নওগাঁ প্রতিনিধি : শুক্রবার সকাল ১০টা বাজতে বাজতে নওগাঁ সেবাশ্রম সংঘের পুরো চত্বর ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় হাজারো ভক্তের ঢল নামে। ঢাক, ঢোল, খোল, কাঁশি-বাঁশি, সানাই আর আধুনিক বাদ্য যন্ত্রের তালে তালে মুখোরিত হয়ে ওঠে গোটা শহর। মুহুর্তেই যেন সেবাশ্রম সংঘ এলাকায় কয়েক হাজার নারী-পুরুষ ভক্ত ভিড় জমায়। অনুষ্ঠানে আদিবাসী নারী-পুরুষরাও অংশ গ্রহন করে। পুরো সেবাশ্রম সংঘ এলাকা পরিনত হয়েছিল ভক্তদের মিলন মেলায়। সেবাশ্রম ক্যাম্পাসের বাইরে রাস্তার দু’পাশে বসেছে বিভিন্ন খাবারের দোকান, প্রসাধনী ও শিশুদের মনভোলানো হরেক রকম খেলনার দোকান।

নওগাঁ সেবাশ্রম সংঘের বার্ষিক উৎসবের চার দিনের অনুষ্ঠানমালার মধ্যে শুক্রবার ছিল অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ, ধর্মীয় শোভাযাত্রা ও বৈদিক শান্তি যজ্ঞানুষ্ঠান। এদিন বেলা পৌনে ১১টায় সেবাশ্রম সংঘ থেকে একটি বর্ণাঢ্য ধর্মীয় শোভাযাত্রা বের করা হয়। সেবাশ্রম সংঘের অধ্যক্ষ স্বামী দিগ্বিজয়ানন্দজী মহারাজ শোভাযাত্রাটি উদ্বোধন করেন এবং তিনি নিজেই শোভাযাত্রার নেতৃত্ব দেন।

এসময় সেবাশ্রম সংঘের সাধারন সম্পাদক অধ্যাপক প্রনবরঞ্জন বসাক, ডা. স্বপন কুমার হালদার, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সহ-সভাপতি বিশ্বজিৎ সরকার মনি, সাধারন সম্পাদক বিভাস মজুমদার গোপাল, যুগ্ম-সম্পাদক পিযুষ কান্তি সরকার ও প্রতাপ কুমার সরকার, এ্যাডভোকেট মুকুল চন্দ্র কবিরাজ, খগেন্দ্র নাথ, সতী রানী বসাক, তারা রানী দে প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। কয়েক হাজার নারী-পুরুষ বাজনার তালে তালে হরিনাম সংকীর্তন করতে করতে শোভাযাত্রা নিয়ে যখন শহরের প্রধান সড়কগুলো পরিভ্রমন করছিল, তখন রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে হাজার হাজার মানুষ তাদেরকে উৎসাহিত করছিল। অনেকে হাত নেড়ে হাঁসি মুখে অভিবাদন জানাচ্ছিল তাদের। এমন কর্মকান্ড এদেশ যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ সে কথাটি পূনর্বার যেন দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেল।

গত বুধবার বিকেল ৩টায় ভজন সঙ্গীতের মধ্যদিয়ে শুরু হয় ৪দিনব্যাপী নওগাঁ সেবাশ্রম সংঘের বার্ষিক উৎসব। ওইদিন বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের গীতা পাঠ, কবিতা আবৃত্তি ও বক্তৃতা প্রতিযোগীতা এবং রাতে গুরু পূজা, শিবপূজা ও কৃষ্ণ পূজা অনষ্ঠিত হয়। বৃহস্পতিবার ভজন সঙ্গীত, মাতৃ সম্মেলন, হিন্দু ধর্ম, স্বামী প্রণবানন্দ ও মাতৃজাতির জীবন গঠন প্রসঙ্গে আলোচনা, যুব সম্মেলন, যুব চরিত্র উন্নয়নে স্বামী প্রণবানন্দের অবদান শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। শুক্রবার ধর্মীয় শোভাযাত্রার শেষে দুপুরে ভজন সঙ্গীত, হরিনাম সংকীর্তন, অভিষেক, অন্নকূট ভোগ, গুরু পূজা, শিবপূজা ও কৃষ্ণ পূজার পর প্রসাদ বিতরন করা হয়। এরপর আদিবাসী নৃত্য, ভজন সঙ্গীত, হিন্দু ধর্ম প্রসঙ্গে আলোচনা সভা ও ভক্ত সম্মেলন, হিন্দু ধর্মের নব জাগরনে স্বামী প্রণবানন্দের অবদান, বৈদিক শান্তি যজ্ঞানুষ্ঠান, গুরু পূজা, শিবপূজা ও কৃষ্ণপূজার পর প্রসাদ বিতরন করা হয়।

শনিবার ভজন সঙ্গীত, পুরস্কার বিতরন, ধুতি পরা প্রশিক্ষন ও ব্যায়াম প্রদর্শন, আচার্য দেবের দোলন উৎসব, গুরুপূজা, শিবপূজা ও কৃষ্ণ পূজা অন্তে প্রসাদ বিতরণের মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হবে বলে আয়োজকরা নিশ্চিত করেছেন।

(বিএম/এএস/জানুয়ারি ০৬, ২০১৭)