ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি : পাবনা চিনিকলে চলতি আখ মাড়াই শুরুর ৩৯ দিনের মাথায় গত ২০ জানুয়ারি মাড়াই ও চিনি উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। এ বছর ৩০২ কোটি টাকা দেনা নিয়ে আখ মাড়াই শুরু করেছিল এ চিনিকলটি। মিলটি এ পর্যন্ত লোকসান দিয়েছে ২৭৭ কোটি টাকা। মিলের চিফ ক্যামিস্ট আবু বক্কর জানান, শুধু আখের অভাবে চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হয়নি।

পাবনা চিনিকল সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে ৪ হাজার ১১৫ একর জমিতে আখ চাষ হয়। আখ মাড়াই লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭০ হাজার মেট্রিকটন আর হয়েছে মাত্র ৪২ হাজার মেট্রিকটন। এটি লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকের সামান্য বেশি। আর চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৫ হাজার ২৫০ মেট্রিকটন। চিনি উৎপাদন হয়েছে ২ হাজার ১শ’ টন। মাড়াই দিবস ধার্য করা ছিল ৪৫ দিন আর সেখানে মাড়াই হলো ৩৯ দিন। গত মৌসুমে লোকসান হয় ২৫ কোটি ২ লাখ টাকা। ওই মৌসুমে চলেছে ৫৪ দিন।

সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঈশ্বরদীর পার্শ্ববর্তী নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলে আখের ক্যাচমেন্ট এরিয়া ১৫ কিলোমটিার। অপর দিকে পাবনা চিনিকলের নিজস্ব কোনো খামার না থাকায় নিজস্ব পরিবহনে আখ আনতে গিয়ে ব্যাপক খরচ হয়। যেমন পাবনা ঢালার চরে ৪০০ একরে আখ চাষ হয়, যা মিল থেকে ৮২ কিলোমিটার দূরে। সেখান থেকে এক ট্রলি আখ আনতে কম করে হলেও ৮০ লিটার ডিজেল খরচ হয়। ক্যাচমেন্ট এরিয়া বেশি হওয়ার জন্য চিনিকলটি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বছরে মাত্র তিন মাস উৎপাদনে থাকলেও এ মিলে শ্রমিক রয়েছে ৮৭২ জন। কর্মকর্তাদের বেতন বৃদ্ধি হলেও আখের ফলন বৃদ্ধি হচ্ছে না। সব খরচ মিলে এ চিনিকলে প্রতি কেজি চিনির উৎপাদন ব্যয় দাঁড়ায় দুইশ’ টাকার কাছাকাছি।

এ পরিস্থিতিতে এ চিনিকলকে লাভজনক করতে ডিস্টিলারি, বিদ্যুৎ উৎপাদন, পানি বিশুদ্ধকরণসহ বহুমুখী উৎপাদনের পরিকল্পনা গ্রহণের দাবি উঠেছে।

এ ব্যাপারে জাতীয় শ্রমিক লীগ ঈশ্বরদী আঞ্চলিক শাখার যুগ্ম সম্পাদক আখ চাষি আশরাফুজ্জামান উজ্জ্বল বলেন, মিলটি লাভজনক করতে হলে পুরনো জাতের আখ চাষ শুরু করতে হবে। ঈশ্বরদী সুগারক্যান রিসার্চ সেন্টার যে আখের বীজ তৈরি করছে সেই আখে রস হয় না তেমন। লতাজাবা আখের বীজ দরকার। এছাড়াও ভবানীপুর কিংবা ঢালারচর ডিগ্রির চর এলাকায় যে সরকারি জায়গা রয়েছে সেখানে ৪ হাজার একর জমিতে আখ লাগানো সম্ভব। সরকারিভাবে এ জায়গা পাওয়া গেলে বীজ উৎপাদনের জন্য যদি ফার্ম তৈরি করা হয়, তাহলে আর পাবনা সুগার মিলে লোকসানের কোনো সুযোগ নেই।

এ ব্যাপারে মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী একেএম তোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী জানান, চিনি উৎপাদনে প্রয়োজনীয় আখ সরবরাহ মিলছে না, পাশাপাশি উৎপাদন সামগ্রী ও বিভিন্ন মালামালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় লোকসান কমানো যাচ্ছে না। ২ লাখ মেট্রিকটন আখ মাড়াই করতে পারলে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ১৫ হাজার মেট্রিকটন চিনি উৎপাদন সম্ভব।

(এসকেকে/এএস/ফেব্রুয়ারি ০২, ২০১৭)