মৌলভীবাজার প্রতিনিধি : মৌলভীবাজার বিআরটিএ কার্যালয়ে অনিয়মের শেষ নেই। তাদের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে সংবাদ প্রচার হলেও কখনই টনক নড়েনি তাদের। সরেজমিন সূত্রে জানা গেছে, এখানে চাকুরীহীন চাকুরেরাই এখানকার কর্মকর্তা-হর্তাকর্তা। আর তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে সহযোগিতা করে আসছেন সিলেটের বিআরটিএ ডিডি মোঃ আব্দুস সাত্তার, মৌলভীবাজার বিআরটিএ এডি জয়নাল আবেদীন ও ভারপ্রাপ্ত এমভিআই হাসান।

গত ৯ মে বিকাল ৩টায় বিআরটিএ কার্যালয়ে এক সংবাদকর্মীর প্রশ্নের জবাবে এডি জয়নাল আবেদীন বলেন- অফিসে যারা কাজ করেন তাদেরকে আমি চেয়ার টেবিলে বসে কাজ করার সুবিধা দিয়েছি। তাদের সরকারী অনুমোদন আছে। এখানে যারা কাজ করবেন, তারা আসবেন আবার চলে যাবেন। বিআরটিএ মৌলভীবাজার কার্যালয়ে কর্মকতা-কর্মচারীর সংখ্যা কতজন রয়েছেন জানতে চাইলে তিনি ব্যস্ততার অযুহাতে কথা বলতে অনিহা প্রকাশ করেন। এ সময় তার পাশের চেয়ারে বসা সিলেটের ডিডি মোঃ আব্দুস সাত্তারও একই ভাবে এডি জয়নাল আবেদীন এর কথার সুরে সুর মিলিয়ে বলেন- আপনি কিছু জানতে চাইলে আপনার পত্রিকার সম্পাদকের মাধ্যমে আবেদন করে জানতে পারবেন। মৌলভীবাজার ‘বিআরটিএ’ অফিস জেলার সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত। চাকুরীহীন চাকুরেরাই এখানকার কর্মকর্তা-হর্তাকর্তা। অফিসটিতে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী বলতে রয়েছেন এডি জয়নাল আবেদীন, ও এসিস্ট্যান্ট এমভিআই (বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত) হাসান, এসিস্ট্যান্ট এমভিআই ওসমান গনি ও অফিস সহকারী নজরুলসহ মোট ৪ জন। বাকিরা সবাই চাকুরীহীন চাকুরে। দস্তুর মত অফিসের চেয়ার টেবিলে বসে কাজ করা-ই শুধু নয়, কর্মকর্তা কর্মচারীসহ গোটা অফিসটি নিয়ন্ত্রণও করে এসব চাকুরীহীন চাকুরেরা। এখানকার প্রধান দালাল টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের শাহজাহান, কুমিলালার রসুলপুরের শিমুল ও আবুল কাসেম, চাঁদপুরের দুই ভাই করিম ও রহিম এবং মৌলভীবাজারের স্থানীয় দুই ভাই শাকিল ও জামিল দস্তুর মত অফিসের ভিতরে অফিসের চেয়ার টেবিলে বসে কাজ করছে প্রকাশ্যে।

এছাড়া, অফিসে ও বাইরে যখন যেখানে প্রয়োজন সেখানেই কাজ করে সুন্দর আলী ও রিপন নামের দু’জন। উপরি কামাইয়ের সুবিধার্থে এডি জয়নাল আবেদীন, বর্তমানে নারায়গঞ্জে কর্মরত এমভিআই খালেকুজ্জামান ও এসিস্ট্যান্ট এমভিআই (বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত) হাসানই এদেরকে নিয়োগ করেছেন বলে পরিচয় গোপণ রাখার শর্তে জানিয়েছে একাধিক গোপন সূত্র।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে- এডি জয়নাল আবেদীন ও এসিস্ট্যান্ট এমভিআই (বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত) হাসানই নিজেদের কেবিনে বসে সময় কাটাচ্ছেন এবং চাকুরীহীন চাকুরে বা দালালদের দেয়া কাজগুলিই করছেন। কর্মকর্তারাও সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছেন। কেউ সরাসরি তাদের কাছে গেলে, তারাই আবার পাঠিয়ে দেন উল্লেখিত চাকুরীহীন চাকুরে বা দালালদের কাছে। এর কারণ বলাই বাহুল্য। উপরি অর্থ এবং দালাল ছাড়া কোন কাজ হাসিল করা সম্ভব হয়না মৌলভীবাজার বিআরটিএ অফিসে। এডি জয়নাল আবেদীন, এসিস্ট্যান্ট এমভিআই (বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত) হাসানই এসব চাকুরীহীন চাকুরে বা দালালদের নিয়োগ ও লালন করার কারণে মোটরযান মালিক ও চালক উভয় পক্ষই ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন নিয়মিত। গাড়ির নিবন্ধন, ফিটনেস সনদ, ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ ফিটনেসহীন যানবাহনের ফিটনেস সনদ প্রদান, অযোগ্য লোককে চালকের সনদ প্রদান ইত্যাদি সকল কাজই করা হয় এ অফিসে। উপরী টাকার বিনিময়ে দালালদের মাধ্যমে চাকুরীহীন চাকুরেরাই এসকল কাজ করে দেয় প্রকাশ্যে। এরা যেকোন গাড়ির ফিটনেস সনদ নিশ্চিত করতে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা নেয়। ব্যাংকে ৭শ ৫০ টাকা জমা দিয়ে বাকি টাকা ভাগাভাগি হয় সংশি¬ষ্ট কর্মকর্তা ও দালালের মধ্যে। ৮ থেকে ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে পরীক্ষা ছাড়াই দেয়া হয় ড্রাইভিং লাইসেন্স। এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ১০ মে বুধবার রাতে পুনরায় মৌলভীবাজার বিআরটিএ এডি জয়নাল আবেদীন এর সাথে মুঠোফোনে কথা বলতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে ঝাড়ি মেরে বলেন, তিনি ব্যস্ত আছেন কথা বলতে পারবেননা বলে ফোন রেখে দেন। এর পর এ বিষয়ে মোবাইলে বিআরটিএ অফিসে টেবিল নিয়ে বসে কাজ করা কয়ছর নামে পরিবহন সেক্টর থেকে আসা এক ব্যক্তির সাথে কথা হয়। তাকে প্রশ্ন করা হয় তিনি এখানে কিভাবে নিয়োগ পেলেন, জবাবে তিনি জানান, এখানে সরকারিভাবে নিয়োগ পাওয়া মোট কর্মকর্তার সংখ্যা ৪ জন, অতিরিক্ত যারা এখানে কাজ করছেন তারা সবাই এই কর্মকর্তাদের দ্বারা নিয়োগপ্রাপ্ত এবং নিয়ন্ত্রিত। তিনি আরো বলেন এখানে সরকারি নিয়োগ প্রাপ্তদের বাহিরে যারা কাজ করছেন তারা সবাই কোন বেতন ভাতা পাননা তাহলে আপনাদের আয়ের উৎস কি এমন প্রশ্নের জবাবে কয়সর জানান, আমরা গাড়ির ফিটনেস সনদ, ড্রাইভিং লাইসেন্স সহ বিভিন্ন প্রকার কাগজপত্র গ্রাহকদের কাজ করে দেই বিনিময়ে তারা খুশি হয়ে যা দেন তাই আমাদের আয়ের একমাত্র উৎস ।

(একে/এএস/মে ১১, ২০১৭)