নওগাঁ প্রতিনিধি : দেশের ঠাঁঠাঁ বরেন্দ্র অঞ্চল খ্যাত নওগাঁর সাপাহারে উৎপাদিত আম এবার বর্হিবিশ্বে রপ্তানী করার জোর প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে। যার জন্য বাংলাদেশ কৃষি মন্ত্রণালয় ও রফতানী বিভাগের ডেপুটি ডাইরেক্টর মোঃ আনোয়ার হোসাইন বৃহস্পতিবার সাপাহারে এক সফরে এসে উপজেলার বিভিন্ন আম বাগান পরিদর্শন করেছেন।

বিগত কয়েক বছর ধরে সাপাহারে ব্যাপক হারে ফজলী, ল, খিরশাপাতি, লেংড়া, গোপালভোগ ও হাই-ব্রিড আমরুপলি (রুপালী) আমের চাষ হয়ে আসছে। অতীতে দেশের সকলেই চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলাকে আমের রাজধানী হিসেবে মনে করত। বর্তমানে নওগাঁ জেলার সাপাহার, পোরশা উপজেলায় যে পরিমানে বিভিন্ন জাতের আম উৎপাদন হয়ে থাকে, তা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার চেয়ে কোন অংশে কম নয় বলে এখানকার বাগান মালিকদের দাবী। কয়েক বছর ধরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষকে আমের মৌসুমে সাপাহার থেকে আম কিনে নিয়ে যেতে দেখা গেছে। তারা সাপাহারের আম চাঁপাইনবাবগঞ্জে নিয়ে গিয়ে চাঁপাইয়ের আম বলে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করেছে বলেও জানা গেছে।

সাপাহারের মাটি হাই-ব্রিড আমরুপালি আম চাষের উপযোগী হওয়ায় এখানকার মানুষ বর্তমানে ধানের আবাদ ছেড়ে দিয়ে আম চাষে ঝুঁকে পড়েছে। উপজেলার আমচাষী দেলোয়ার হোসেন, মমিনুল হক, শাহজাহান আলী, মনছুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলমসহ একাধীক আমচাষীরা জানান, কয়েক বছর ধরে ধানের বাজারে ধস নামায় ধান চাষ করে কৃষকদের লোকসান গুনতে হতো। তাই ধান চাষ বাদ দিয়ে তারা তাদের আবাদী জমিতে হাই-ব্রিডসহ বিভিন্ন জাতের আম চাষ করে প্রতি বিঘা জমিতে ধানের তুলনায় কয়েক গুন বেশী টাকা লাভ হওয়ায় সকলেই এখন আম চাষে মনোনিবেশন করেছেন। বর্তমানে দিন দিন পুরো উপজেলায় আমের বাগান বৃদ্ধি পাওয়ায় ধান চাষের জমি কমতে শুরু করেছে।
উপজেলা কৃষি অফিসের জরিপ মতে বর্তমানে পোরশা ও সাপাহার উপজেলায় প্রায় ১৫হাজার হেক্টর জমিতে হাই-ব্রিডসহ বিভিন্ন জাতের আম গাছ রোপন করা হয়েছে। যে হারে আম বাগানের সংখ্যা বেড়ে চলেছে, এতে সামান্য সময়ের মধ্যে মাঠের পর মাঠ শুধু আমের বাগানে পরিনত হবে। এছাড়া এবারে আবহাওয়া আম চাষের অনুকুলে থাকলে প্রতি হেঃ বাগানে ১০ মেঃটন হিসেবে এবারে এখানে কম পক্ষে দেড় লাখ মেঃ টন আম উৎপন্ন হবে।

বর্তমানে সাপাহার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ফাহাদ পারভেজ বসুনীয়া দাপ্তরিক কাজে রাজধানী ঢাকায় গিয়ে দেশের রপ্তানী অফিসে যোগাযোগ করে ডেপুটি ডাইরেক্টর আনোয়ার হোসেনকে সাপাহারে আম বাগান পরিদর্শনে আনেন। তিনি সাপাহার উপজেলা কৃষি অফিসে এসে নির্বাহী অফিসার, ফাহাদ পারভেজ বসুনীয়া, কৃষি অফিসার এএফএম গোলাম ফারুক হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন আম বাগান পরিদর্শন করেন এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বাগানের প্রতিটি আম ব্যাগিং পরিমিত কিটনাশকের ব্যবহারসহ বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করলে সাপাহারের আম চাষীদের আম ইউরোপসহ বহিঃবিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানী করার উপযোগী হবে বলে তিনি আশ্বাস প্রদান করেন। অনেকেই তার পরামর্শে তাদের আমবাগান পরিচর্যার কাজ শুরু করেছেন বলে বাগান মালিকরা নিশ্চিত করেছেন। জানিয়েছেন।

(বিএম/এএস/ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০১৭)