E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কালিগঞ্জে সাবেক চেয়ারম্যানসহ ২৭ জনের নামে মামলা

২০১৭ নভেম্বর ১৮ ১৬:৪৮:৩৬
কালিগঞ্জে সাবেক চেয়ারম্যানসহ ২৭ জনের নামে মামলা

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : নকশা করে শ্বশুর বিক্রি করার সময় দলিলে সাক্ষ্য হয়েছেন স্বামী পরিতোষ মণ্ডল ও ইউপি চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক গাইন। শ্বশুরের মৃত্যুর পর আবার একই জমি নকশা করে বিক্রি করেছেন স্বামী। এরপরও ওই জমি নিজের দাবি করে তাতে নাটকীয় ভাঙচুর ও মারপিটের ঘটনা দেখিয়ে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফকে প্রধান আসামী করে ২৭জনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা দেওয়ার ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, কালিগঞ্জ উপজেলার চম্পাফুল গ্রামের হিমনাথ মণ্ডল ২০০৯ সালের ২০ আগষ্ট আশাশুনি উপজেলার গোদাড়া গ্রামের আমিনউদ্দিন সরদারের চার ছেলের কাছে রেজিষ্ট্রি দলিল মুলে চম্পাফুল মৗজায় ডিপি ৪৪১ খতিয়ানের ৩৩ ও ৩৪ দাগে এক একর ৫৮ শতকের মধ্যে সোয়া ১০ শতক জমি বিক্রি করেন। ওই জমিতে সনাক্তকারি হিসেবে চম্পাফুল ইউপি চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক গাইন ও সাক্ষী হিসেবে হিমনাথ মণ্ডলের ছেলে পরিতোষ মণ্ডল সাক্ষর করেন। নকশা অনুযায়ি ওই জমির মধ্যে কালিবাড়ি বাজারে রাস্তার ধারে পাঁচটি দোকান ঘরসহ দু’ শতক জমি রয়েছে।

সূত্রটি আরো জানায়, বাবার মৃত্যুর পর পরিতোষ মণ্ডল চলতি বছরের পহেলা মার্চ চম্পাফুল ইউপি চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক গাইনের ছেলে আশীকুল গাইন, আরিফুল গাইন, ইউপি সদস্য আব্দুল কায়ুম ও গ্রাম ডাঃ আশোক রায়ের কাছে একই দাগে কালিবাড়ি বাজারে বাবার বিক্রি করা (নকশা অনুযায়ি) দু’ শতক জমি আবারো বিক্রি করেন। বন্টননামা না থাকায় আমিনউদ্দিন সরদারের ছেলে সাবেক ইউপি সদস্য রেজাউল ইসলামসহ চার ছেলের কেনা কালিবাড়ি বাজারের দোকানঘরসহ দু’ শতক জমি চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক গাইন জবরদখল করার চেষ্টা করে আসছিলেন। একপর্যায়ে গত ২৭ এপ্রিল রেজাউল ইসলাম বাদি হয়ে কালিগঞ্জ সহকারি জজ আদালতে দেওয়ানী মিস-৩৭/১৭ নং মামলা(আমানত) করেন।

সম্প্রতি তারা চারটি দোকান ঘর ভাড়া দিয়ে একটিতে তানভির হোসেন চাল, কুড়া ও তুষের ব্যবসা করে আসছিলো। চেয়ারম্যান মোজাম্মেলহকসহ আটজন জনপ্রতিনিধি দূর্ণীতির মামলায় জামিনে মুক্তি পেয়ে তাদের সংবর্ধনা প্রদানকারি মোটর সাইকেল বহরে থাকা লোকজন গত ১৩ নভেম্বর রাত সাড়ে সাতটার দিকে কালিবাড়ি বাজারে এসে হামলা চালিয়ে রেজাউল ইসলামদের পাঁচটি দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট করে। হামলার ঘটনায় রেজাউল ইসলামসহ চারজন জখম হন। পরে কালিবাড়ি বাজারের পাশে দীঘির ধারে তাদের রেজাউল ইসলামের মালিকানাধীন বাবলা ফার্মেষীতে ভাঙচুর চালানো হয়।

এ ঘটনায় নজরুল ইসলাম বাদি হয়ে চম্পাফুল ইউপি চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হকসহ ৪৫ জনের নাম উল্লেখ করে ১৪ নভেম্বর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। বাবলা ফার্মেষীতে হামলার সময় হামলাকারি ঘুষুড়ি গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে ঢাকার মহম্মদপুরের স্টার্ট কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র ইমন (২০) আঘাতপ্রাপ্ত হন। তাকে রাতেই কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। আহত তানভির ও শাহীনুরকে আশাশুনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেভর্তি করা হয়।

এদিকে চম্পাফুল গ্রামের পরিতোষ মণ্ডলের স্ত্রী সুমিত্রা মণ্ডল বাদি হয়ে ১৫ নভেম্বর কালিগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফকে প্রধান আসামী করে আরো ২৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। মামলায় শ্বশুর ও স্বামীর দু’বার বিক্রি করা কালিবাড়ি বাজারের জমি তার নামীয় বলে উল্লেখ করা হয়। ওই জমিতে ঘর নির্মাণের সময় ১৩ নভেম্বর রাত সাড়ে সাতটার দিকে আব্দুল লতিফ ও রেজাউল ইসলামসহ ২৭জন তাদের উপর হামলা চালায় বলে উল্লেখ করা হয়। হামলায় তিনিসহ ইমন ও তার চাচা এন্তাজুল ইসলাম আহত হলে তাদেরকে কালিগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। যদিও কালিগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সুমিত্রা ও এন্তাজুলের ভর্তির বা প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণের কোন আলামত খুঁজে পাওয়া যায়নি।

তবে কালিগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন ইমন জানান, ১৩ নভেম্বর বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সাতক্ষীরা কারাগার থেকে বের হওয়া চম্পাফুল ইউপি চেয়ারম্যান ও জনপ্রতিনিধিদের অভ্যর্থনা জানাতে যান। তাদের সঙ্গে কমপক্ষে ২০০টি মোটর সাইকেলের র‌্যালি ছিল। র‌্যালিটি কালিবাড়ি বাজারে গেলে তিনিসহ সঙ্গীয় লোকজন রেজাউল মেম্বরদের দোকান পাটে হামলা চালান। দ্বিতীয় দফায় দীঘির ধারে বাবলা ফার্মেষীতে ভাঙচুরের সময় প্রতিপক্ষের লোকজনের হামলায় তিনিও আহত হন।

জানতে চাইল সুমিত্রা মণ্ডললের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে তার স্বামী পরিতোষ মণ্ডল জানান, তার স্বত্ব নেই এমন দেড় বিঘা অতিরিক্ত জমি বিক্রি করেছেন। সাবেক ইউপি সদস্য রেজাউল ইসলামদের কাছে বিক্রি করা জমিতে তিনিও চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক গাইন সাক্ষর করেছেন স্বীকার করেই বলেন, বাবা মারা যাওয়ার পর তিনি মোজাম্মেল হক গাইনের দু’ ছেলেসহ চার জনের কাছে বাজারের দু’ শতক জমি বিক্রি করেছেন। এরপরও তার স্ত্রী সুমিত্রা কিভাবে একই জমি দাবি করছেন, হামলা হয়নি অথচ মামলা করেছেন এমনসব প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন ওসব আপনি বুঝবেন না। পরে জানাবো।

কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবীর দত্ত জানান, মোজাম্মেল হক গাইনকে জড়িয়ে ও আব্দুল লতিফকে জড়িয়ে যে দু]টি মামলা হয়েছে তা রাজনৈতিক। কোন পক্ষের আসামী ধরা হচ্ছে না। ইমন প্রতিপক্ষ রেজাউল মেম্বরদের লোকজনের হাতে আহত হওয়ায় সুমিত্রা মণ্ডলের দায়েরকৃত অভিযোগটি মামলা হিসেবে নেওয়া হয়েছে। জমি নিয়ে আপোষ না হলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


(আরকে/এসপি/নভেম্বর ১৮, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

১০ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test