বান্দরবান প্রতিনিধি : বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত এলাকা গুলোতে অবৈধ অনুপ্রবেশ ও ইয়াবাসহ নানা পন্যের চোরাচালান আশংকাজনক হারে বেড়েছে। বিজিবি’র টহল জোরদার থাকার পরও ঠেকানো যাচ্ছে না চোরাচালান।

সীমান্ত এলাকা গুলো অরক্ষিত থাকার কারণে সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিনই নিত্য নতুন অভিনব কায়দায় ঢুকে পড়ছে মাদকসহ বিভিন্ন অবৈধ পন্য। যুব সমাজ এসব মরণ নেশায় আকৃষ্ট হয়ে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। সীমান্ত সুরক্ষার জন্য অতি জরুরী হয়ে পড়েছে সীমান্ত সড়ক ও কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ। বর্তমান সরকার এ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে কাজ করার মহা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে এমন সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সরকারের এই মহা পরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন করবে এবং তার সুফল দেশের মানুষ ভোগ করবে এমন প্রত্যাশা সর্বস্তরের মানুষের।

মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের সীমান্ত রয়েছে ২৭০ কিলোমিটার। তারমধ্যে জলসীমা প্রায় ৬০ কিলোমিটার এবং স্থল সীমা প্রায় ২১০ কিলোমিটার। জল এবং স্থল কোন সীমান্তে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সীমানা প্রাচীর নেই এবং অধিকাংশ এলাকা অরক্ষিত। সীমান্ত এলাকার ২ তৃতীয়াংশ গভীর অরন্য ও দুর্গম পাহাড়ী এলাকা হওয়ায় বিজিবি’র পর্যাপ্ত বিওপি নেই। মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকার অধিকাংশ দুর্গম হলেও তারা ইতিমধ্যে তাদের সীমানায় কাঁটাতারের বেড়া ও সীমান্ত সড়ক নির্মাণ করে ফেলেছে। বাংলাদেশের ভুখন্ডে কাঁটাতারের বেড়া ও সীমান্ত সড়ক না থাকায় অনেকটাই অরক্ষিত। এই সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে মিয়ানমারের বেশ কয়েকটি চক্র বাংলাদেশের কিছু রোহিঙ্গ্যা দালালদের পুজি করে নিবিগ্নে চালিয়ে যাচ্ছে মরণ নেশা ইয়াবা ট্যাবলেট এবং মানব পাচার। একই সাথে পাচারকারীরা সীমান্ত দিয়ে ইয়াবা ট্যাবলেট পাচারের পাশাপাশি মদ, নিন্মমানের সিগারেট, কাপড় পাচার অব্যহত রেখেছে। অপরদিকে বাংলাদেশ থেকে অবৈধ ভাবে মিয়ানমারে পাচার হচ্ছে তেল, ওষধ এবং সার এসব পন্য বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমার যাচ্ছে।

সৌজন্য এক স্বাক্ষাৎকারে ৩৪ বর্ডার গার্ড বিজিবি’র অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল ইমরান উল্লাহ সরকার জানান, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)’র পক্ষ থেকে সীমান্ত এলাকায় টহল এবং স্থায়ী ও অস্থায়ী চেক পোষ্ট বসিয়ে এসব চোরাচালান রোধ করা এবং অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকানো আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে আসছে। চোরাকারবারীরা অভিনব কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে ইয়াবা পাচার করছে। বিজিবি’র সদস্যরা বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে চোরাকারবারীদের ধরতে সক্ষম হচ্ছেন। পাচারকারী পুরুষ এবং মহিলারা অন্তূবাস, গোপনাঙ্গ এবং পাকস্থলীতে ইয়াবা পাচার করছে। ইদানিং কৌশল পাল্টিয়ে গাড়ীর হাড্রোলিক চেয়ারের টিউবের ভীতরে, সীটের ভীতরেসহ নিত্য নতুন কৌশলে ইয়াবা পাচার করছে। ফলে বিজিবিও শর্তক হয়ে তল্লাসী কর্মকান্ড চালাচ্ছে। গত মে থেকে এ পর্যন্ত প্রায় সহশ্রাধিক অবৈধ অনুপ্রবেশকারীকে বর্ডার ক্রস করতে না দিয়ে মিয়ানমার ফেরত পাঠানো হয়েছে। জানুয়ারী থেকে এ পর্যন্ত দেড় লক্ষাধিক ইয়াবাসহ কয়েক লক্ষ টাকার সিগারেটসহ বিভিন্ন অবৈধ পন্য উদ্ধার করে তা ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে।

বিজিবি’র কড়া নজরদারীর কারণে প্রতিদিনই কোন না কোন বিওপি বা চেক পোষ্টে ইয়াবাসহ চোরাচালান পন্য আটক হচ্ছে। এসব পন্য জনসমক্ষে ধ্বংসও করে ফেলা হচ্ছে। সীমান্ত সুরক্ষা হলে ইয়াবাসহ বিভিন্ন পন্য পাচার ও রোহিঙ্গ্যা অনুপ্রবেশ রোধ করা সম্ভব হবে মনে করছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সীমান্ত এলাকার মানুষ।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি সম্প্রতি এক সফরে বান্দরবান এসে সাংবাদিকদের জানান, সাম্প্রতিক এক সার্ভে জরিপ করে খাগড়াছড়ির রামগড় হতে বান্দরবান হয়ে কক্সবাজারের উখিয়া পর্যন্ত ৮শত ৩২ কিলোমিটার সীমান্ত সড়ক নির্মাণের প্রক্রিয়া শেষ করেছে। সীমান্ত এলাকার এই দীর্ঘ সড়ক নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা। প্রাপ্ত অর্থ বরাদ্দ দেয়া হলে আগামী বছর থেকে সীমান্ত সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে বলে তিনি দেশবাসীকে আশ্বাস দেন।

মিয়ানমারের মতো বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া ও সীমান্ত সড়ক নির্মাণ করা হবে এমন প্রত্যাশা পার্বত্যবাসীসহ সকলের। বৃহত্তর এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে সীমান্তের অনেক জটিল সমস্যা সমাধানসহ পুরো সীমান্ত এলাকা বিজিপি’র নজরদারীতে আসবে এবং চোরাচালান অনেকাংশে কমে আসবে।

(এএফবি/এএস/অক্টোবর ১৭, ২০১৬)