টাঙ্গাইল প্রতিনিধি : আজ ১১ ডিসেম্বর টাঙ্গাইল মুক্ত দিবস। আজকের এই দিনে টাঙ্গাইলে উড়ে ছিল বিজয় পতাকা। ১৯৭১ সালের এই দিনে রক্ত ক্ষয়ী যুদ্ধের পর হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণ ও পলায়ণের মধ্য দিয়ে মুক্ত হয়েছিল টাঙ্গাইল।

১৯৭১ সালের মার্চের শুরুতেই টাঙ্গাইল জেলা স্বাধীন বাংলা গণমুক্তি পরিষদ গঠন করে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ চলতে থাকে। ৩ এপ্রিল টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়কের সাটিয়াচড়ায় টাঙ্গাইল প্রবেশে পথে ইপিআর ও মুক্তিযোদ্ধারা প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধ গড়ে তুলেন। ঢাকার বাইরে প্রথম সেই যুদ্ধে পাকহানানদার বাহিনীর গুলিতে ইপিআর, মুক্তিযোদ্ধাসহ শতাধিক গ্রামাবাসী শহীদ হয়। অবরোধ ভেঙ্গে পাকিস্থানী হানাদার বাহিনী টাঙ্গাইল শহরে প্রবেশ করে। একের পর এক মুক্তিযোদ্ধা, নারী ও শিশুদের হত্যা করতে থাকে।

পাক হানাদার বাহীনিরা জেলা সদরের পানির ট্যাংকির পাশে মুক্তিযোদ্ধা ও শতশত সাধারণ মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করে মাটিতে পুতে রাখে। সেটি এখন বদ্ধভূমি নামেই পরিচিত।

টাঙ্গাইলের কৃতী সন্তান বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মরহুম আব্দুল মান্নান মুক্তিযুদ্ধে বিশাল অবদান রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে ৭২ হাজার সেচ্ছাসেবক নিয়ে গড়ে উঠে বিশাল কাদেরিয়া বাহিনী। এই বাহিনী প্রচন্ড প্রতিরোধ ও প্রত্যাঘাত শুরু করে পাক সেনাদের ওপর। কাদেরিয়া বাহিনীর পরিকল্পিত একের পর এক আক্রমণের ফলে পাক সেনাদের মধ্যে ত্রাসের সৃষ্টি হয়।

এপ্রিল থেকে ডিসেম্বরে ৮ তারিখ পর্যন্তু টাঙ্গাইল, জামালপুর, শেরপুর, কিশোরগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ ও পাবনায় বিশাল কাদেরিয়া বাহিনী প্রায় ৩ শতাধিক যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে পর্যুদস্তু করে পাকসেনাদের। পরিকল্পনা অনুযায়ী চারদিক থেকে সাঁড়াশি আক্রমণ চালিয়ে ঘিরে ফেলা হয় টাঙ্গাইল। সার্কিট হাউসে অবস্থানরত পাক সেনারা কাদের সিদ্দিকীর কাছে আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে সম্পূর্ণ মুক্ত হয় টাঙ্গাইল।

টাঙ্গাইল মুক্ত দিবস উপলক্ষে টাঙ্গাইল পৌরসভার উদ্যোগে ১১ ডিসেম্বর থেকে ১৬ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন কর্মসুচি গ্রহন করা হয়েছে। এ দিন শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যান থেকে সকালে একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালী বের হবে। এছাড়াও প্রতিদিন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকবে।

(এমএনইউ/এএস/ডিসেম্বর ১০, ২০১৬)