E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

হালুয়াঘাটের ওসি-ইউপি চেয়ারম্যানসহ ছয় জনের নামে মিথ্যা মামলা

২০১৭ ডিসেম্বর ২৯ ১৮:২৫:৫৮
হালুয়াঘাটের ওসি-ইউপি চেয়ারম্যানসহ ছয় জনের নামে মিথ্যা মামলা

হালুয়াঘাট (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি : ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট থানার ওসি কামরুল ইসলাম মিঞা ও আওয়ামীলীগ মনোনীত দুই বারের ধুরাইল ইউপি চেয়ারম্যান ওয়ারেছ উদ্দিন সুমনসহ ছয় জনের নামে মিথ্যা মামলা দায়েরের কারণে এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সন্মানি ব্যক্তিদের সামাজিক ভাবে হেয়পতিপন্ন করার উদ্যেশ্যে একটি কুচক্রী মহলের যোগসাজসে মিথ্যা মামলাটি দায়ের করেছেন বলে ভুক্তভোগী ও স্থানীয়রা অভিযোগ তোলেন।

জানা যায়, ২১ ডিসেম্বর হালুয়াঘাট থানার ওসি কামরুল ইসলাম মিঞাসহ ৬ জনকে আসামী করে আদালতে ৫ লক্ষ টাকা চাঁদাদাবী ও থানা হাজতে উলঙ্গ করে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের করেন উপজেলার পূর্ব পাবিয়াজুড়ি গ্রামের আজগর আলীর স্ত্রী গরু চোরাই চক্রের গড মাদার বিতর্কিত মহিলা ঝর্ণা (৪০)। বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) দুপুরে ৫নং আমলী আদালতের বিচারক হাফিজ আল আসাদ অভিযোগটি আমলে নিয়ে জেলা পুলিশ সুপারকে থানার ওসিসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন ১৫ দিনের মধ্যে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

ঘটনা সূত্রে জানা যায়, উপজেলার চকমোকামিয়া গ্রামের আইনল হক এবং তার চাচা হাতেম আলীর একটি ষাঁড় ও একটি বকনা গরু ৯ আগষ্ট দিবাগত রাতে নিজ বাড়ি থেকে চুরি হয়। চুরি হওয়া গরুগুলি খোজতে গিয়ে আইনল হক শেরপুর জেলার নকলা থানা এলাকা থেকে হালুয়াঘাট উপজেলার করুয়াপাড়া গ্রামের কামরুজ্জামানকে তার চুরি যাওয়া গরুটিসহ আটক করেন। আটককৃত কামরুজ্জামানকে চুরি যাওয়া গরুটিসহ হালুয়াঘাট থানায় আনার পর সে জানায় ঝর্ণা গরুটি তার নিকট বিক্রি করার জন্য দিয়ে ছিলেন।

উক্ত গরুটিকে ঝর্ণা নিজের গরু বলে দাবী করেন। দুই জনের দাবীর বিষয়ে স্থানীয় ব্যক্তিবর্গসহ থানা পুলিশ গরুটির প্রকৃত মালিক নির্ধারণের চেষ্টায় থাকা অবস্থায় গত ১২ আগষ্ট বিকালে আইনল হকের চাচা হাতেমের চুরি যাওয়া গরুটি হাতেম তার স্ত্রী খুদেজা এবং বোন আসতারা বেগম পূর্ব পাবিয়াজুড়ির ঝর্ণার নিজ বাড়ির গোয়াল ঘরে দেখতে পায়। পরে স্থানীয় ব্যক্তিসহ চারজন চৌকিদার গরুটি উদ্বার করে । পরবর্তিত্বে চুরি যাওয়া গরুটি ঝর্ণার বাড়ি থেকে উদ্বার হওয়ার কারণে হাতেম আলী বাদী হয়ে উপজেলার পূর্ব পাবিয়াজুড়ি গ্রামের আজগর আলীর স্ত্রী ঝর্ণাসহ চোরাই সিন্ডিকেট চক্রের ১১ জন সদস্যের নামে হালুয়াঘাট থানায় মামলা দায়ের করেন। যার নং-৮।

হালুয়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম মিঞা সঙ্গীয়ফোর্স নিয়ে গত ১২ আগষ্ট শনিবার সন্ধায় ঝর্নার নিজ বাড়ি থেকে অভিযান চালিয়ে ৫ টি চোরাই গরুসহ তাকে আটক করেন। ঝর্ণাসহ চোরাই সিন্ডিকেট চক্রের অন্যান্য সদস্যরা হলেন, হালুয়াঘাট্ উপজেলার ধারা ইউনিয়নের করুয়াপাড়া গ্রামের কামরুজ্জামান (৩৭),ধুরাইল ইউনিয়নের ধরাবন্নি গ্রামের কফিল উদ্দিন(৪০), আয়েশা বেগম (৩৫), হাকিম (৫৫), ও ফুলপুর উপজেলার ধনারভিটা গ্রামের সোহেল (২৫), জহুরুল (৩০), রাকিব (২৩), রোবেল (২৭), নজরুল (৪৫), জাকারিয়া (২৫)।

ঝর্ণা গরুসহ আটকের খবর পেয়ে চুরি হওয়া গরুর মালিকরা থানায় এসে ভিড় করতে থাকে। সে কখনো নিজেকে ডিবি পুলিশের সোর্স দাবী করে আবার কখনো পুলিশের বড় অফিসারদের সাথে সখ্যতা রয়েছে এমন ঘোষনা দিয়ে এলাকার নিরীহ মানুষকে মামলা মোকাদ্দমাসহ বিভিন্ন ভাবে হয়রানী করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। নানা অপকর্মের মূলহোতা এই ঝর্ণা বেগম। ডিবি পুলিশের সোর্স পরিচয় দিয়ে গ্রামের সাধারণ মানুষদেরকে মাদক দিয়ে বিভিন্ন ভাবে হয়রানীর শিকার করেছেন তিনি। মিথ্যা কথার ফুলঝুড়ি দিয়ে সারাক্ষণ প্রসাশনের ছত্রছায়ায় থেকে অপরাধ মূলক কর্মকান্ড করাই ছিল তার নেশা ও পেশা। তার ভয়ে এলাকার কোন ব্যক্তি মূখ খোলার সাহস ছিলনা।

অতঃপর ঝর্ণার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত তিনটি গরুচুরি মামলার তৎকালীন তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই ছানোয়ার হোসেন,এসআই দেলোয়ার হোসেন ও এসআই প্রদীপ কুমার রায় আদালতে রিমান্ড আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২১ আগষ্ট ময়মনসিংহ বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্টেট্র ৫নং আমলী আদালত উভয়কে এক দিনের রিমান্ড মঞ্চুর করেন। ২৩ আগষ্ট অপরাহ্নে হালুয়াঘাট থানা পুলিশ ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাগণ জানিয়ে ছিলেন, উক্ত ব্যক্তিদের নামে তিনটি গরুচুরির মামলা রয়েছে এ ঘটনায় ঝর্ণা,কামরুজ্জামান ও নায়েব আলী নামে তিন জনকে আটক করেছেন। রিমান্ডে থাকা আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

উক্ত মামলায় ঝর্ণা থানা হাজতে থাকা অবস্থায় পুলিশকে জানায়, গরু দুটি তাহার সহযোগীদের ধারা চুরি করানো এবং একটি গরু আসামি কামরুজ্জামানের মাধ্যমে বিক্রি করতে দেয় মর্মে স্বীকার করেন।
আটককৃত ঝর্ণা পুলিশকে আরো জানায়, গরু দুটি পূর্বে নিজের মালিকানা দাবী করলেও প্রকৃত পক্ষে গরুগুলির মালিক সে নয়। ধরাবন্নি গ্রামের কফিল উদ্দিন ও আয়শা বেগমের গোয়াল ঘরে চুরি করে আনা আরো একাদিক গরু রয়েছে। পরে হালুয়াঘাট থানা পুলিশ ঝর্নাকে সাথে নিয়ে রাতভর অভিযান চালিয়ে কফিল উদ্দিনের গোয়াল ঘর থেকে আরোও তিনটি গরু উদ্ধার করে।

এ ঘটনা সমুহ সংক্রান্তে সংষিøষ্ঠ গরুর মালিক গণ বাদী হয়ে পৃথক পৃথক ভাবে হালুয়াঘাট থানায় ১২ ও ১৪ আগষ্ট তারিখে যথাক্রমে মামলা নং ৮,৯,১০, ধারা ৪৫৭/৩৮০/৪১১ দায়ের করেন। এ ছাড়্ওা ১৬ আগষ্ট সিংহেশ^র ইউনিয়নের পুরাপুটিয়া গ্রামের আবছর আলীর পুত্র রফিক বাদী হয়ে ফুলপুর থানায় ঝর্ণাসহ ১৩ জনকে বিবাদী করে আরো একটি মামলা দায়ের করে। যার নং- ১৫।

এ ঘটনায় ময়মনসিংহ জেলা ও রেঞ্চে স্বীকৃতি স্বরুপ মাসিক কল্যাণ সভায় ময়মনসিংহ পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম পিপিএম,বিপিএম, হালুয়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম মিঞাকে পুরষ্কৃত করেন।

গরুচোর চক্রের মূলহোতা গ্রেফতারসহ পাচঁটি চোরাই গরু উদ্ধার করায় বিশেষ স্বীকৃতি স্বরুপ ময়মনসিংহ রেঞ্চের শ্রেষ্ঠ পুলিশ পরির্দশক হিসাবে ময়মনসিংহ রেঞ্জ ডিআইজি নিবাস চন্দ্র মাঝি সম্মাননা ক্রেস্ট ও সনদ প্রদান করেন।

এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান ওয়ারেছ উদ্দিন সুমন তার বিরোদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যা বলে আখ্যায়িত করেছেন একটি কুচক্রীমহল রাজনৈতিক ও সামাজিক ভাবে হেয় পতিপন্ন করার জন্য মামলাটি দায়ের করেছেন। প্রসাশনের নিকট ষড়যন্ত্র মূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবী জানান।

এ বিষয়ে হালুয়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম মিঞা বলেন, থানা হেফাজতে আটক ঝর্ণাকে কোন প্রকারের মারধর করেননি । তার বিরোদ্ধে ষড়যন্ত্র মূলক মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানান।

মামলার বিষয়ে ময়মনসিংহ পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম পিপিএম,বিপিএম দৈনিক সময় সংবাদ২৪ ডট কমকে বলেন, আদালত মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। তদন্তে ঐ মহিলা বা ওসির যদি কোন ফল্ট থাকে তা বেড়িয়ে আসবে। মহিলা মামলাটিতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে থাকতে পারেন?। যা তদন্ত স্বাপেক্ষে বলা যেতে পারে।

হালুয়াঘাটে চোরাই ৫টি গরুসহ চোরাই চক্রের বিতর্কিত মহিলা ঝর্ণা পুলিশের হাতে আটকের ঘটনায় স্থানীয় এলাকাবাসী পুলিশ প্রসাশনের হালুয়াঘাট সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার আলমগীর পিপিএমসহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম মিঞাকে অভিনন্দন জানিয়ে ছিলেন। বিতর্কিত মহিলা ঝর্ণার দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবী জানান হালুয়াঘাটের সুধী মহলসহ সর্বস্তরের জনগণ। শিঘ্রই মিথ্য মামলা প্রত্যাহার করা না হলে মানব বন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলসহ কঠোর কর্মসূচী গ্রহন করবেন বলেও জানান স্থানীয় জনসাধারণ।

(জেসিজি/এসপি/ডিসেম্বর ২৯, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

০৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test