নিউইয়র্ক থেকে এনা: পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বাংলাদেশে মার্শাল ল’ দিয়ে আর্মির ক্ষমতায় আসার পথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আগামীতে কেউ মার্শাল ল’ দিয়ে আর ক্ষমতায় আসতে পারবে না। বাংলাদেশের সংবিধানে সেই আইন অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। গত ১৬ অক্টোবর বাংলাদেশ ল’ সোসাইটি আয়োজিত এক সংবর্ধনা ও বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা ও মানবাধিকার শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা এ সব কথা বলেন।

বাংলাদেশ ল’ সোসাইটির সভানেত্রী মোর্শেদা জামানের সভাপতিত্বে এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহ মোহাম্মদ বখতিয়ারের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিচারপতি আব্দুল তারেক, বিচারপতি এস আর হাসান, সংসদ সদস্য ওয়াজের হোসেন বেলাল, জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন, নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কন্স্যুলেটের কন্সাল জেনারেল শামীম আহসান, বিশিষ্ট আইনজীবী অশোক কর্মকার, বিশিষ্ট আইনজীবী মঈন চৌধুরী, শিশির শীল, সংগঠনের ভাইস প্রেসিডেন্ট এ এস এম ফেরদৌস, উপদেষ্টা এডভোকেট এমাদ উদ্দিন ও কমিশনার জাকির হোসেন।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহিদ এবং প্রধান বিচারপতির সংক্ষিপ্ত জীবনী তুলে ধরেন বাংলাদেশের সহকারি এটর্নী জেনারেল আব্দুর রকিব মন্টু।

প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা বাংলাদেশ ল’ সোসাইটিকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমাদের বিচার ব্যবস্থা কোথায় ছিলো এবং আমি দায়িত্ব গ্রহণ করার পর কী করেছি তা আজকে তুলে ধরতে চাই। তিনি বলেন, আমরা এখন বর্তমান বিশ্বে টেরর এবং হরর অবস্থানের মধ্যে আছি। তিনি বলেন, ইসলাম হচ্ছে শান্তির ধর্ম। আর মুসলামদের সালামের অর্থ হচ্ছে শান্তি। ইসলাম কখনো সন্ত্রাসকে সমর্থন করে না। যারা বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে সন্ত্রাস করছে তাদের কোন ধর্ম এবং দেশ নেই। বর্তমানে সন্ত্রাসের শিকার বাংলাদেশও।

তিনি বাংলাদেশে বিএনপির শাসনামলে ৬৪ জেলার মধ্যে ৬৩ জেলায় বোমা হামলার কথা উল্লেখ করেন। কবি হুমায়ুন আজাদ, ব্লগার অভিজিৎ রায়কে হত্যা এবং সিলেটের শাহজালালের মাজারে আনোয়ার চৌধুরীর উপর হামলার কথা এবং পেট্রোল বোমায় ১৩১ মানুষ হত্যার কথাও উল্লেখ করেন। তিনি জেএমবি, হরকাতুল জেহাদের মত সন্ত্রাসী সংগঠনের সন্ত্রাস এবং শায়েখ আব্দুর রহমান এবং বাংলা ভাইয়ের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কথা তুলে ধরে বলেন, বর্তমান সরকার সন্ত্রাসের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করেছে এবং এ সব সন্ত্রাসীদের শান্তি দিয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশে সকল মানুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে চাই। যদিও আমাদের সংবিধানে সকলের সমান অধিকার নিশ্চিতের কথা উল্লেখ আছে। এই সমান অধিকার নিশ্চিত করা একটি চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার। আমাদের দেশে আইন আছে কিন্তু আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশের গণতন্ত্র এবং মাবাধিকার রক্ষায় বিচার বিভাগের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। তবে এ কথা সত্যি যে বাংলাদেশে বিচার প্রক্রিয়া ধীর গতি রয়েছে। সারা দেশে এখনো ৩ মিলিয়ন মামলা রয়েছে। আমরা ব্যাকলকে পড়ে রয়েছি। যাকে বলে লেক অব সিস্টেম লস। আমি দায়িত্ব পাবার পর অনেক পরিবর্তন করেছি। যার মধ্যে রয়েছে মনিটরিং ব্যবস্থা, ভিডিও সিস্টেম। আগে এক সময় বিচারপতিরা শুধু সকালে কোর্টে যেতেন, বিকালে কোর্টে যেতেন না। আমি এখন সকাল এবং বিকাল উভয় সময়ে তাদের কোর্টে যাওয়া নিশ্চিত করেছি। তারা গরীব মানুষের অর্থে চাকরি করছেন, আর তাদের কোর্টে এসে হয়রানির শিকার হতে হবে, তা আমি চাই না।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থাকে আমরা ডিজিটালাইজেশন করছি। রাশিয়ার বিচার বিভাগের সাথে আমার বৈঠক হয়েছে। কিছু দিনের মধ্যেই চুক্তিটি সম্পন্ন হবে। চুক্তিটি সম্পন্ন হলে সব কিছুই মানুষ জানতে পারবে। বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার বিচারালয়ে ডিজিটাল পদ্ধতি চালু হবে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে মার্শাল ল’ দিয়ে আর্মির ক্ষমতায় আসার পথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধানে সেই আইন সংযুক্ত করা হয়েছে। আগামীতে মার্শাল ল’ জারি করে আর কেউ ক্ষমতায় আসবে না।

তিনি আরো বলেন, সরকারের অনেক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় ৩০ একর জমির গাছ কেটে ইন্ডাস্ট্রি করতে চেয়েছিলো কিন্তু বিচার বিভাগের মাধ্যমে আমরা তা বন্ধ করেছি, ঢাকাতেও চেষ্টা করা হয়েছিলো আমরা বন্ধ করেছি। ট্যানারিকে সভারে স্থানারিত করতে আমরা কঠোর নীতি এবং আইন প্রয়োগ নিশ্চিত করেছি। প্রথম দিকে সবাই একটু গড়িমশি করলেও এখন সবাই সাভারে যেতে বাধ্য হচ্ছে। নতুন আইন এবং আইনের প্রয়োগের কারণে বাংলাদেশে নারী ও শিশু নির্যাতন কমে এসেছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতিকে ক্রেস্ট প্রদান করেন সভানেত্রী মোর্শেদা জামান এবং ফুল দিয়ে তাকে অভ্যর্ত্থনা জানান সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।








(এএইচ/এস/অক্টোবর১৭,২০১৬)