স্পোর্টস ডেস্ক : মেসি, নেইমার কিংবা রোনালদোর জমাট আলোচনার ফাঁকে এখন আলাদা করে চর্চা চলছে ছোট দলগুলোর পারফরম্যান্স নিয়ে। যেটা এবারের বিশ্বকাপের অভিনবত্ব বলা যেতেই পারে। ফেসবুক, টুইটার থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লাতেও এখন ছোট দলগুলোর উত্থান নিয়ে আলোচনা। ঘানা, ইরান, কোস্টারিকার গোলের পর ইদানীং বেশ শোরগোল শোনা যাচ্ছে, যা এর আগের বিশ্বকাপগুলোতে দেখা যায়নি।

ছোট দল নিয়ে এই উচ্ছ্বাস চলতি বিশ্বকাপের বিভিন্ন গ্রুপের খেলা দেখলেই বোধগম্য হবে। এ পর্যন্ত কোস্টারিকা, বেলজিয়াম ও চিলি নিজেদের গ্রুপে চমকে দিয়েছে। উরুগুয়ে ও ইতালির মতো বিশ্বজয়ী দলকে হারিয়ে গ্রুপ অব ডেথের শীর্ষে কোস্টারিকা। স্পেন, নেদারল্যান্ডসের মতো গ্রুপে থেকে বিশ্বজয়ী স্পেনকে হারিয়ে দ্বিতীয় পর্বের টিকিট কেটে ফেলেছে চিলি। এমনকি ইরানের মতো দেশের সঙ্গেও বেশ কিছুক্ষণ এঁটে উঠতে কষ্ট হয়েছে আর্জেন্টিনার। শেষ পর্যন্ত মেসির গোলে জয় এসেছে। জার্মানিও আটকে গিয়েছে ঘানার কাছে।

এবারের আগে বিশ্বকাপের ১৯টি আসর অনুষ্ঠিত হয়েছে। যাতে বড় দল-ছোট দল সুষ্পট বিভেদ লক্ষ করা যেত। যেখানে তথাকথিত ছোট দলগুলোকে নিয়ে ছেলেখেলা করত বড় দলগুলো। আর এবারের বিশ্বকাপের বড় দলের তকমা লেগে থাকা দলগুলো ছোট দলকে হারাতেও ঘাম ঝরাতে হচ্ছে। ইরানকে আর্জেন্টিনা ইনজুরি টাইমে মেসির অসাধারণ গোলে হারিয়েছে। প্রথম ম্যাচে স্পেনকে ৫-১ গোলে হারানো পরে অস্ট্রেলিয়াকে ৩-২ গোলে হারাতে নেদারল্যান্ডসকে রীতিমতো ঘামতে হয়েছে। কিন্তু বিশ্বকাপের ইতিহাসে বড় দল-ছোট দল খেলায় নানা মজার গল্প রয়েছে। যেমন ১৯৭৪ সালে যুগোস্লাভিয়ার কাছে ৯ গোল খেয়ে নাস্তানাবুদ হয়েছিল জায়রে। ১৯৮২ সালে হাঙ্গেরি এল সালভাদরকে হারিয়ে দিল ১০ গোলে। যেখানে সাত মিনিটে হ্যাটট্রিক করেন লাজলো কিস। ২০০২ সালে জার্মানির কাছে এমনভাবেই হারতে হয় সৌদি আরবকে, ৮-০ গোলে।

কিন্তু এবারের বিশ্বকাপ এখনও পর্যন্ত দেখে মনে হবে, বড় দলের সঙ্গে ছোট দলের এই ব্যবধান যেন কাটতে চলেছে। যেখানে কোনো বড় দলকে হারিয়ে দিচ্ছে, কখনও বড় দল আটকে যাচ্ছে ছোট দলের কাছে। নেদারল্যান্ডস স্পেনকে হারালেও অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ৩-২ করতে ঘাম ছুটেছে রোবেনদের। ২০০৪ সালের ইউরো চ্যাম্পিয়ন গ্রিসকে থামিয়ে দিয়েছে জাপান (০-০)। ইরানও এ পর্যন্ত বেশ ভালো খেলেছে। এক পয়েন্ট পেয়েছে।

শুধু তা-ই নয়, এ পর্যন্ত কোনো ছোট টিমই ৪ বা তার বেশি গোল খায়নি। স্পেন ৫ গোল খেয়েছে নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে। পর্তুগাল ০-৪ গোলে হেরেছে জার্মানির কাছে। এখানে এ কথা না বললেই নয়, স্পেন এবং পর্তুগাল কিন্তু ফিফা র্যাঙ্কিং অনুযায়ী ১ ও ৪ নম্বর দল।

এখন এ প্রশ্ন উঠতেই পারে, ছোট দলগুলো কীভাবে এত উন্নতি করছে? বিশেষজ্ঞরা বিষয়টিকে বিশ্বায়নের সুফল বলতে চাইছেন। যেখানে তথাকথিত বড় দল বা বড় ক্লাবের প্র্যাকটিসের খুঁটিনাটি আর কারও অজানা থাকছে না। ফিফার পরিসংখ্যান অনুযায়ী ফুটবলের বিশ্বায়নে সবচেয়ে বেশি লাভবান দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবলাররা। দিদিয়ের দ্রগবার আইভরিকোস্টের ২৩ জনের মধ্যে ২২ জনই ইউরোপের কোনো না কোনো লিগে খেলেন। ক্যামেরুনের ২১, আলজিরিয়ার ১৯, ঘানা এবং নাইজেরিয়ার ১৮ জন ফুটবলার ইউরোপের বিভিন্ন লিগে খেলেন। উঠে আসছে এশিয়ার দলগুলোও। জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার অনেকেই ইউরোপের লিগে খেলছেন। যার ফল এই বিশ্বকাপে এসব দলের পারফরম্যান্সে দেখা যাচ্ছে।

(ওএস/এইচআর/জুন ২৪, ২০১৪)