দুর্গাপুর (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি : উত্তর নেত্রকোনার গারো পাহাড়ী সীমান্তবর্তী অঞ্চল দুর্গাপুর। এ উপজেলার নিভৃত পল্লী কাকৈরগড়া ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামে এক কৃষক পরিবারে জাহেদ আলী মংলার জন্ম।

হাজারো মানুষকে গল্প ও ছন্দের মাধ্যমে মানবতার কথা বলে চলেছে বছরের পর বছর, এই লোকজ শিল্পী জাহেদ আলী মংলা। তার জন্ম ১৯৪৭ সালের ১ মে। বর্তমান বয়স ৬৯। তিনি ছিলেন কিশোরগঞ্জের এক কওমী মাদ্রাসার মাওলানা আতাহার আলীর ছাত্র। যার ভাগ্যলিপি গানে গানে লেখা, তারতো আর মাদ্রাসা শিক্ষায় মন বসে না। ১৩ বছর বয়স থেকেই শুরু হয় তার মানবতার বিষয় নিয়ে গান লেখা, যাত্রাপালায় জড়িয়ে পড়া ইত্যাদি।

সংসার জীবনে স্ত্রী ,পুত্র, কন্যা থাকলেও সংসারে তার মন নেই। আর্থিক ভাবেও স্বচ্ছল নন তিনি। মংলা ভাইয়ের যাত্রা পালা হয় স্বরচিত,এর গান, সুর , প্রম্পট, পরিচালনা, নির্দেশনা, ব্যবস্থাপনা সব তিনি নিজেই করেন। তিনি স্বভাব কবি। তিনি এখনও তার বাড়ির তিন রাস্তার মোড়ে বসে গান ও কবিতা লিখে চলেছেন।

তিনি বলেন আমরতো নিজস্ব গানের ভাষা রয়েছে, যা অনেক প্রতিষ্ঠিত শিল্পীরও নেই। তার মঞ্চায়িত পালাগুলোর কোনটিরই কোন পান্ডুলিপি বা পুস্তক রুপ নেই। তার গান নারী পুরুষের মাঝে সমান জনপ্রিয়। তিনি ১৯৮৩ সাল এবং তার পরে তিন তিন বার ইউ,পি মেম্বার নির্বাচিত হয়েছেন। তার সমসাময়িক জাতীয় ভাবে পরিচিতি পাওয়া অন্যান্য শিল্পী যেমন কদ্দুস বয়াতি, মমতাজ বেগম ও কানা সিরাজের দিকে তাকিয়ে তার সেই আক্ষেপের জায়গাটা জমাট বাঁধে। উপযুক্ত পৃষ্ঠপোষোকতা পেলে ছাড়িয়ে যেতেন নিজেকে।

তিনি নিতান্ত সাদামাটা জীবনে অভ্যস্ত। নিরহংকার, নির্লোভ এই শিল্পী বস্তুগত ধন নয়, বরং মনে ধনী থাকতে চান। তার যাত্রাপালাগুলো হল জল্লাদের প্রতিদান, মায়ের কোলে কাঠের পুতুল, সতীর কোলে জারজ সন্তান, অভিশপ্ত জংলী কণ্যা, বিনামূল্যে দাসী, প্রেমের জলন্ত প্রমান, রক্তে রাঙ্গা বাসর, মায়ের আদেশ। তার দুর্গাপুর নেত্রকোনা, সিলেট, সুনামগঞ্জ এলাকায় বিচরন ছিল অবাধ। ২০০৭-২০০৮ সালে চ্যানেল আই ও বিটিভিতে তার প্রোগ্রাম হয়েছে। বরেন্যে প্রয়াত কবি রফিক আজাদ মংলার প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে দুর্গাপুর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির কালচারাল একাডেমি থেকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান তাকে সংবর্ধিত করেছে। আমার দেশ আমার মাতৃভূমি নিয়ে তার ৩শত গানের পান্ডুলিপি রয়েছে। যা আর্থিক অভাবে বই আকারে মানুষের কাছে তুলে ধরতে পারছে না। এই অসাধারণ প্রতিভাধর শিল্পী আমাদের দেশের আলো এবং অহংকার।

(এনএস/এএস/নভেম্বর ১০, ২০১৬)