নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর আত্রাই উপজেলার এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী জমিদারদের বসবাসের গ্রাম হিসেবে পরিচিত “পাঁচুপুর” গ্রাম। যার নাম বললেই সকলেই চিনতে পারে। আর সেই পাঁচুপুর গ্রামের এক দরিদ্র নারী (পাটনী) রাজকুমারী। যার নামে ঘাটটি ইজারা প্রদান করা হয়েছে। তার প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন তার ছোট দেবর শ্রী সুদেব দাস ভুট্টু।

এই রাজকুমারী আর ভুট্টুই প্রমান করলেন, দশে মিলে কাজ করলে তার সফলতা আসবেই। শুধু সরকারের ওপর নির্ভরশীল হলে চলেনা। এলাকার ছোট-খাট উন্নয়নে সকলেরই দ্বায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয়া উচিৎ। তাদের উদ্যোগে ঠিক তেমনই ‘দশে মিলে কাজ’ করলে যে সফলতা আসে, তার প্রমাণ রাখলেন তারা। নিজেদের উদ্যোগে আত্রাইয়ের গুরনদীর ওপর একটি বিশাল বাঁশের সাঁকো তৈরি করে তারা এতোদিন ধরে বিচ্ছিন্ন থাকা এলাকাবাসীর জীবনে সেতুবন্ধনের সৃষ্টি করলো। নবনির্মিত এই সাঁকোর নাম দেয়া হয়েছে, “ভুট্টুর বাঁশের সেতু”।

মঙ্গলবার এই বাঁশের সাঁকোটি উদ্বোধন করেন, পাঁচুপুর ইউপির নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক আফছার আলীসহ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। আগামীতে ওই স্থানে একটি স্থায়ী ব্রিজ নির্মাণেরও প্রতিশ্রুতি দিলেন তারা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কাসেম সভাপতিত্ব করেন। আরো বক্তব্য রাখেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নৃপেন্দ্র নাথ দত্ত দুলাল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্রী বরুণ কুমার সরকার। আত্রাই উপজেলা সদর থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার পূর্বদিক দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে আত্রাই গুড়নদী। এ নদীর এ পাড়ে,পাঁচুপুর উজান পাড়া, সাহেবগঞ্জ, মধুগুড়নই, মালিপুকুর, এবং নদীর অপরদিকে পার-পাঁচুপুর, চকবিষ্টপুর, কয়রা, সিমুলকুচি, বাঁকা এবং ইসলামগাঁথী গ্রাম। মাত্র কয়েক কিলোমিটার দুরে উপজেলা সদর অবস্থিত হলেও আত্রাই গুরনদীর কারণে তারা ছিলেন বিচ্ছিন্ন। এই ১০ গ্রামের কৃষক তাদের উৎপাদিত পন্য অনেক কষ্ট করে নদী পার হয়ে উপজেলায় নিয়ে যেতেন। একই সঙ্গে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদেরও ছিলো খুব কষ্ট। তাদের এই কষ্ট লাঘবের জন্য বার বার সরকারের নানা জায়গায় ধর্ণা দিয়েও মিলেনি ব্রিজ। শ্রী সুদেব দাস ভুট্টু উদ্যোগ নিয়ে এই ১০ গ্রামের মানুষকে মিলিত করে ঠিক করেন, তারা নিজ উদ্যেগেই তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাবেন। নানা ভাবে এই গ্রামবাসীদের উৎসাহিত করেন, শ্রী সুদেব দাস ভুট্টু। এই সুদেব দাস ভুট্টু গ্রামের উঠতি বয়সী যুবকদের সঙ্গে নিয়ে নিজের নামে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) থেকে টাকা কর্জ্জ নিয়ে এবং নিজের আত্মীয়-স্বজন বন্ধুদের নিকট থেকে অর্থ সংগ্রহ করে প্রায় ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ব্যয়ে পাঁচুপুর কালিবাড়ি খেয়াঘাট এলাকায় শুরু করেন একটি বাঁশের সাঁকো তৈরির কাজ। দীর্ঘ দু’মাস কাজ করে আত্রাই গুরনদীর ওপর ৬শ’ ফুট দীর্ঘ সাঁকো নির্মাণ করেন।

পাঁচুপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আফছার আলী জানান, পাঁচুপুর কালিবাড়ি খেয়া ঘাটে আত্রাই গুড়নদীর ওপর একটি ব্রিজ নিমার্ণের জন্য ইতোমধ্যেই ইসরাফিল আলম এমপিসহ সরকারের উর্ধ্বতন মহলের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবটি খুব শীঘ্রই পাশ হয়ে আসলে আগামী ২-৩ বছরের মধ্যে এখানে একটি ব্রিজ নির্মাণ করা সম্ভব হবে।

(বিএম/এএস/ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০১৭)