লিটন শরীফ, বড়লেখা (মৌলভীবাজার) : মৌলভীবাজারের বড়লেখা-কুলাউড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের অন্তত ১০টি স্থানে বন্যার পানি উঠেছে। এতে যানচলাচল বিঘ্নিত হওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী কয়েক লাখ মানুষ। জরুরি প্রয়োজনে ট্রাক, ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলারের মাধ্যমে স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া দিয়ে চলতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে। প্রায় দেড় মাস ধরে এই দুর্ভোগ চলছে।     

স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বন্যায় গত দেড় মাস থেকে বড়লেখা-কুলাউড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের জুড়ী উপজেলা কমপ্লেক্সের সম্মুখ, চৌমোহনী, উত্তর জাঙ্গীরাই, বাছিরপুর, পশ্চিম হাতলিয়ার ৪টি স্থানসহ সড়কের ১০ স্থান তিন-চার ফুট পানিতে তলিয়ে রয়েছে। ঝুঁকি নিয়ে ট্রাক, ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলারসহ কিছু যানবাহন চলাচল করছে। কিন্তু এতে স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া দিতে হচ্ছে। অস্বাভাবিক গাড়িভাড়ায় স্বল্প আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে।

সরেজমিনে বড়লেখা-কুলাউড়া আঞ্চলিক সড়কের পশ্চিম হাতলিয়া এলাকায় গেলে দেখা যায়, দীর্ঘদিন থেকে বন্যার পানি থাকায় সড়কে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। সড়ক পারাপারের জন্য স্থানীয়দের উদ্যোগে একটি স্থানে বাঁশের সাঁকো তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। পানি আর বড় বড় গর্তের মধ্যে সড়কে চলতে গিয়ে বিকল হয়ে পড়ে অনেক যানবাহন। এ সময় অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে দেখা যায় যাত্রীদের।

স্থানীয় বাসিন্দা সিকন্দর আলী (৫৫) বলেন, ‘দেড় মাস ধরে রাস্তায় পানি। হুরুত্বা-মুরতা (ছেলে-মেয়ে) টাইমমত (সময় মত) স্কুলে যাইতা পাররা না। এছাড়া গাড়ির বাড়া (ভাড়া) ডাবুলে (ডাবল) তিন ডাবুল। হাতলিঘাট থাকি কুলাউড়া যাইতে এখন সিএনজিতে বাড়া লাগে ১০০ টাকা। যেখানে আগে বাড়া দিতে অইত ৪০ টাকা।’

ট্রাক্টর দিয়ে আসা যাত্রী শামীম আহমদ জানান, পানির কারণে রাস্তায় ভাড়া এখন তিন-চারগুণ বেশি। জরুরী কাজে না যেয়ে পারা যাচ্ছে না। ৫০ টাকার ভাড়ার ১২০ থেকে ১৩০ টাকা দিতে হচ্ছে। এক মাস ধরে তারা এভাবেই চলছেন। একই কথা বললেন, ‘কাঁঠালতলী গ্রামের বাসিন্দা সরজুন বেগম।

হাতলিঘাট এলাকায় কথা তাঁর সাথে। তিনি জানালেন, ‘সকালে কাঁঠালতলী থাকি হাতলিঘাট মেয়ের বাড়িত গেছলাম। সিএনজি ড্রাইবার আমার কাছ থাকি ৩০ টাকার ভাড়ায় ১০০ টাকা রাখছে।

আলী আজাদ নামের এক মোটর সাইকেল চালক জানান, চারটি স্থানে রাস্তায় পানির কারণে মোটরসাইকেল নৌকায় পার করতে হয়েছে। ৫০ টাকা করে মোটরসাইকেল পার করতে দিতে হয়েছে ২০০ টাকা। খুব কষ্ট হচ্ছে। রাস্তাটি উঁচু করে জরুরী ভিত্তিতে মেরামত করা দরকার।

সওজ মৌলভীবাজার কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মিন্টু রঞ্জন দেবনাথ মঙ্গলবার বলেন, ‘কুলাউড়া-বড়লেখা সড়কের ৩ কিলোমিটার জায়গার ১০টি স্থান পানিতে ডুবে যায়। এক মাস থেকে রাস্তায় পানি। এখনও ৮টি স্থানে পানি রয়েছে। কতটুকু ডেমেজ হয়েছে তা নির্ধারণ করা হয়েছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চাহিদা দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ আসলে টেন্ডার করে কাজ হবে। এর আগ পর্যন্ত ইট-বালু ফেলে যানবাহন চলাচলের উপযোগী করার ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

(এলএস/এসপি/জুলাই ১৯, ২০১৭)