নওগাঁ প্রতিনিধি : ফসলি জমি নষ্ট করে নওগাঁর মান্দায় বাণিজ্যিকভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে আলু সংরক্ষণের হিমাগার। হিমাগারটি নির্মাণে সরকারের ভূমি ব্যবহার নীতিমালা লঙ্ঘন করায় কাজটি বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে মান্দা উপজেলা ভূমি প্রশাসন। কিন্তু থামছে না শিল্পপতির অবৈধ এ হিমাগার নির্মাণের কার্যক্রম। অবশেষে ওই সম্পত্তির খারিজ বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু করেছে উপজেলা ভূমি অফিস। বিষয়টি এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি করেছে।

উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) রাজিবুল আলম সাংবাদিকদের জানান, কৃষি জমির শ্রেণি পরিবর্তন না করেই অবৈধভাবে তামান্না কোল্ড স্টোরেজের নির্মাণ কাজ অব্যাহত রাখা হয়েছে। কাজটি বন্ধের জন্য কয়েকদফা চিঠি দেয়া হলেও তা কর্ণপাত করছে না সংশ্লিস্ট কর্তৃপক্ষ। এজন্য খারিজ বাতিলের মিসকেস করা হয়েছে। ভূমি ব্যবহার নীতিমালায় উল্লেখ রয়েছে, উর্বর কৃষি জমি যেখানে দুই বা ততোধিক ফসল ফলে বা এমন জমি যা এরূপ ফসল উৎপাদনের জন্য সম্ভাবনাময় তা কোনোক্রমেই অকৃষি কাজের জন্য যেমন ব্যক্তি মালিকানাধীন নির্মাণ, গৃহায়ণ, ইটভাটা তৈরি ইত্যাদির কাজে ব্যবহার করা যাবে না।

স্থানীয়রা জানান, গত বোরো মৌসুমের শেষদিকে নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কের তেলিপাড়া মৌজায় ২ দশমিক ২৭২৫ একর ধানী জমি তামান্না কোল্ড স্টোরেজের নামে ক্রয় করা হয়। হিউম্যান রাইটস রাজশাহী অঞ্চলের গভর্নর আবুল হোসেন জমির মালিকানা দেন ছেলে তাসনিম হোসেনের নামে। স্থানীয়দের অভিযোগ, জমি কেনার পর আধাপাকা ধান নষ্ট করে সংশ্লিস্ট কর্তৃপক্ষ মাটি ভরাটের কাজ শুরু করে।

উপজেলা ভূমি অফিস সুত্রে জানা গেছে, গত ২৪ এপ্রিল ২৭১৩/১৫-১৬ কেসমুলে ওই সম্পত্তি ধানী জমি হিসেবে খারিজ করা হয়। এরপর শ্রেণি পরিবর্তন না করেই স্থাপনা নির্মাণ কাজ শুরু করে হিমাগার কর্তৃপক্ষ। কাজটি বন্ধের জন্য কয়েকদফা পত্র দেয়া হলেও তা আমলে নেয়নি তারা। সর্বশেষ গত ২৭ সেপ্টেম্বর কাজটি বন্ধের জন্য চুড়ান্তপত্র দেয়া হয়। এ নির্দেশ অমান্য করায় ওই সম্পত্তির খারিজ বাতিলের জন্য মিসকেস করেছে উপজেলা ভূমি অফিস। যার কেস নম্বর ৩৩/১৬।

নির্মাণাধীন তামান্না হিমাগারে গিয়ে দেখা গেছে, কাজটি দ্রুত শেষ করার জন্য অন্তত দেড় শতাধিক শ্রমিক নিযুক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে ঠাকুরগাঁও জেলা থেকে আসা গোবিন্দ কুমার, হাফিজুর রহমান, বাসুদেব, রুস্তম আলী ও শফিকুল ইসলাম, বগুড়ার নুর আলমসহ আরো অনেক শিশু শ্রমিক কাজ করছে। প্রতিদিন ১১ ঘন্টা কাজের বিনিময়ে তাদের মজুরি দেয়া হয় ২৮০ টাকা। মানবাধিকার সংগঠনের ওই কর্মকর্তার নির্মাণাধীন হিমাগারে শিশু শ্রমিক দিয়ে কাজ করানোয় এলাকাবাসির মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

হিউম্যান রাইটস রাজশাহী অঞ্চলের গভর্নর আবুল হোসেন জানান, তড়িঘড়ি করে কাজ শুরু করায় জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা হয়নি। তবে, বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে দাবী করেন তিনি।


(বিএম/এস/নভেম্বর ০৫, ২০১৬)