গৌরীপুরে এবার সেতুর অন্য পাশেও মাটি ভরাট!
গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি :ময়মনসিংহের গৌরীপুরে রামগোপালপুর ইউনিয়নের পশ্চিমপাড়ায় রামগোপালপুর- গৌরীপুর সড়কের সেতুর নীচে বলেশ্বর নদীর মুখে মাটি ভরাট করে বাঁধ দে্ওয়ায় কোন কাজে আসছে না এলজিইডি নির্মিত দেড় কোটি টাকার ব্রিজ!
ব্রীজটির মুখে প্রথমে কাঁচা, তারপর ব্রিজের নিচে পাকা বাঁধা দিয়ে মাছ চাষ শুরু করে বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে বিসমিল্লাহ কো-অপারেটিভ নামের একটি সংগঠন। জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে লিজ নিয়ে এই সংগঠনটি বলেশ্বর নদীকে পুকুরে পরিণত করেন।
এ বাঁধের কারণে পানির নিচে তলিয়ে যায় শতশত একর জমির ফসল। তাৎক্ষণিকভাবে এর প্রতিবাদে তৎকালীন সময়ে এলাকাবাসী বিক্ষোভ-মানববন্ধন পালন করেন। এ নিয়ে বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় প্রতিবেদক প্রকাশের পর মাটির বাঁধ কেটে ও ব্রিজের নিচের পাকা বাঁধ ভেঙ্গে পানি প্রবাহ সচল রাখতে লিজকারী প্রতিষ্ঠান বাধ্য হন। তবে শুকনা মৌসুমে তা যেমন ছিলো তেমনই হয়ে যায়।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে প্রায় ১৬বছর পূর্বে দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে ৫০মিটার দীর্ঘ এ সেতু নির্মাণ করেন। তবে নির্মাণের কিছুদিন পরেই বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে বলেশ্বর নদীতে মৎস্য চাষের জন্য দলীয় লোকজন নামমাত্র টাকায় লীজ নেন। ওই সময়েই সেতুর সামনে মাটির বাঁধ তৈরী করেন। এছাড়াও সেতুর নিচে ইটের স্থায়ী বাঁধ দেয়া হয়। সরকারের লীজ নেয়া বলেশ্বর নদীর পানির স্বাভাবিক চলাচল বন্ধ করে দিয়ে শুরু হয় মাছ চাষ। যার কারণে কয়েক হাজার একর জমিতে জলাবদ্ধতা ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে প্রতি বছর। এই ব্রিজের নিচে বাঁধ দেয়ায় রুকনাকান্দায় ৬২লক্ষ টাকা দিয়ে নির্মিত অপর ব্রিজটিও অকেজো হয়ে পড়ে।
উপজেলার রামগোপালপুর ইউনিয়নের প্রায় ৬৭একর আয়তনের বলেশ্বর নদীটি সরকারিভাবে ৩বৎসরের জন্যে লিজ প্রদান করেন ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসন। লিজে পানি চলাচলের স্বাভাবিক গতি, অবকাঠামো অপরিবর্তন, অনুমোদন ব্যতিত উন্নয়ন কর্মকান্ড না করার সহ বিভিন্ন শর্তারোপ থাকলেও তা কেউ মানছে না।
এবার ব্রিজের সামনে অংশে নয় বিপরীত অংশেও মাটি ভরাট কাজ শুরু হয়েছে। পশ্চিমপাড়া গ্রামের আব্দুল কাদির, নেওয়াজ হোসেন জানান, বৃটিশ আমল থেকে বলেশ্বর নদী পানি চৌকা নদী হয়ে সুরিয়া নদীতে মিলিত হতো। তবে রামগোপালপুর ইউয়িনের ভূমি উন্নয়ন কর্মকর্তা মোঃ নুরুল ইসলাম জানান, ব্রিজের সামনের অংশ ব্যক্তিগত সম্পত্তি। ব্রিজের সামনে পুকুর তৈরির কাজে নিয়োজিত শ্রমিক রহিম উদ্দিনের পুত্র কছুম উদ্দিন জানান, পানি চলাচলের জন্য একটি ১০ফুট প্রস্থের খাল রাখা হচ্ছে। পুকুরের মালিক মানিক মাস্টার জানান, ক্রয়সূত্রে এই জমির মালিক। তবে নকশায় খাল বা পানি চলাচলের ব্যবস্থা না থাকলেও ব্যক্তিগত উদ্যোগে খাল করে দিচ্ছি।
উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, এ বাঁধের কারণে উরুয়াকোনা, শ্রীধরপুর, বলুহা, রামগোপালপুর, নয়াগাঁও, রুকনাকান্দা, গুজিখাঁ, তাঁতকুড়াসহ ১৪টি গ্রামের প্রায় সাড়ে ৬হাজার একর জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে।
শ্রীধরপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল মান্নান জানান, কৃষকরা চলতি বোর মৌসুমে অনেকেই বীজ বপন করতে পারবে না। ইরি-বোরো মৌসুমে যথাসময়ে পানি না সরায় বীজ বপনে এ অসুবিধার সম্মুখীন হতে হবে।
জনস্বার্থে পানির চলাচল স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে রামগোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল আমিন জনি জানান, যেহেতু দীর্ঘদিন যাবত পানি প্রবাহের জন্য উন্মুক্ত ছিলো, তাই জমির মালিককে নোটিশ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী তোজাম্মেল হক বলেন, ব্যবস্থা নেয়া হবে।
(এসঅাইএম/এস/নভেম্বর ২৩, ২০১৬)