আল ফয়সাল বিকাশ, বান্দরবান : শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে মারমা সম্প্রদায়ের ৩দিন ব্যাপী প্রধান ধর্মীয় উৎসব মহা ওয়াগ্যায়ই পোয়ে (প্রবারণা পুর্ণিমা) উৎসব। পুরানো ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহন করেছে আয়োজক কমিটি। মারমাদের ঐতিহ্যবাহি এই ওয়াগ্যায়ই পোয়ে অনুষ্ঠানে থাকছে বুদ্ধ পুজা, পিন্ড দান, ফানুস উড়ানো, পিঠা উৎসব, হাজার বাতি প্রজ্জলন, পঞ্চশীল গ্রহন, রথযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ধর্মদেশনাসহ নানা আয়োজন।

ভগবান গৌতম বুদ্ধের আমলে বুদ্ধ জাতক জাতিকারা ধর্মীয় নানা অনুষ্ঠানমালা পালন করতেন। সেই ধারাবাহিকতায় বুদ্ধ ধর্মাবলম্বী অধ্যুষিত পাড়ায় মহল্লায় জাঁকজমক ভাবে বর্তমান আমলেও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা অনুষ্ঠান গুলো পালন করে আসছেন।

প্রবারনা পুর্ণিমার তিথিতে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা দেশব্যাপী রীতি অনুযায়ী বুদ্ধ পুজা, পিন্ড দান, ফানুস উড়ানো, ধর্মদেশনা ও পঞ্চশীল গ্রহন এই অনুষ্ঠান গুলো হয়ে থাকে। কিন্তু বাড়তি ও ব্যতিক্রমী আয়োজন হিসেবে বান্দরবানের বুদ্ধ পল্লী গুলোতে হাজার বাতি প্রজ্জলন, রথযাত্রা ও দলগত ভাবে পিঠা তৈরীর উৎসব ঐতিহ্যের স্বাক্ষর রেখে আসছেন মারমা সম্প্রদায়ের লোকজন।

উৎসব উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কো কো চিং মারমা জানান, ওয়াগ্যয়ই পোয়ে (প্রবারণা উৎসব) উপলক্ষে ইতিমধ্যে সকল আয়োজন শেষ হয়েছে। আগামীকাল রবিবার সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠান রয়েছে এবং ফানুস উড়ানোর অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হবে। উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি। ১৭ অক্টোবর রথযাত্রার মাধ্যমে পুরো এলাকা পরিভ্রমন করে সাঙ্গু নদীতে রথ বিসর্জনের মধ্যদিয়ে শেষ হবে। এ অনুষ্ঠানে দেশী-বিদেশী অসংখ্য পর্যটক অংশ গ্রহন করে থাকেন।

বৌদ্ধ ধর্মীয় ভিক্ষুগণ জানান, গৌতম বুদ্ধ বুদ্ধত্ব লাভের পর তার মাথার কেশ (চুল) ছেদন করে মহাকাশে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। বুদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন এই প্রবারণার তিথিতে রং-বে-রংয়ের ফানুস আকাশে উড়িয়ে মহা পুণ্যের অধিকারী হওয়া যায়। তাই প্রতিবছর ওয়াগ্যয়ই পোয়ে (প্রবারনা পুর্ণিমা)’য় শত শত ফানুস আকাশে উড়ানো হয়।

ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠানের মধ্যে হাজার বাতি প্রজ্জলন অনুষ্ঠানটি গৌতম বুদ্ধ পৃথিবীতে বুদ্ধ রূপে আর্বিভুত হওয়ার পর হাজার হাজার বাতি জ্বালিয়ে বিহার প্রাঙ্গন সজ্জিত রাখতেন। তাই মারমা সম্প্রদায় এই রীতিটি এখনো পাহাড়ে ধরে রেখেছেন। রথযাত্রার এই মহান অনুষ্ঠানটি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে মহাপুণ্যবান একটি অনুষ্ঠান। তথাগত গৌতম বুদ্ধ রথে আরোহন করে স্বর্গে ও মর্তে গমন করতেন। বুদ্ধ ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষ সেই বিশ্বাসকে পুজি করে মহা পুণ্য লাভের আশায় রথযাত্রার আয়োজন করে থাকেন।

১৭ অক্টোবর এই রথযাত্রার অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে ওয়াগ্যয়ই পোয়ে অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে। রথযাত্রা অনুষ্ঠান দেখার জন্য দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রাপ্ত থেকে হাজার হাজার নারী-পুরুষ ভীড় জমায় বান্দরবানে। রাস্তার দু’পাশে দাড়িয়ে বুদ্ধকে শ্রদ্ধা জানান এবং সামর্থ অনুযায়ী নগদ অর্থ, মোমবাতি, আগরবাতি, শুকনো খাবারসহ বিভিন্ন পন্য দান করে থাকেন।

(এএফবি/এএস/অক্টোবর ১৪, ২০১৬)