মোঃ আব্দুল কাইয়ুম, মৌলভীবাজার : গত কয়েকদিনের ধারাবাহিক বৃষ্টিপাতের ফলে আবহাওয়া পরিবর্তন হচ্ছে। এতে মৌলভীবাজার শহর ও এর আশ পাশের বিভিন্ন গ্রামে বা পাড়া মহল্লায় পাঁকা বাসা বা আদা পাকা বাড়ির নিচের ফ্লোর ঘেমে একধরনের পানি বের হচ্ছে, সরেজমিনে গিয়ে এর সত্যতা পাওয়া গেছে। বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে ফলাও করে কোন সংবাদ চোখে না পড়লেও অনলাইন পোর্টাল এ নিয়ে সংবাদ প্রচার করে।

অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে অনেককে স্ট্যাটাস দিতে দেখা গেছে, অনেকে বিষয়টি নিয়ে আতংকিত হয়ে পড়ছেন। তবে এককেকজন একেক ভাবে ব্যাখা দিলে বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে পাওয়া গেছে ভিন্ন তথ্য।

এ বিষয়ে মৌলভীবাজার রাডার ষ্টেশনের যোগাযোগ প্রকৌশলী মোঃ মোস্তফা মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে বলেন, এতে আতংকিত হওয়ার কিছু নেই,এটা কয়েকদিন আগেও একবার শুক্রবারে হয়েছিল। এটা হল বাতাসের আদ্রতা (রিলেটিভ হিউমেনিটি)।

এরকম বৈশাখ বা চৈত্রের শেষের দিকে বেশি পরিমানে বৃষ্টি কন্টিনিউ করে বা আবহাওয়াটা একটু ঝিম মেরে থাকে লম্বা সময়ের জন্য (দুই দিনের জন্য) তখন হয়কি আপেক্ষিক আদ্রতাটা বেড়ে যায়, অর্থাৎ বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমানটা বেড়ে যায়। যার ফলে ভূপৃষ্ঠের কাছের মাটিটা তখনতো মানে কম্পারেটিবলি নিচেরটা ঠান্ডা হয়ে যায়, ঠান্ডা হয়ে গেলে পরে সে তখন, মাটির আশে পাশের জলীয় পাষ্পকে টেনে নিয়ে যায়, যার কারণে সিমেন্ট বা টাইলসের তৈরি ঘরের ফ্লোর ঘেমে পানি জমে পিচ্চিল হতে থাকে। এ নিয়ে ভয়ের কিছু নেই জানিয়ে তিনি বলেন, আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে এটি ঠিক হয়ে যাবে, তবে দুতলা বা তিনতলায় এরকম হয়না কারণ, সেগুলোর সাথে ভূপৃষ্টের কোন সম্পর্ক নেই। জলীয় বাষ্পের পরিমান বাড়ার সাথে সাথে মানুষের দেহেও একধরনের জালাতন শুরু হয় এবিষয়ে তিনি ব্যাখা করে বলেন,বাতাসের আদ্রতার কারণে মানুষের শরিরে গোমট গোমট ভাব তৈরি হয় কারণ,আবহাওয়াটা সহনীয় পর্যায়ে নেই। সেই সাথে মানুষের দেহের মধ্যেও একধরনের বিরক্তকর জালাতন ভাব তৈরি হয়। এদিকে হঠাৎ এধরণের ফ্লোর ঘেমে যাওয়া আর কখনো কোথাও হয়েছে কিনা এরকম তথ্য’র ব্যাপারে জানতে চাইলে মোঃ মোস্তফা জানান, এরকম ফ্লোর ঘেমে যাওয়া তিনি কোথাও দেখেননি।

তবে হটাৎ করে বাসা বাড়ির ফ্লোর ঘেমে যাওয়ায় অনেকে আবার এনিয়ে দুশ্চিন্তায় পরে যান, বিষয়টির সাথে বর্তমান বিশ্বের অন্যতম আলোচিত ইস্যু জলবায়ূ পরিবর্তনের কোন যোগসূত্র আছে কিনা তা নিয়েও তাদের মনে প্রশ্ন তবে আবহওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর সাথে জলবায়ূ পরিবর্তনের কোন সম্পর্ক নেই। অন্যদিকে বাতাসের আদ্রতা বেড়ে যাওয়ার ফলে ছোট্র শিশু থেকে আরম্ভ করে বিভিন্ন বয়সীদের শরিরেও ছড়িয়ে পড়ছে নানান রোগ জিবানো, শরীরে জালাতন থেকে শুরু করে একধরণের ঘামাছির মতো ছোট ছোট, রেশ দেখা দিচ্ছে, সেই সাথে শরীরে খিচুনী ও আছে। চিকিৎসকরা বলছেন, এটা অতিরিক্ত বাতাসের আদ্রতার কারনেই, এসমস্যা যতদিন বাতাসের আদ্রতা কমবেনা ততদিন থাকবেই, তবে এ নিয়ে আতংকিত না হয়ে সাথে সাথে নিকটস্থ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া যেতে পারে।

মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক ডা: আবু ইমরান মুঠো ফোনে আলাপকালে এ প্রতিবেদককে জানান, মুল বিষয়টা হল অত্যাধিক বাতাসের আদ্রতা,উদাহরন হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন,আপনি রুমের এসি ছেড়ে দিলে কিন্তু ফ্লোরে জমে থাকা পানি উঠে যাবে, এতেই বুঝা যাচ্ছে এটি বাতাসের অতিরিক্ত আদ্রতার কারনে,এর কারনে শুধুমাত্র মানুষের শরীরের স্কিনেই সমস্যা না,সেই সাথে আরো অনেক সমস্যাই হতে পারে। যেমন, বমি বমি ভাব, শাসকষ্ট, এলার্জি সহ মাথা ঘোরানোও হতে পারে। তিনি বলেন, বাতাসের আদ্রতার কারনে যে সমস্যা হয় এ সমস্যাগুলো প্রকাশ করা ঠিকনা, কারণ প্রকাশ হলে পরে সাধারণ মানুষ আতংকিত হতে পারে। বিষয়টি নিয়ে মানুষের মধ্যে এক ধরনের ভীতি কাজ করছে তাই যেকোন উপায়েই যাতে গণমানুষের মনে ভয় না হয় সেদিকে খেয়াল রেখে তাদের সাহস দিতে পরামর্শ দেন এ চিকিৎসক।

(এমএকে/এএস/এপ্রিল ২৭, ২০১৭)