট মাস অবিরাম শুঁটকি তৈরি ও বাজারজাত করে যে আয় হতো তা দিয়ে তারা পুরো বছর পরিবারের ভরনপোষণ চালাতেন। আত্রাই রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন, ভরতেুঁলিয়া ও কেডিসি সংলগ্ন এলাকা শুঁটকি তৈরির জন্য বিখ্যাত।

এ স্পটগুলোতে মৌসুমের শুরুতেই মাচান তৈরী করে নারী পুরুষ সম্মিলিতভাবে শুঁটকি তৈরীতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। আর এসব শুঁটকি দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলা পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, রংপুর, নীলফামারী, দিনাজপুর এবং রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় বাজারজাত করে অর্জিত আয় দিয়ে সংসার চালান তারা। কিন্তু এবারে চিত্র হয়েছে সম্পূর্ণ ভিন্নতর। বন্যার অভাব, শুরু থেকেই মৎস্য নিধন ও খালবিলে পর্যাপ্ত পরিমান পানি না থাকায় দেখা দিয়েছে দেশীয় প্রজাতি মাছের তীব্র সংকট। তাই শুঁটকির চাতালগুলো মাছ বিহীন পড়ে রয়েছে মৌসুমের শুরু থেকেই।

উপজেলার ভরতেঁতুলিয়া গ্রামের শুঁটকি ব্যবসায়ী মন্তাজুর হোসেন মোল্লা বলেন, কয়েক বছরের মধ্যে গত বছর সব থেকে ভাল ব্যবসা হয়েছে। এবারে বন্যা না থাকায় নদী ও খালবিলে মাছের যথেষ্ট অভাব। তাই এ পর্যন্ত আমরা শুঁটকিতে হাত দিতে পারিনি। প্রতি বছর শুঁটকির আয় দিয়ে আমরা সংসার পরিচালনা করতাম। এবারে ব্যবসা না থাকায় আমরা চরম উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছি। এ ব্যাপারে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য অফিসার শাহিনুর রহমান বলেন, যে সময় এ এলাকায় বেশি মাছের উৎপাদন হয়, সে সময় এলাকায় পানি সংকট ছিল।

এ জন্য মাছের প্রজনন বাড়েনি। ফলে পর্যাপ্ত পরিমান মাছ বাজারে উঠছে না। তবে যতটুকু মাছ বাজারে উঠছে গতবারের তুলনায় অধিক মূল্য হওয়ায় শুঁটকি ব্যবসায়ীরা এ মাছ কিনতে পারছেন না। তবে নতুন করে নদীতে পানি বৃদ্ধি শুরু হয়েছে। পানি খালবিলে প্রবেশ করলে এখনও মাছের বংশ বিস্তারের সম্ভাবনা রয়েছে জানান তিনি।

(বিএম/এএস/সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৬)