মদন (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি : অকাল বন্যায় ফসলহারা নেত্রকোনার মদন উপজেলার কৃষকদের পূর্নবাসনের লক্ষ্যে সরকার কর্তৃক ডিলারের মাধ্যেমে খোলা বাজারে চাল ও আটা বিক্রি (ওএমএস) শুরু হলেও কার্যক্রম অপ্রতুল থাকায় অনেকেই এর সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। নিম্ন আয়ের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় নষ্ট করেও চাল না পেয়ে খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে। এসব পরিবারের লোকজন অনাহারে অর্ধাহারে জীবন যাপন করছে।

কৃষি অফিস ও সংশ্লিষ্ট দপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বন্যায় মদন পৌরসভাসহ উপজেলার ৮ ইউনিয়নে ১৩হাজার ৮৫ হেক্টর জমির অধা পাকা বোরো ধান তলিয়ে ১শ ৭১ কোটি ২৮ লাখ ২৬ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে।

এতে ২৩ হাজার ৯শ ৭৫ কৃষক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তারা এক ছটাক ধানও ঘরে তুলতে পারেনি। ফলে এলাকায় চরম খাদ্যাভাব দেখা দেয়। এ খবর পেয়ে ত্রান ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম এমপি, এ বিভাগের সচিব শাহ কামাল, জেলা-উপজেলা প্রশাসন, বিভিন্ন সংগঠন এলাকা পরিদর্শন করে কৃষকদের সাথে মতবিনিময় করেন।

এ সময় মন্ত্রী ভিজিএফ চাল ও নগদ টাকা বিতরণ করে পর্যাপ্ত পরিমানের খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির চাল ও ওএমএস এর চাল বিক্রির ঘোষণা দেন। পৌরসভাসহ উপজেলার ৮ইউনিয়নের ৮হাজার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক পরিবার ভিজিএফ চাল ও নগদ ৫শ টাকা মাসে পাওয়ার সুযোগ পায়।

উপজেলার ৮ ইউনিয়নের মধ্যে ৬ জন ও পৌরসভায় ১জন মোট ৭জন ওএমএস ডিলার নিয়োগ দিয়ে শনিবার ব্যতিত প্রতিদিন ১ টণ চাল ২শ জনের মধ্যে ১৫ টাকা কেজিতে প্রতি ডিলার বিক্রি করার সুযোগ পায়। যা চাহিদার তুলনায় বরাদ্ধ অপ্রতুল থাকায় প্রতিদিনেই ডিলারগণ বানবাসি মানুষের চাপে কোণঠাসা হয়ে পড়ছে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ফতেপুর, তিয়শ্রী, গোবিন্দশ্রী, মাঘান ইউনিয়নে ওএমএস ডিলারের দোকানে সকাল থেকেই ৫/৬শ কৃষকের ভীড় থাকলেও ২শ জনকে দিয়েই চাল বিক্রি শেষ। বাকীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ডিলারের দোকান ঘেরাও করে চাল পাওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে। কিন্তু ডিলার নিরুপায় হয়ে তাদের গালমন্দ শুনেই পরে দিন আসার জন্য তাদেরকে আশ্বাস দিয়ে কোন ভাবে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। যারা চাল পাচ্ছে না তাদের পরিবার অনাহারে-অর্ধাহারে জীবন যাপন করছে।

এসব এলাকার সর্বস্তরের মানুষের দাবি, এলাকায় খাদ্যাভাব দুর করার লক্ষ্যে দ্রুত ভিজিএফ কার্ডধারীর সংখ্যা বৃদ্ধিসহ খাদ্য বান্ধব কর্মসূচি চালু ও ওএমএস এর বরাদ্ধ বাড়ানো এবং মদন ও কাইটাইল ইউনিয়নে ওএমএস ডিলার নিয়োগ জরুরী।

এ ব্যাপারে ওএমএস ডিলার সুরজিৎ বৈশ্য, খন্দকার ওয়াদুদ, নূরে আলম সিদ্দিকি, রুবেল ভুঁইয়া, মনির হোসেন চৌধুরী, রবিন খান, মোঃ শাহ জাহান মিয়া জানান, প্রতিদিন কমপক্ষে ৩ টণ চালের প্রয়োজন। এর মধ্যে আমরা ১ টণ করে ২শ জনের মধ্যে বিক্রি করার সুযোগ পাচ্ছি। প্রতিদিনেই ৬/৭শ কৃষক চাল নিতে আসছে। আমরা বাকীদের চাল দিতে না পারায় গালমন্দ শুনতে হচ্ছে এবং বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মূখীন হচ্ছি। বিষয়টি প্রতিদিনেই কর্তৃপক্ষকে অবগত করছি।

ভারপ্রাপ্ত উপজেলা চেয়ারম্যান নাসরিন আক্তার জানান, ভিজিএফ কার্ড ও ওএমএস কার্যক্রম অপ্রতুলতার বিষয়টি জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় উত্তাপন করেছি। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পূর্নবাসন করার লক্ষ্যে দ্রুত খাদ্য বান্ধব কর্মসূচি চালুর দাবি জানিয়েছি। দুইটি ইউনিয়নের ওএমএস ডিলার নিয়োগ করা প্রয়োজন। বিষয়টি জেলা প্রশাসনসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ওয়ালীউল হাসান ভিজিএফ কার্ড ও ওএমএস কার্যক্রম অপ্রতুলতার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিত ভাবে বিষয়টি অবগত করেছি অচিরেই এর সংখ্যা বাড়ানো হবে। খাদ্য বান্ধব কর্মসূচি চালুসহ দুইটি ইউনিয়নের ওএমএস এর ডিলার অচিরেই নিয়োগ দেওয়া হবে।

(এএমএ/এসপি/মে ০৯, ২০১৭)