সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি : সিরাজগঞ্জের কামারখন্দে চেয়ারম্যান, মেম্বর ও সমাজ সেবা অফিসের কর্মকর্তাদের কাছে ধর্ণা দিয়েও শারীরিক প্রতিবন্ধী মো. হেলাল উদ্দিনের কপালে জোটেনি  প্রতিবন্ধী ভাতা। জন্মগত শারীরিক প্রতিবন্ধী হেলাল উপজেলার চর নূরনগর গ্রামের মৃত ইয়ার বক্স সেখের ছেলে। ৪ভাই ২বোনের মধ্যে সে তৃতীয়। বড় ভাইয়ের পৃথক সংসার। বিয়ের সুবাদে দু’বোন স্বামীর সংসারে। ছোট ২ভাই ও মাকে নিয়ে ৪জনের সংসার। একমাত্র উপার্জনক্ষম ছোট ভাই বেলাল হোসেন। সে কৃষি শ্রমিকের কাজ করে বৃদ্ধা অসুস্থ মায়ের চিকিৎসা খরচ ও সংসার চালায়। খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করতে হয়। সবার ছোট ওমর ফারুক এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। হেলালের বাবা ছিলেন একজন কৃষক। ২০১২ সালে তিনি মৃত্যু বরণ করেন। এমনিতেই অভাব অনটনের সংসার, তার ওপর বাবার মৃত্য। অমানিসার অন্ধকারে গ্রাস করে পুরো পরিবারকে।

সহায় সম্বলহীন জন্মগত প্রতিবন্ধী হেলাল নিজের প্রবল ইচ্ছা শক্তি দিয়ে দারিদ্র্যতার সাথে লড়াই করে নিকটাত্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সহযোগিতায় ২০১৩ সালে ঢাকার মিরপুর সরকারি বাংলা কলেজ থেকে ইসলামি শিক্ষা বিষয়ে দ্বিতীয় বিভাগে মাস্টার্স পাশ করে। নিজে প্রতিবন্ধী হলেও বর্তমানে দরিদ্র অসহায় পরিবারের চাহিদা মেটাতে একটি সরকারি চাকরীর আশায় বুক বেধে রয়েছে সে। এখন আর সে প্রতিবন্ধী ভাতা চান না চান একটি সরকারি চাকরী।

হেলাল উদ্দিন জানান, আমি কোন প্রতিবন্ধী ভাতা পাইনা, প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য চেয়ারম্যান মেম্বারদের কাছে ঘুরতে হয়েছে অনেকবার। তবুও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। অনেক দিন আগে কামারখন্দ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা হাসান শরীফ আমার ছবি ও আইডি কার্ডের কপি নিয়েছেন কিন্তু তিনিও আমার প্রতি সদয় হননি। এসময় অশ্রুসিক্ত কন্ঠে হেলাল উদ্দিন বলেন, আমার প্রতিবন্ধী ভাতার প্রয়োজন নেই। খেয়ে না খেয়ে পড়াশুনা করেছি, এখন শুধু প্রয়োজন শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিত্তিতে একটা চাকরী। যেন আমার পরিবারের মুখে দু’বেলা দু’মুঠো খাবার তুলে দিতে পারি।

হেলাল উদ্দিনের বৃদ্ধা মা তারা বানুর অভিযোগ, স্থানীয় জন প্রতিনিধিদের খামখেয়ালীপনার কারণে আমাদের মতো হতদরিদ্র পরিবারের সদস্যদের প্রতিবন্ধী ভাতা মেলেনি। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তাদের পছন্দের লোকদের এসব সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়। ছেলের চাকুরীর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন তিনি।

ভদ্রঘাট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক জানান, বিষয়টি অবগত ছিলাম না। যত দ্রুত সম্ভব হেলালের জন্য প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করা হবে।

(এমএস/এএস/এপ্রিল ১৩, ২০১৭)