শেরপুর প্রতিনিধি : আগামী ২৬ জুন বৃহস্পতিবার শেরপুরের নকলা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ফুটবল বিশ্বকাপ আর বৃষ্টির ঝাপটা এ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণায় বাগড়া দিলেও প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা ছুটে চলেছেন ভোটরদের দ্বারে দ্বারে। তবে সাধারন মানুষের মধ্যে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার খেলা নিয়ে ব্যাপক উচ্ছ্বাস থাকলেও এ ভোট নিয়ে তেমন আলাপ-আলোচনা জমে ওঠেনি।

তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা নতুন মাত্রা পেয়েছে। বিভিন্ন প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা নিজ নিজ ‘টাইম লাইনে’ ভোট চাওয়া সহ গণ সংযোগের ছবি পোষ্ট করে প্রচারনা চালাচ্ছেন।
নকলা উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৯ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। উপজেলা চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ থেকে বর্তমান চেয়ারম্যান শাহ মো. বুরহানকে দলীয় সমর্থন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা আ’লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গোলাম রব্বানী, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শওকত হোসেন ও সাবেক ছাত্র নেতা মনির হোসেন। এদিকে, বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী হয়েছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মাহবুব আলী চৌধুরী ওরফে মনির চৌধুরী। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক জাহিদ হোসেন বাদশা ও ইউনিয়ন বিএনপি নেতা জহিরুল ইসলাম।
ভাইস চেয়ারম্যান পদে দলীয়ভাবে কোন সমর্থন দেওয়া না হলেও আওয়ামী লীগের মো. সারোয়ার আলম তালুকদার ভুট্টো এবং মো. কামরুজ্জামান গেন্দু এবং বিএনপির মো. সামছুল হক ডিলার প্রার্থী হয়েছেন। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদেও আ’লীগের সৈয়দা কুলছুম, হুজেরা খাতুন এবং বিএনপি’র কহিনুর বেগম, লতিফা বেগম ও স্বতন্ত্র লাকি আক্তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। স্থানীয়ভাবে ভোটর ও দলীয় নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে দুই দলের বিদ্রোহী প্রার্থীরাই জয়-পরাজয়ের নিয়ামক হতে পারে। তবে সাধারন ভোটাররা সতর্কতার সাথে জানান, নালিতাবাড়ী উপজেলার মতো নকলাতে বিদ্রোহী প্রার্থীরা আওয়ামী লীগের জন্য কাল হয়ে দাঁড়াতে পারে।
গত উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মিজানুর রহমান মিজানের বিরুদ্ধে নিবাচনে প্রার্থী হয়ে শেষ মুহুর্তের দলীয় সমর্থনে আওয়ামী লীগের শাহ মো. বুরহান বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু এবার দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে তাকে নিয়ে অস্বস্তি দেখা দেয়। দলের ভেতর থেকে তৃণমুল ভোটের মাধ্যমে প্রার্থী নির্বাচনের দাবী ওঠে। কিন্তু দলের জেলা নেতবৃন্দ কোন তৃণমুল বেঠক না ডেকে এবারও বুরহানকে দলীয় সমর্থন দেওয়ায় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গোলাম রব্বানী, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শওকত হোসেন ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মনির হোসেন নিজেদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার না করে বহাল রাখেন। অন্যদিকে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে আ’লীগ দলীয় সমর্থন দিলেও ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী সমর্থন না দেওয়ায় সাধারন নেতাকর্মীদের মধ্যে অস্বস্তি রয়েই গেছে। যার প্রভাব পড়তে পারে ভোটের মাঠে।
এদিকে, বিএনপিরও একক প্রার্থী সমর্থন নিয়ে সংকটের সৃষ্টি হয়। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মনির চৌধুরীর প্রতি বেশীর ভাগ নেতাকর্মীর সমর্থন থাকায় তাকেই দলীয় প্রার্থী করা হয়। কিন্তু নির্বাচনের মাঠে রয়ে যান জাহিদ হোসেন বাদশা ও জহিরুল ইসলাম। বিএনপি নেতাকর্মীরা আশা করছেন, তাদের দলের বিদ্রোহী প্রার্থীরা সমস্যা হবেনা। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকার কারণে ফলাফল তাদের অনুকুলেই আসবে।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী শাহ মো. বুরহান বলেন, আমি নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। দলীয় প্রার্থী হিসেবে নেতাকর্মীরা তার পক্ষেই রয়েছেন। তাছাড়া বিগত দিনের কাজকর্মের মুল্যায়ন করে ভোটাররা তাকেই বেছে নেবেন। গোলাম রব্বানী বলেন, সাধারন মানুষ নতুন মুখ দেখতে চায়, পরিবর্তন চায়। তৃণমুলের নেতাকর্মীদের মুল্যায়ন না করে বুরহানকে এবারও দলীয় প্রার্থী করা হয়েছে। যে কারণে তৃণমুলের সমর্থন আমার দিকেই রয়েছে। এজন্য বিজয়ের আমি যথেষ্ট আশাবাদী। বিএনপি’র মাহবুব আলী ওরফে মনির চৌধুরী বলেন, বিজয় এবার আমাদেরই হবে। নেতাকর্মীরা সবাই মিলে একসাথে কাজ করছে। জাহিদ হোসেন বাদশা নিজের বিজয়ের ব্যাপারে আশাবদ ব্যক্ত করে বলেন, সাধারন ভোটারদের সমর্থনই আমার ভরসা।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, নকলা উপজেলা নির্বাচনে ১ পৌরসভা ও ৯ টি ইউনিয়নের ৬৩ টি কেন্দ্রের ২৮৩ টি বুথে ১ লাখ ৩২ হাজার ৬০৪ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। ইতোমধ্যে নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী ৯৮২ জন কর্মকর্তার প্রশিক্ষণও শেষ হয়েছে।
(এইচবি/এএস/জুন ২৪, ২০১৪)