নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর ৭৫ বছর বয়সী বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বৃদ্ধা ময়না। ৭৫ বছর বয়সেও এখন পর্যন্ত তার ভাগ্যে জোটেনি প্রতিবন্ধী বা বয়স্ক ভাতার কার্ড। এমনকি তার ভোটার আইডি কার্ডও হয়নি। তার থাকার নির্দিষ্ট কোন জায়গা বা বাড়িঘড় পর্যন্ত নেই। তার পরিচিত জনরা ঠিক এমন কথাই জানালেন।

বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বৃদ্ধা ময়না দীর্ঘ ১৫/১৬ বছর ধরে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার (চৌমাশিয়া) নওহাটামোড় বাস ষ্টান্ডেই সারাদিন ঘোরাফেরা করেন। রাত্রী-যাপন কোথায় করেন কেউ তা না বলতে পারলেও কাক-ডাকা ভোর সকালেই বৃদ্ধা ময়না নওহাটা বাজারে এসে হাজির হন। এমন তথ্যই জানিয়েছেন বাজারের ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা।

নওহাটা বাজার বাস ষ্টান্ডে নওগাঁ জেলা বাস মালিক গ্রুপের নিয়োজিত চেইন মাষ্টাররা জানান, বৃদ্ধা ময়না সারাদিন বাস ষ্টান্ডে ঘোরাফেরা করলেও কোন বাসযাত্রী বা জন-সাধারনের কাছ থেকে টাকা-পয়সা ভিক্ষা চেয়ে নেয়না। সারাদিন হাসিখুশি মুখে চলাফেরা করায় স্থানীয় ব্যবসায়ীসহ বিশেষ করে বাসের ষ্টাফদের সঙ্গে তার গড়ে উঠেছে এক ধরনের সখ্যতা। বাসের ষ্টাফ ও পরিচিত জোনরা যে টাকা পয়সা তার হাতে দেয়, সেই টাক্ াদিয়েই তিনি খাবার কিনে খান আর ঘুড়ে বেড়ান।

এব্যাপারে ময়না তার অস্পষ্ট ভাষায় কষ্টের অনেক কাহিনী বলার সময় দু’চোখ বেয়ে পানি ঝরছিল তার। ভাঙ্গা-ভাঙ্গা কথায় ময়না বলছিলেন, একটা শীতের কাপড় কেউ দিলে সে নিয়ে শীত নিবারন করতে পারবেন, এমনটাই বুঝা যাচ্ছিল তার ভাষায়।

ময়নার ব্যাপারে ভীমপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ইউপি সদস্য মোঃ ছহির উদ্দীন (৫৫) জানান, ২৫/৩০বছর পূর্বে ময়না তাদের খোর্দ্দনারায়নপুর গ্রামে এক ব্যক্তির বাসায় আশ্রয় নিয়ে ছিলেন। তবে বৃদ্ধা ময়নার প্রকৃত পরিচয় বা বাড়ি ঘড়ের ঠিকানা জানাতে পারেননি তিনি।

দক্ষিন লক্ষ্মীপুর গ্রামের সুলতান মাহামুদ জানান, ময়না নামের এই বৃদ্ধাটি খোর্দ্দনারায়নপুর গ্রামে কয়েক বছর থাকার পর তাদের গ্রামের কাওছার আলীর বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে কয়েক বছর ছিল। তবে বর্তমানে কোথায় কার আশ্রয়ে থাকে সেটা তিনিও জানাতে পারেননি। রাতে কোথায় কার বাড়িতে থাকেন সেটা না জানাতে পারলেও বৃদ্ধা ময়না কাক ডাকা ভোর সকালেই যে নওহাটা মোড় বাজারে এসে হাজির হন এমনটাই জানিয়েছেন বাজারের ব্যবসায়ী সহ স্থানীয়রা। শীত নিবারনের জন্য কেউ না কেউ ভাল একটা কাপড় এনে দেবে, এমন আশা নিয়েই অপেক্ষায় আছেন ৭৫ বছর বয়সের বৃদ্ধা ময়না।

(বিএম/এএস/ডিসেম্বর ০৮, ২০১৬)