নিউজ ডেস্ক : বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সেকেন্ডারি এডুকেশন কোয়ালিটি অ্যান্ড অ্যাকসেস এনহান্সমেন্ট প্রজেক্ট (সেকায়েপ) এর পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচি’র আওতায় রংপুর বিভাগের ২৬ টি উপজেলায় ২০১৬ সালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে দায়িত্ব পালনকারী সংগঠকগণের মধ্যে ১০% সেরা সংগঠককে সম্মাননা পুরস্কার প্রদান করা হয়। রংপুর বিভাগের ২৬টি উপজেলার মোট ১৯৩ জন সেরা সংগঠক নির্বাচিত হন। আজ ২৬ মে ২০১৭ শুক্রবার, রংপুর পর্যটন মোটেল মিলনায়তনে সেরা সংগঠকগণকে সম্মাননা পুরস্কার ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।

আজকের এই অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- কাজী হাসান আহমেদ, বিভাগীয় কমিশনার, রংপুর, মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান, জেলা প্রশাসক, রংপুর, বিশেষ অতিথি প্রফেসর ড. এ কে এম সিরাজুল ইসলাম, পরিচালক, মাউশি রংপুর অঞ্চল, বিশেষ অতিথি জনাব শরিফ মো: মাসুদ, কো-টিম লিডার, পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচি, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র প্রিম রিজভী, উপ প্রকল্প পরিচালক, সেকায়েপ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ড. মোঃ মাহামুদ-উল-হক, অতিরিক্ত সচিব ও প্রকল্প পরিচালক সেকায়েপ পবিত্র গ্রন্থসমূহ থেকে পাঠের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয়, এরপর পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচির কো-টিম লিডার শরিফ মোঃ মাসুদ স্বাগত বক্তব্যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান এবং সেরা সংগঠকগণকে অভিনন্দন জানান।

তিনি বলেন, ২০১৭ সালে সারা দেশে পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচির ২১ লক্ষ ৭০ হাজার পাঠক হয়েছে। ২০৪১ সালের যে উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন প্রধানমন্ত্রী দেখছেন সেই উন্নত বাংলাদেশ নির্মাণের জন্য অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষায়ও উন্নতি প্রয়োজন। পাঠ্যবইয়ের বাইরের সেরা সেরা লেখকদের বই পড়িয়ে আমাদের শিক্ষার্থীদের আমরা সেই উন্নতির দারপ্রান্তে নিয়ে যেতে চাই। স্বাগত বক্তব্যের পর সেরা সংগঠকদের মধ্য থেকে দুই জন সেরা সংগঠক পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচি পরিচালনার ক্ষেত্রে তাদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। বই পড়ার অভ্যাসের কারণে ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়ার মান বাড়ছে বলে মতামত জানিয়ে তারা এই কার্যক্রমকে সারা দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে দেয়ার আহবান জানান। স্কুলের মতো মাদ্রাসাগুলোতে লাইব্রেরি পদ সৃষ্টি করার জন্য সরকারের নিকট আবেদন তুলে ধরেন।

প্রধান অতিথি বিভাগীয় কমিশনার রংপুর, কাজী হাসান আহমেদ তার বক্তব্যে বলেন, সারা দেশে বই পড়া চলছে এর মতো আনন্দের বিষয় আর হতে পারে না। তিনি আরো বলেন, তার শৈশবে এমন সুযোগ ছিল না, সরকার যে সুযোগ সৃষ্টি করেছে তাকে কাজে লাগাতে হবে। তিনি শতভাগ সংগঠকের উপস্থিতির প্রশংসা করেন। তরুণদের বইমুখী করার সেকায়েপ ও বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের মোবাইল লাইব্রেরির উদ্যোগকে তিনি অভিনন্দন জানান। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর রংপুর অঞ্চলের পরিচালক তার বক্তব্যে বলেন, ছাত্র-ছাত্রীদের যদি পড়ুয়া হিসাবে গড়ে তোলা যায় তবে আগামীদিনে বাংলাদেশ একটি পড়ুয়া জাতি হিসাবে বিশ্বে পরিচিত হবে। জঙ্গীবাদ থেকে আমাদের সন্তানেরা দূরে থাকবে। বই পড়তে নিয়মিত উৎসাহ যোগাতে হবে এই জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্দের দায়িত্ব অপরিসীম।

সেকায়েপ প্রকল্প পরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব ড. মোঃ মাহামুদ-উল-হক সভাপতির বক্তব্যে বলেন, সেকায়েপ প্রকল্পের একটি অন্যতম উদ্যোগ বইপড়া কর্মসূচি। বড় হতে হলে স্বপ্ন দেখতে হবে, আর স্বপ্ন দেখার জন্য বই পড়ার গুরুত্ব অপিরসীম। বইপড়ার অভ্যাস আমাদের ব্যক্তি ও সমাজ জীবনকে যে সমৃদ্ধ করবে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচির উদ্দেশ্য জীবনকে আলোকিত ও বিকশিত করা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের লাইব্রেরি উন্নয়নের জন্য আমাদের সকলকে একসাথে কাজ করতে হবে। তিনি আরো বলেন, শিক্ষার গুনগত মান উন্নয়নের জন্য সেকায়েপ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। দেশের ২৫০টি উপজেলার প্রায় ১২ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বইপড়া কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে।

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের মাধ্যমে ৮টি বিভাগীয় শহরে সংগঠক সম্মাননা পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হচ্ছে। সারা দেশে মোট ১১৮৪ জন সেরা সংগঠক সম্মাননা পুরস্কারের জন্য মনোনিত হয়েছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে লাইব্রেরি কার্যক্রম সচল ও নিয়মিত রাখার জন্য বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র কাজ করছে। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের তত্বাবধানে এ কর্মসূচির আওতায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের বই পড়ানোর কাজে সংগঠক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন প্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষক অথবা লাইব্রেরিয়ান। প্রত্যেক বছর লাইব্রেরিয়ানদের কার্যক্রমে গতিশীলতা ও উদ্দীপনা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রকল্প থেকে প্রতিটি উপজেলার ১০% শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের লাইব্রেরিয়ান/সংগঠকদের সম্মাননা পুরস্কার দেয়া হয়।

(এমএ/এএস/মে ২৬, ২০১৭)