মাগুরা প্রতিনধি:  মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার নহাটা ইউনিয়নের ১৭০ নারী চলতি বছরের মে মাসের দুস্থ মহিলা উন্নয়ন সহায়তা (ভিজিডি) প্রকল্পের চাল পাননি। ইউনিয়ন পরিষদ প্রতি মাসে তাদেরকে মাথাপিছু ৩০কোজ করে চাল দেওয়ার কথা।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, চাল না পেলেও সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তফা সিদ্দিকী লিটন কাগজপত্রে স্বাক্ষর করে উপজেলা খাদ্য গুদাম থেকে চাল নিয়ে গেছেন। আবার মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ে সব দুস্থ নরীদের টিপসই স্বম্বলিত চাল বিতরণের মাস্টার রোল জমা দিয়েছেন। এ ঘটনায় দায়িত্বশীল সরকারি অফিসের কর্মকর্তারা পরস্পরকে দোষারপ করছেন।

এতে নহাটার ১৭০ জন দুস্থ’নারী মে মাসের বরাদ্দকৃত ৫ হাজার ১০০কেজি চাল আর কখনওই পাবেন না। এত তারা চরম ক্ষতির শিকার হয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট চারটি অফিসের কর্মর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের তপশীল ঘোষণা হওয়ায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাহীন হোসেন এক চিঠিতে উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. জিয়াউল হকেকে নহাটা ইউনিয়নের মে মাসের ভিজিডি সহায়তার চাল উত্তোলন ও বিতরণের জন্য ট্যাগ অফিসারের দায়িত্ব দেন।

নিমানুযায়ি উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা চাল উত্তোলনের আদেশের চিঠি খাদ্য গুদাম ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে প্রদান করবেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গুদাম থেকে আদেশপত্রে (ডিও) স্বাক্ষর করে চাল উত্তোলন করবেন। চাল বিতরণ শেষে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কাছে দুস্থদের স্বাক্ষর করা মাস্টার রোল জমা দিবেন।

খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে, উপজেলা খাদ্য গুদামের চাল ছাড়ের কাগজপত্রে স্বাক্ষর করেছেন সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তফা সিদ্দিকী লিটন। অথচ নির্বাচনকালীন সময়ে আইনত তিনি চাল উত্তোলন করতে পারেন না। আবার তালিকাভুক্ত ১৭০ জন দুস্থ নারী চাল না পেলেও ভূয়া টিপসই দিয়ে মাস্টার রোল করে জমা দিয়েছেন।

নহাটার ফুলবাড়ি গ্রামের কামরুল ইসলামের স্ত্রী মনিরা বেগম, হরিয়াখালীর বাদশা মোল্যার স্ত্রী রহিমা আক্তার, দরিশালধা গ্রামের বারিক খাঁর স্ত্রী তাসলিমা খাতুন ও বেজড়া গ্রামের জিয়া বিশ্বাসের স্ত্রী রাশিদা বেগমের সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের । দুস্থএসব নারীরা অভিযোগ করেন, ‘ তারাসহ কেউই চলতি বছরের মে মাসের ভিজিডির চাল পাননি। কোথাও কোন স্বাক্ষর বা আঙুলের ছাপও দেননি। আমরা চাল চাইলে আগের চেয়ারম্যান (লিটন) জানেন বলে জানায়।’
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মোছা: শিরিনা খাতুন জানান,‘আমি ট্যাগ অফিসার ও খাদ্য গুদাম কর্মকর্তাকে যতাসময়ে চিঠি দিয়ে অবহিত করেছি। পরে জানতে পারি চাল বিতরণ না করেই মাস্টাররোল জমা দেওয়া হয়েছে।’

উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা ও ট্যাগ অফিসার মো. জিয়াউল হক জানান,‘ আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না।কোন চিঠি পাই নাই।’

নহাটা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা সিদ্দিকী লিটনের সাথে মোবাইলে একাধিকবার যোগাযগ করলেও ফোন বন্ধ পওয়া গেছে।’

নহাটা ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আলী মিয়া বলেন, ‘ মে মাসে ১৭০ জন দুস্থ নারী ভিজিডির চাল পাননি। আগের চেয়ানম্যান (লিটন) চাল উত্তোলন করেছেন।’
উপজেলা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা,‘মো.সেলিম রেজা বলেন বিষয়টি নিয়ে বড় ধরনের ভুল হয়েছে । আমি সমাধানের চেষ্টা করছি।’

মহম্মদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. শাহীন হোসেন জানান,‘ চালের বিক্রয়মূল্য আদায় করে সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হবে। দুস্থরা ওই মাসের চাল আর কখনও পাবেন না বলে তিনি জানান।’



(ডিসি/এস/নভেম্বর ১৬, ২০১৬)