স্পোর্টস ডেস্ক, ঢাকা : স্বপ্নের সমাধিও ফুটবল বিশ্বকাপ যেমন একটি দলের স্বপ্নপূরণের মঞ্চ আবার সেখানে দেখেন। একটি আসরকে ঘিরে সৃষ্টি হয় আনন্দ-উদযাপনের মহালগ্ন। সেই মহালগ্নকে জাগিয়ে তোলেন কত স্বপ্নের ফেরিওয়ালা। আর ফুটবলপ্রেমীরা জয়-পরাজয়ের স্রোতে ভাসেন। আনন্দ-বেদনার মহাকাব্যিক ফুটবল আসরে কখনও তৈরি হয় নায়ক, আবার নায়কও বনে যেতে পারেন খলনায়ক।

মাঠের লড়াই, ঘাটের লড়াই, বলের লড়াই, গোলের লড়াই, লড়াই জয়ের- এর সবটাই ঘটে প্রতি ম্যাচে। কিন্তু এর বাইরে এক মহালড়াইয়ে ভয়ানক ব্যতিব্যস্ত খেলার প্রাণোচ্ছল সমর্থকরা। তারা শুধু খেলায়ই মাতেন এমনটা নয়। তাদের আরও কত আয়োজন,0 কত প্রস্তুতি। দলের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশে কিংবা অনুপ্রাণিত করতে সুদূর বাংলাদেশ থেকেও প্রিয় দলের জার্সি পরার, পতাকা ওড়ানোর হিড়িকে মাতেন। মাঠে খেলেন নিজ দলের ২২ জন। কিন্তু মাঠের বাইরে খেলছেন, খেলে যাচ্ছেন প্রায় ২শ’ কোটি ভক্ত। সোমবার থেকেই অনেক দলের পরের রাউন্ডে যাওয়া-না যাওয়া বিষয়টি চূড়ান্ত হয়ে যাচ্ছে। ফলে ভক্তরা এখন শেষ ষোলর হিসেবে-নিকেশ মিলাতে ব্যস্ত, ব্যস্ত নিজ দলের হিসেব মিলাতেও।

রাত জেগে খেলা দেখা। পাড়ায় পাড়ায় প্রিয় দলের জার্সি পরে ঘুরে বেড়ানো এখন বাড়তি মর্যাদার। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়াদের ঢল জার্সি বাজারে এখনও কমেনি। কেউ কেউ যাচ্ছে চড়ামূল্যের হাল-ফ্যাশনের শোরুমে। কেউ চষে বেড়াচ্ছেন স্টেডিয়ামপাড়া, কেউ নিজ সাধ্যের ফুটপাতে। দলের বাইরেও অনেকেই চড়া দামে কব্জা করেছেন মেসি-নেইমার-মূলারের জার্সি।

বাজার গবেষক সূত্রে জানা গেছে, পেলে যখন খেলে গিয়েছিলেন তখন জার্সি কেনার চল ছিল না। তবে ১৯৮৬-তে ম্যারাডোনা নায়ক হওয়ার সময় জার্সি কেনা শুরু হয়েছিল। ২০০৬ থেকে তা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে। মিডিয়ার বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে লেখালিখিও জার্সি কেনার প্রতি আগ্রহ বাড়িয়েছে। বিশেষ করে ২০১০ সালে জার্সি কেনার বেজায় ধূম পড়েছে। আগের আসরের তুলনায় এবার বিক্রি দ্বিগুণ হয়েছে। তবে এটা ঠিক দলের পারফরম্যান্সের সঙ্গে বাড়ে বিক্রি। ব্রাজিল বা আর্জেন্টিনার বিক্রি বরাবরই বেশি। তবে প্রথম ম্যাচে ৫ গোল খাওয়ার পর স্পেনের জার্সি আর বিক্রি হচ্ছে না। বরং বেড়েছে নেদারল্যান্ডস এবং জার্মানির জার্সি বিক্রির হিড়িক পড়েছে। মেসি, নেইমারের সঙ্গে লড়াইয়ে নেমে পড়েছেন জার্মানির মুলারও। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর রিয়ালের জার্সি বিক্রি হলেও পতুর্গালে জার্সিতে তিনি অনেক পিছিয়ে। খোঁজ হচ্ছে রবেনের জার্সিরও।

বাংলাদেশের ফুটবলের যত দূরবস্থাই হোক না কোনো সমর্থকরা কিন্তু আধুনিক ফুটবলের সঙ্গে বেজায় পরিচিত। তারা যে শুধু জার্সির খোঁজই করেন বিষয়টি কিন্তু তা নয়। তারা কাগজ-কলম-পরিসংখ্যান খুঁজে দেখছেন নিজ দলের অবস্থান-ঐতিহ্যের কথা। আর এখন ম্যাচ টু ম্যাচ নিয়ে মহাগবেষণায় অতিশয় ব্যস্ত তারা। এক আর্জেন্টাইন ভক্ত সংখ্যাতাত্ত্বিক হিসেব মিলিয়ে দেখছেন ব্রাজিল কিভাবে বাদ যাবে। অনরূপভাবে ব্রাজিলের ভক্তরাও চোখ রাখছেন শত্রুদলের সর্বশেষ অবস্থা।

(ওএস/পি/জুন ২৩,২০১৪)