স্টাফ রিপোর্টার : সংসদ সদস্যদের হাতে সুপ্রিমকোর্টের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিল শুনানিতে দুই মাস সময় দিয়েছেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। আপিল শুনানির জন্য আগামী ৮ মে সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে সাত সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। অপরদিকে আবেদনকারীদের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ।

এছাড়াও এ মামলায় আপিল বিভাগের নিয়োগপ্রাপ্ত অ্যামিকাস কিউরি ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ, ফিদা এম কামাল ও এমআই ফারুকী উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে ড. কামাল হোসেন তার লিখিত মতামত প্রস্তুত করেছেন বলে আদালতকে জানিয়েছেন। চাইলে দাখিল করতে পারবেন। বাকি অ্যামিকাস কিউরিদেরকেও (আদালতের বন্ধু বা আইনি সহায়তাকারী) দ্রুত লিখিত মতামত জমা দেয়ার জন্য আদালত অনুরোধ জানিয়েছেন।

অাজ সকালে অ্যাটর্নি জেনারেল আপিল শুনানিতে প্রস্তুতির জন্য আট সপ্তাহ সময় চান। এ সময় আদালত বলেন, এ মামলায় আপনি হাইকোর্টে সাবমিশন রেখেছেন। এখানে নতুন কিছু নেই। ঠিক আছে ৮ মে পর্যন্ত সময় দিলাম। এরপর আর সময় দিতে চাই না।

পরে ড. কামল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দুই মাস সময় দিয়েছেন আদালত। আমি এরই মধ্যে আমার লিখিত বক্তব্য রেডি করেছি।

লিখিত বক্তব্যে কী বলেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে কামাল হোসেন বলেন, এখানে নতুন কিছু নেই। আমি হাইকোর্টেও অ্যামিকাস কিউরি ছিলাম। হাইকোর্টের রায়ে আমার বক্তব্য সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জাস্ট ওটার একটু ইলাবোরেট ব্যাখ্যা থাকবে আর কী।

এর আগে গত ২ ফেব্রুয়ারি ১২ জন অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ দিয়ে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ ৭ মার্চ আপিল শুনানির দিন ধার্য করেছিলেন।

অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে নিয়োগ পাওয়া জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা হলেন- ড. কামাল হোসেন, এম আমীর-উল ইসলাম, এ এফ হাসান আরিফ, আজমালুল হোসেন কিউসি, রফিক-উল হক, আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া, রোকনউদ্দিন মাহমুদ, টিএইচ খান, এম আই ফারুকী, এ জে মোহাম্মদ আলী, ফিদা এম কামাল ও শফিক আহমেদ।

ষোড়শ সংশোধনীর বিষয়টির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি চেয়ে বাদীপক্ষের করা আবেদনের শুনানির জন্য গত ৫ জানুয়ারি দিন ধার্য ছিল চেম্বার আদালতে। ওইদিন রাষ্ট্রপক্ষের সময় আবেদন মঞ্জুর করে ২ ফেব্রুয়ারি শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছিল।

২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আনা হয়। বিলটি পাসের পর একই বছরের ২২ সেপ্টেম্বর তা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়।

সংবিধানের এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরের ৫ নভেম্বর সুপ্রিমকোর্টের ৯ আইনজীবী হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। এ রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে একই বছরের ৯ নভেম্বর এ সংশোধনী কেন অবৈধ, বাতিল ও সংবিধান পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

২০১৫ সালের ২১ মে রুলের শুনানি শুরু হয়। গত বছরের ১০ মার্চ এ রুলের শুনানি শেষে ৫ মে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে রায় দেন হাইকোর্ট।

ষোড়শ সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে দুই বিচারপতির দেয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি গত বছরের ১১ আগস্ট সুপ্রিমকোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়। আর অবৈধ বলে দেয়া রায়ের সঙ্গে দ্বিমত পোষণকারী বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের রায় প্রকাশিত হয় গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর। চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি এ বিষয়ে আপিল আবেদন করেন রাষ্ট্রপক্ষ।


(ওএস/এসপি/মার্চ ০৭, ২০১৭)