মাগুরা প্রতিনিধি : যশোর-মাগুরা মহাসড়কের মাগুরা অংশের শালিখা উপজেলার সীমাখালী ব্রীজ ভেঙে পড়ার একদিন পার হলেও যোগাযগ পুন:স্থাপন করতে বিকল্প কোন ব্যবস্থা চালুর উদ্যেগ নেয়নি জেলা সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। এতে কার্যত বিচ্ছিন্ন রয়েছে ব্যস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ভেঙে পড়া বেইলি ব্রীজের পাশে চিত্রা নদীর উপর স্থানীয় লোকজন বাশের সাঁকো ও নৌকায় পারাপারের ব্যবস্থা করে ব্যবসা ফেঁদেছেন। পার হতে মাথাপিছু তারা ১০ টাকা করে আদায় করছেন।নিরুপায় হয়ে টাকা দিয়ে চিত্রানদী পার হচ্ছেন শত শত নারী-শিশুসহ লোকজন।

স্থানীয়রা জানায়, অতীতে এসব জেলার মানুষদের উল্লেখিত জেলায় আসা-যাওয়ার জন্য ঝিনাইদহ ঘুরে যেতে হতো। ব্রিজটি নির্মিত হওয়ার পর মাগুরা থেকে যশোর যাওয়ার দূরত্ব ৩০ কিলোমিটার কমে যাওয়ায় এটিকে সহজ পথ হিসেবে বেছে নেয়। ব্রিজটি দ্রুত সংস্কার কিংবা বিকল্প ব্যবস্থা না হলে অতীতের মতো এসব জেলার মানুষকে দক্ষিণাঞ্চলে যাওয়ার ক্ষেত্রে ঝিনাইদহ ২৮ কিলোমিটার বেশি পথ ঘুরে যেতে হবে।

সোমবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে ৩০টন ওজনের পাথর বোঝাই দুটি ট্রাক ও একটি কাভার্ড ভ্যান নিয়ে প্রায় ২০ফিট নিচে চিত্রা নদীতে ভেঙ্গে পড়ে ৫০ মিটার লম্বা বেইলি ব্রীজটি। অতিরিক্ত ওজনের কারণেই ব্রীজটি ভেঙে পড়েছে বলে প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হচ্ছে। দুর্ঘটনায় তিনজন আহত হয়েছেন। ভেঙে পড়ার সময় ব্রীজের উপর যাত্রীবাহী বাস না থাকায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো গেছে।

স্থানীয় লোক জনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৮৪ সালে নির্মিত এ ব্রীজটি দীর্ঘদিন কোন রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি বলে এলাকাবাসি অভিযোগ করেন। ব্যস্ত এই মহাসড়কে রাতদিন হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে। নানা বাহনে চলাচল করেন পথচারীরা। বাইরে থেকে ব্রীজটির খারাপ অবস্থা বোঝার কোন উপায় নেই। ব্রীজটির উপর দিয়ে সর্বচ্চ ১০ টন ওজনের যানবাহন পারাপারের কথা থাকলেও তদারকি না থাকায় চালকেরা তা মানতেন না।

মহাসড়কটি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় ঢাকা-খুলনা, ঢাকা- বেনাপোল, ঢাকা-সাতক্ষিরাসহ দক্ষিণাঞ্চলের সাথে সংযোগকারি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ রুটের যানবাহনকে ঝিনাইদহ নড়াইল হয়ে প্রায় ৩০কিলোমিটার বেশী ঘুরে যেতে হচ্ছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান- সকাল সোয়া দশটায় পাথর বোঝাই দুটি ট্রাক ব্রিজের দক্ষিণ পাড়ে পৌছলে হঠাৎ বিকট শব্দে ব্রীজটির দক্ষিণ দিক ধ্বসে নদীতে পড়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে পুরো ব্রীজ নদীতে পড়ে যায়। এ সময় ট্রাকের ২জন ড্রাইভার ও এক সাইকেল আরোহী পথচারি আহত হন। দ্রুত তাদেরকে উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। এদিকে ব্রীজটি ভেঙ্গে পড়ায় এলাকার মানুষের মধ্যে আতংক দেখা দিয়েছে। এ ঘটনার জন্য তারা ব্রীজের তদারককারি প্রতিষ্ঠান সড়ক ও জনপথ বিভাগকে দায়ী করেন।

সীমাখালি গ্রামের বাসিন্দা শামসুর রহমান, সোহেল আহম্মদ, নাদিয়া সুলতানাসহ দশজন ব্যক্তি অভিযোগ করেন- ঢাকা খুলনা মহাসড়কের যশোর ও মাগুরার সীমান্তবর্তী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই ব্রীজটি নির্মানের পর থেকে দৃশ্যমান কোন রক্ষণাবেক্ষনের কাজ দেখা যায়নি। ফলে বেশ কিছুদিন ধরে ব্রীজটি ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়েছিল। সামান্য নসিমন পারাপারের সময়ও ব্রীজটি জোরে কেঁপে ওঠতো। বাস বা বড় কোন গাড়ি গেলে ব্রীজটি রীতিমত দুলেতো।

এ অঞ্চলের অন্যতম বড় বাজার সীমাখালি বাজারের পাশেই ব্রীজটির অবস্থান হওয়ায় প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরণের গাড়ি ও মানুষজন ব্রীজটি দিয়ে পারাপার হন। সোমবার ব্রীজটি ভেঙ্গে পড়ার সময় ভাগ্যের জোরেই লোকজন ব্রীজে ছিল না। তাছাড়া এ সময় কোন যাত্রীবাহি গাড়ি ব্রীজের উপর থাকলে বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারতো। এছাড়া এ ব্রীজের উপর দিয়ে ২৫/৩০টন পাথর নিয়ে বিভিন্ন সময় ১০চাকার ট্রাক যাতায়াত করে। একসঙ্গে একাধিক যানবাহন ব্রীজে ওঠা নিয়ন্ত্রনের কোন ব্যবস্থাই কর্তৃপক্ষের ছিল না।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক আজমল হোসেন ও লিপি খাতুন জানান, স্কুলে যেতে প্রতিদিন তাদের ব্রীজ পার হতে হয়।এখন তারা নৌকায় পার হচ্ছেন।

ফরিদপুর থেকে বেনাপোল হয়ে ভারতে যাবেন আমজাদ হোসেন। তিনি বলেন, বাঁশের সাঁকোয় পার হয়ে ওপার থেকে গাড়িতে উঠবেন। এতে সময় অর্থ দুইই বাচবে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: তারিকুল ইসলাম জানান- অতিরিক্ত ওজন পরিবহন করতে না পেরেই ব্রীজটি ভেঙ্গে গেছে। ঘটনার পর থেকে এলাকায় পুলিশ ও ফায়ারব্রীগেড উদ্ধার তৎপরতা চালিয়েছে। আবার যেন কোন দুর্ঘটনা না ঘটে তার জন্য পুলিশ তৎপর রয়েছে। পরবর্তীতে উদ্ধারকারি দল এলে ট্রাকগুলি উদ্ধারের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মাগুরা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন ম্যানেজার মো: মানিরুজ্জামান জানান- ব্রীজটির বিভিন্ন স্থানে লোহার নাটে জং ধরে গিয়েছিল। এছাড়া অতিরিক্ত ওজনের দুটি গাড়ি পরপর ব্রীজে ওঠায় ব্রীজটির ভার সহ্য করতে না পেরে পুরো ব্রীজটি ভেঙ্গে পড়ে।

এ ব্যাপারে মাগুরার সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহি প্রকৌশলীকে মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ব্যাস্ত আছেন জানিয়ে মেসেজ পাঠান। পরবর্তীতে তিনি আর মোবাইল ফোন ধরেননি।

মাগুরার জেলা প্রশাসক মাহ্ মাহবুবর রহমান জানান- সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে ঘটনার কারণ জানিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছেন। এ ব্যাপারে পরবর্তীতের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(ডিসি/এএস/ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৭)