E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মেঘনা নদীতে ডুবে যুবকের মৃত্যু

২০১৭ নভেম্বর ০৭ ১৬:৫৫:৫৩
মেঘনা নদীতে ডুবে যুবকের মৃত্যু

গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি : ময়মনসিংহের গৌরীপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ভৈরব হয়ে ব্রা‏হ্মণবাড়িয়া কাজে যাওয়ার পথে টিকিটের টাকা বাঁচাতে ট্রেনের ইঞ্জিনে উঠে ভৈরব মেঘনা নদী সেতু অতিক্রম করার সময় চলন্ত ট্রেনের ইঞ্জিন থেকে হাত ফসকে মেঘনা নদীতে পড়ে নিখোঁজ হয় মোজাম্মেল হক( ২৫)। ভৈরব থেকে ব্রাহ্মনবাড়িয়া স্টেশন পর্যন্ত ট্রেনের টিকিটের ভাড়া ৪০ টাকা। কিন্তু চট্রলা ট্রেনের চালক ট্রেনযাত্রী মোজাম্মেল হককে বিনা টিকিটে ১০টাকার বিনিময়ে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ইঞ্জিনে তোলে। আর সেটাই মৃত্যুর কারণ হয়ে দাড়ায় মোজাম্মেলের জন্য। তাঁর মৃত্যুর সাথে মৃত্যু ঘটে একটি পরিবারের স্বপ্নের।

তবে স্থানীয়রা জানায়, ট্রেনের কতিপয় অসাধু ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীর আর্থিক লাভবানের জন্য ছাদ ও ইঞ্জিনে যাত্রী উঠায়। আর এই বিপদজনক ভাবে যাতায়াত করতে গিয়ে প্রতিবছর মোজাম্মেলের মতো অনেকই প্রাণ হারায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার অচিন্তপুর ইউনিয়নের চৈয়ারকান্দা গ্রামের আক্তার হোসেনের ছেলে মোজাম্মেল হক দুই ভাই দুই বোনের মধ্যে দ্বিতীয়। বিয়ে করেছেন একই উপজেলার মাওহা ইউনিয়নের শিমু আক্তারকে। দাম্পত্য জীবনে সে এক সন্তানের জনক। পারিবারিক অভাব-অনটনের কারণে সংসারে তাদের টানাপড়েন ছিলো। তাই দিনমজুরের কাজের উদ্দেশ্যে গ্রামের আরো চার বাসিন্দা সালাম, কামাল, রুহুল আমিন ও সেকান্দরকে নিয়ে গত বৃহস্পতিবার ব্রা‏হ্মণবাড়িয়া রওনা দেয় মোজাম্মেল। গৌরীপুর স্টেশন থেকে ট্রেনে চড়ে ভৈরব যান তারা। এরপর ভৈরব স্টেশন থেকে চট্রলা ট্রেনে চড়ে ব্রা‏হ্মণবাড়িয়া যাওয়ার পথে চলন্ত ট্রেনের ইঞ্জিন থেকে মেঘনা নদীতে পড়ে নিখোঁজ হন মোজাম্মেল। অনেক খোঁজাখুঁজির করে স্বজনরা তিনদিন পর গত রবিবার সকালে মোজাম্মেলের অর্ধগলিত ভাসমান লাশ উদ্ধার করে নরসিংদির রায়পুরার মধ্যেরচর এলাকা থেকে। রোববার রাতে মোজাম্মেলের লাশ নিজ গ্রামে নিয়ে এসে দাফন করা হয়। এদিকে লাশ বাড়িতে নিয়ে আসার পর স্বজনদের আজাহারিতে ভারি হয়ে উঠে বাড়ির পরিবেশ। মোজাম্মেলের অন্তসত্ত্বা স্ত্রী শিমু আক্তার স্বামীর শোকে বার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। ছেলের শোকে তার মাও ছিলেন পাগল প্রায়।

মোজাম্মেলের স্ত্রী শিমু আক্তার জানায়, বাড়ি থেইক্যা বের হওয়ার স্বামী ছেলেডারে কোলে লইয়্যা কইতাছিলো এইবার বাবা বাড়িত আওয়ার সময় তোমার লেইগ্যা নয়া শীতের কাপড় নিয়ে আমু। তোমার মায়ের লেইগ্যাও নয়া শাড়ি আনমু। কিন্তু স্বামী তো আর শাড়ি লইয়্যা আইলো না। মেঘনায় আমার সব কাইর‌্যা নিলো।

মোজাম্মেলের সহযাত্রী সালাম বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে মোজাম্মেল সহ আমরা ৫জন ব্রা‏হ্মণবাড়িয়া যাওয়ার উদ্দেশ্যে গৌরীপুর স্টেশন থেকে লোকাল ট্রেনের টিকিট করে ভৈরব স্টেশন আসি। পরে ট্রেন বদল করে ব্রা‏হ্মণবাড়িয়া যাওয়ার পথে চট্রলা ট্রেনের চালক বলে ব্রা‏হ্মণবাড়িয়ার ভাড়া চলিøশ টাকা, ইঞ্জিলে উঠে গেলে দশ টাকা করে দিলেই হবে। টাকা বাঁচাতে আমরা সবাই ইঞ্জিনে উঠে বসি। পড়ে ভৈরব সেতু পাড় হওয়ার সময় মোজাম্মেল আমাদের চোখের সামেনেই হাত ফসকে মেঘনা নদীতে পড়ে যায়।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, রেলওয়ে আইন অনুযায়ী ট্রেনের ছাদে ও ইঞ্জিনে যাত্রী ভ্রমণ নিষিদ্ধ। তারপরও ট্রেনের কতিপয় অসাধু লোকজন আার্থিক সুবিধা নেওয়ার জন্য ছাদে ও ইঞ্জিনে যাত্রী তোলে। মোজাম্মেলের এই মৃত্যুর জন্য ট্রেনের চালকও দায়ী আছে।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ঢাকা বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপকের সরকারি মোবাইল নাম্বার (০১৭১১-৫০৬১৩৭) নাম্বারে একাধিকবার যোগাযোগ চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।

(এসআইএম/এসপি/নভেম্বর ০৭, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

০২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test