টাঙ্গাইল প্রতিনিধি : টাঙ্গাইলের ভুয়াপুরে বন্যা ও যমুনার ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা ১৫ হাজার। অথচ সরকারি সহায়তা বলতে ত্রাণ মিলেছে মাত্র ২০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৩০ হাজার টাকা। অবশেষে মঙ্গলবার এ নামমাত্র ত্রাণ নিয়ে মাঠে নেমেছে স্থানীয় প্রশাসন। আর বিতরণকৃত সামান্য ত্রাণ পেয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

অর্জুনা ইউনিয়নের তালতলা গ্রামের ছমেদ আলি (৭০) বলেন, সারাদিন বসাইয়া রাইখ্যা ১০ কেজি চাইল; এইডা আমাগর লগে মসকারা (ঠাট্টা) ছাড়া আর কিছুই না।

সরেজমিনে ও উপজেলা প্রকল্পবাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিস সূত্রে জানা যায়, বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই উপজেলার অর্জুনা ও গাবসারা ইউনিয়নের বিস্তৃর্ণ এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়। এতে অর্জুনা ইউনিয়নে ৬০৫টি পরিবার ও গাবসারা ইউনিয়নে ৬৬৯টি পরিবার বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হয়।

অপরদিকে যমুনায় বন্যা দেখা দেয়ায় অর্জুনা ইউনিয়নে ৩ হাজার ৪৫২টি পরিবার, গাবসারা ইউনিয়নে ৫ হাজার ২০০ পরিবার, নিকরাইল ইউনিয়নে প্রায় ৪ হাজার পরিবার ও গোবিন্দাসী ইউনিয়নের ১ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ভাঙন ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো মাসাধিকাল যাবৎ মানবেতর জীবনযাপন করলেও এ অসহায় পরিবারগুলোর সাহায্যে সরকারি-বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসেনি। স্থানীয় প্রশাসন মাঝে মাঝে খোঁজ-খবর নিলেও তাদের ভাগ্যে জোটেনি কোনো সাহায্য সহায়তা।

দীর্ঘদিন পর জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ভুয়াপুরের চারটি ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ১৫ হাজার পরিবারের জন্য ২০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৩০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। আর স্থানীয় প্রশাসন থেকে অর্জুনা ও গাবসারা ইউনিয়নে ৯ মেট্রিক টন এবং নিকরাইল ইউনিয়নে ২ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করেছে।

অবশেষে মঙ্গলবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন অর্জুনা ইউনিয়নের তাড়াই, কুঠিবয়রা, অর্জুনা, জগৎপুরা, ভরুয়া, গোবিন্দপুর, তালতলা ও রামাইলে পরিবার প্রতি ১০ কেজি হারে বরাদ্দকৃত ৯ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করেন। বিতরণকৃত সামান্য চাল পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অভাবি মানুষগুলোর যেন ক্ষোভের শেষ নেই।

যমুনার ভাঙনে বসতভিটা হারানো তাড়াই গ্রামের মজিবর (৬৫) দুঃখ করে বলেন, ঘর-বাড়ি ভাঙার একমাস পর ১০ কেজি চাল পেলাম। এ দিয়া ক্ষিদা নিবারণ করমু নাকি ঘর বানামু।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, ভাঙনে ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য জেলা প্রশাসক স্যারের নিকট থেকে জিআর হিসেবে ২০ মেট্রিক টন চাল পেয়েছি আর নগদ ৩০ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক খান মো. নুরুল আমিন বলেন, ভুয়াপুরে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের ব্যাপারে নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখছি। বিষয়টি ত্রাণ মন্ত্রণালয়কেও অবহিত করেছি। সামান্য কিছু চাল ও নগদ অর্থ বরাদ্দ দিয়েছি। ইউএনও এবং পিআইওকে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছি। তালিকা পেলেই আরও বরাদ্দ দেয়া হবে।

(ওএস/এসপি/জুলাই ২০, ২০১৭)