দীপক চক্রবর্তী,মাগুরা থেকে:ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে আজ রবিবার থেকে শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী কাত্যায়নী পূজা উৎসব। হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজা হলেও এটি মাগুরার ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সার্বজনীন প্রাণের উৎসবে রূপ নিয়েছে। এ উৎসব উপলক্ষে ইতিমধ্যেই সারা শহর সেজেছে বর্ণিল সাজে। শহরের বিভিন্ন স্থানে তৈরি করা করা হয়েছে দৃষ্টি নন্দন গেট, প্যান্ডেল, মন্দিরসহ সারা শহরে তৈরি করা হয়েছে আলোকসজ্জা। মন্দিরগুলো সাজানো হয়েছে প্রাচীন ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের স্থাপত্য কলার আদলে।

জেলায় এ বছর জেলায় মোট ৮৮টি মন্ডপে কাত্যায়নী পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এরমধ্যে মাগুরা শহরসহ সদর উপজেলাতে ৪৪টি, শালিখায় ২৫টি, শ্রীপুরে ৯টি ও মহম্মদপুরে ১০টি মন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে পূজার মূল আকর্ষণ থাকবে মাগুরা শহরের ছানার বট তলা, নিজনান্দুয়াল ও জামরুল তলা পূজা মন্ডপে।

প্রতিবছর শারদীয় দুর্গা পূজার একমাস পরেই জাঁকজমকপূর্ণভাবে মাগুরাতে এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। দেশের দূর-দূরান্ত থেকে আসা ব্যবসায়ীরাও এ মেলায় অংশ নিতে ইতিমধ্যেই পসরা সাজিয়ে বসেছে।

জেলা পূজা উৎযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বাসুদেব কুন্ডু জানান, ১৯৫০ সালের দিকে শহরে পারনান্দুয়ালি এলাকার জনৈক সতীশ মাঝি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম এ পূজা শুরু করেন। পেশায় তিনি ছিলেন মুদি দোকানী। সেই থেকেই জেলার মানুষের অন্যতম উৎসবে পরিণত হয়েছে এই পূজা। কিন্তু গত দুই যুগে এর ব্যাপ্তি যেমন বেড়েছে সংখ্যাও বেড়েছে অনেক। যার আয়োজন হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান উৎসব হিসেবে পরিচিত দুর্গা পূজার আমেজকেও ছাড়িয়ে গেছে।

শাস্ত্র মতে, দাপর যুগে শ্রীকৃষ্ণের জন্মের আগে গোপবালা বৃন্দ তীরে শ্রীকৃষ্ণকে ঈশ্বর, বন্ধু, স্বামী, পুত্র হিসাবে আরাধনা করতেন। তাদের এক মাসব্যাপি আরাধনা সে সময় কাত্যায়নী পূজা হিসেবে চিহ্নিত হতো। যার সময়কাল ছিল কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাস। প্রতিমা স্থাপন থেকে শুরু করে দূর্গাপূজার আদলেই সবকিছু হতো। তবে অতিরিক্ত হিসেবে দেবী দুর্গার কোলে শ্রীকৃষ্ণের একটি মূর্তি স্থাপন করা হয়। যার অর্থ দেবী দুর্গার আরাধনার মাধ্যমে কৃষ্ণের সান্নিধ্য পাওয়া। যেটি কাত্যায়নী পূজার ধর্মীয় যোগসূত্র।

মাগুরায় এই বর্ণিল পরিবেশের উৎসবে অংশ নিতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের লাখ লাখ দর্শনার্থীদের পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী নেপাল ও ভারত থেকেও ছুটে আসেন উৎসাহীরা।
মাগুরার সহকারি পুলিশ সুপার(এ এসপি) সুর্দশন কুমার রায় জানান, মেলায় আগত দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবির সমন্বয়ে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া সর্বক্ষনিক পুলিশ টহলের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।








(ডিসি/এস/নভেম্বর ০৬, ২০১৬)