লালমনিরহাট প্রতিনিধি : ‘বন্যায় আমরা ভারতের জারি ধরলা চর থেকে জীবন নিয়ে বাংলাদেশে এসেছি। অনেক পরিবার ভারতে ঢুকতে পেরেছে। কিন্তু আমরা প্রায় পাঁচশ মানুষ আটকা ছিলাম। ভেলায় ভাসতে ভাসতে বাংলাদেশ সীমান্তের মোগলহাট ও দুর্গাপুর ইউনিয়নের প্রবেশ করেছি। বিজিবির লোকজন যদি আমাদের ঢুকতে না দিতো তাহলে বন্যার পানিতে পরিবার নিয়ে ডুবে মরতাম।’

বাংলাদেশের লালমনিরহাটে আশ্রয় নেয়া ভারতীয় নাগরিক বছির উদ্দিন (৭৫) সোমবার বিকেলে এ কথাগুলো বলেন।

বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, ধরলার ভয়াবহ বন্যা থেকে জীবন বাঁচাতে ভারতীয় দুই গ্রামের প্রায় আট শতাধিক ভারতীয় নারী-পুরুষ ও শিশু বাংলাদেশের লালমনিরহাট জেলার মোগলহাট ও দুর্গাপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে আশ্রয় নিয়েছে। গত শনিবার সন্ধ্যায় এসব ভারতীয় নাগরিক লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়ন ও আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের একাধিক গ্রামে স্থানীয় লোকজনের বাড়ি, ফাঁকা জায়গা ও পাকা রাস্তার ওপর আশ্রয় নিয়েছে। ভারতীয়দের মধ্যে অনেকের সঙ্গে বাংলাদেশিদের পূর্ব পরিচয় থাকার সুবাধেও আশ্রয় পেয়েছেন তারা। বন্যার পানি চলে গেলে তারা নিজ ঠিকানায় ফিরবেন।

সোমবার বিকেলে সরেজমিনে জেলার মোগলহাট ও দুর্গাপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ভারতীয় এসব বন্যায় দুর্গতরা বাংলাদেশি স্থানীয় লোকজনের বাড়িতে উঠেছেন। কেউ কেউ পাকা রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছেন। তারা ভারতের জারি ধরলা চরে বসবাস করেন ।

ভারতের জারি ধরলা চরে থেকে আসা অন্তঃস্বত্ত্বা আর্জিনা খাতুন (২৫) ৩ মেয়ে ও ১ ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে স্বামী ইকুল হক হ (৪৪) দুর্গাপুরের কুমারপাড়ায় অবস্থান নিয়েছেন। তার প্রতিবেশী মেহের বানীও (২৩) এসেছেন। মেহের বানীর স্বামী দিল্লিতে একটি সেলাই কারখানার শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। বাংলাদেশে তাদের কোনো অসুবিধা হয়নি।

বাংলাদেশি ফজলুল হকের বাড়িতে আশ্রয় নেয়া ছামিদুল হক (৩৫) বলেন, বিজিবি ও স্থানীয় লোকজনকে ধন্যবাদ জানাই। বাংলাদেশে প্রবেশের সুযোগ দেয়া না হলে এসব আমাদেরকে ধরলার ভয়াবহ বন্যার পানিতে ভেসে মরতে হত।

আশ্রয়দাতা ফজলুল হক ও তার স্ত্রী গোলে খাতুন বলেন, ভারতের জারি ধরলা চরের বাসিন্দা বছির উদ্দিন (৭২) ও তার স্ত্রী আম্বিয়া খাতুন (৬৩) নিরুপায় হয়ে একটু আশ্রয়ের জন্য আমাদের বাড়ি অবস্থান করছেন ।

লালমনিরহাট উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, লালমনিরহাট-১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পরিচালক গোলাম মোর্শেদকে অনুরোধ করার পর মানবিক দিক বিবেচনা করে বানভাসী ভারতীয় নাগরিকদের প্রবেশের অনুমতি দেন তিনি। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটলেই ভারতীয়রা নিজ দেশে ফিরে যাবেন।

লালমনিরহাট-১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পরিচালক লে. কর্নেল গোলাম মোর্শেদ বলেন, প্রায় পাঁচ শতাধিকের মতো ভারতীয় নারী-শিশু ও পুরুষ বাংলাদেশে এসেছে। মানবিক দিক বিবেচনা করে তাদেরকে প্রবেশের সুযোগ দেয়া হয়েছে। তাদের খোঁজখবর রাখছেন বিজিবির সদস্যরা।

(ওএস/এসপি/আগস্ট ১৫, ২০১৭)