স্টাফ রিপোর্টার : ফ্ল্যাট কেনাবেচায় ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হলে আবাসন খাত ধ্বংস হয়ে যাবে বলে জানিয়েছে আবাসন খাতের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)। এতে করে সামগ্রিক অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে সংগঠনটি।

শনিবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে প্রস্তাবিত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট প্রতিক্রিয়ায় এ শঙ্কার কথা জানান রিহ্যাব প্রেসিডেন্ট আলমগীর শামসুল আলামিন। এ সময় সংগঠনটির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনসহ রিহ্যাবের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

প্রস্তাবিত বাজেটে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে নির্মাণ তথা আবাসন খাত উল্লেখ করে রিহ্যাব প্রেসিডেন্ট বলেন, ফ্ল্যাট কেনাবেচায় ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রয়োগ শুরু হলে আবাসন খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বর্তমানে ফ্ল্যাটের ওপর ভ্যাট রয়েছে দেড় থেকে সাড়ে চার শতাংশ। নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর হলে আবাসন খাতের কফিনে শেষ পেরেক মারা সম্পন্ন হবে।

রিহ্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়, নানা কর আরোপ ও সরকারের নীতি সহায়তার অভাবে ক্রমে দেশের আবাসন খাত মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়েছে। সমস্ত গৃহায়ণ খাতের বিক্রয় পরিমাণ প্রায় ৮০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। কর্মসংস্থানের বড় এ খাতটি গত কয়েক বছর ধরে লোকবল ছাঁটাই করছে। উচ্চ রেজিস্ট্রেশন ব্যয়ের ফলে ক্রেতারা রেজিস্ট্রেশনে আগ্রহ হারাচ্ছেন, তাই সরকারের রাজস্ব আয় কমে যাচ্ছে। এই মুহূর্তে যদি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হয়, তবে দেশের অর্থনীতিতে এর একটা বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে শঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে।

রিহ্যাব জানায়, বাজেটে সরকারের পক্ষ ‘হাউজিং লোন’ নামে ২০ হাজার কোটি টাকার রিফিন্যান্সিং করার দাবি জানায়। ঘোষিত প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে এই তহবিল গঠনের কোনো প্রতিফলন নেই। বর্তমানে রেজিস্ট্রেশন ব্যয় ১৪ থেকে ১৬ শতাংশ এর ওপরে হওয়ায় ফ্ল্যাট এবং জমি কেনাবেচা ভয়াবহভাবে কমে গেছে। রিহ্যাবের পক্ষ থেকে সাত শতাংশ করার প্রস্তাব দেয়া হয়। কিন্তু এ দাবি বিবেচনা করা হয়নি। “সেকেন্ডারি মার্কেট” সৃষ্টির সে সুবিধাও বাজেটে রাখা হয়নি।

রিহ্যাব আরও জানায়, নির্মাণ খাতের অন্যতম কাঁচামাল রডে এখন সব মিলিয়ে টনপ্রতি ৯০০ টাকা ভ্যাট দিতে হয়। কিন্তু ১৫ শতাংশ ভ্যাট হলে এক টন রডে ভ্যাট দিতে হবে সাড়ে সাত হাজার টাকা। এ ছাড়া কাঁচা লোহা থেকে রড তৈরির সময় ফেরো ম্যাঙ্গানিজ, ফেরো সিলিকন, ফেরো সিলিকো ম্যাঙ্গানিজসহ বিভিন্ন উপাদান লাগে।

এবারের বাজেটে এই তিনটি পণ্যে আমদানি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ হারে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বসানো হয়েছে। এতে সার্বিকভাবে এসব পণ্য আমদানি খরচ বাড়বে, যা রড তৈরির খরচ আরও বাড়িয়ে দেবে। এছাড়া বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বেড়েছে। এর ওপর ভ্যাট বাড়বে। সব মিলিয়ে রডের দাম প্রতি টন ৯-১০ হাজার টাকা বৃদ্ধির আশঙ্কা কথা জানায় রিহ্যাব।

ভিশন-২০২১ বাস্তবায়ন করতে হলে সবার জন্য আবাসন নিশ্চিত করতে হবে। আর সবার জন্য আবাসন নিশ্চিত করতে হলে এ সংক্রান্ত কিছু আইন অবশ্যই পরিবর্তন এবং সংশোধন করতে হবে। ২০১৩ সালে ৭৬ হাজার কোটি টাকা এবং ২০১৪ সালে ৭২ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে। বর্তমানে যে অবস্থা দাঁড়াচ্ছে তাদের বিদেশে টাকা পাচারের হার আরও বাড়বে বলে রিহ্যাব আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।

তাই সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়, আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ এর ধারা ১৯বি এর যুগোপযোগী সংশোধন করতে হবে। অপ্রদর্শিত অর্থ আবাসন খাতে বিনিয়োগের সুযোগ রাখা হয়েছে। কিন্তু আইনের মধ্যে অনেক মারপ্যাঁচ রয়েছে। সবার জন্য আবাসন সুবিধা নিশ্চিত না করে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তর সম্ভব নয়। সরকার যদি বিষয়টি বিবেচনা করে তবে সমাধান হয়ে যায় বলে জানায় রিহ্যাব।

(ওএস/এসপি/জুন ১৭, ২০১৭)