E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

হালুয়াঘাটে গরু চোরের ফাঁদে ইউপি চেয়ারম্যন ও পুলিশ কর্মকর্তা

২০১৭ ডিসেম্বর ৩১ ১৫:৪৪:২৯
হালুয়াঘাটে গরু চোরের ফাঁদে ইউপি চেয়ারম্যন ও পুলিশ কর্মকর্তা

হালুয়াঘাট (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি : ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে এবার গরুচোরের মিথ্যা মামলার ফাঁদে আওয়ামীলীগ মনোনীত দুই বারের ধুরাইল ইউপি চেয়ারম্যান ওয়ারেছ উদ্দিন সুমন ও হালুয়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম মিঞা । এ ঘটনায় এলাকাবাসী মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবীতে মানববন্ধনসহ বিক্ষোভ মিছিলের প্রস্তোতি নিয়েছেন।

জানা যায়, গত ২১ ডিসেম্বর ধুরাইল ইউপি চেয়ারম্যান ওয়ারেছ উদ্দিন সুমন ও হালুয়াঘাট থানার ওসি কামরুল ইসলাম মিঞাসহ ৬ জনকে আসামী করে আদালতে ৫ লক্ষ টাকা চাঁদাদাবী ও তিন দিন থানা হাজতে আটক রেখে উলঙ্গ করে ইউপি চেয়ারম্যান ও ওসির বিরুদ্ধে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের করেন, উপজেলার পূর্ব পাবিয়াজুড়ি গ্রামের আজগর আলীর স্ত্রী গরু চোরাই চক্রের মূলহোতা বিতর্কিত মহিলা ঝর্ণা (৪০)। বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) দুপুরে ময়মনসিংহ ৫নং আমলী আদালতের বিচারক হাফিজ আল আসাদ অভিযোগটি আমলে নিয়ে জেলা পুলিশ সুপারকে থানার ওসিসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন ১৫ দিনের মধ্যে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

ঘটনা সূত্রে জানা যায়, উপজেলার চকমোকামিয়া গ্রামের আইনল হক এবং তার চাচা হাতেম আলীর একটি ষাঁড় ও একটি বকনা গরু ৯ আগষ্ট দিবাগত রাতে নিজ বাড়ি থেকে চুরি হয়। চুরি হওয়া গরুগুলি খোজতে গিয়ে আইনল হক শেরপুর জেলার নকলা থানা এলাকা থেকে হালুয়াঘাট উপজেলার করুয়াপাড়া গ্রামের কামরুজ্জামানকে তার চুরি যাওয়া গরুটিসহ আটক করেন। আটককৃত কামরুজ্জামানকে চুরি যাওয়া গরুটিসহ হালুয়াঘাট থানায় আনার পর সে জানায় ঝর্ণা গরুটি তার নিকট বিক্রি করার জন্য দিয়ে ছিলেন।

উক্ত গরুটিকে ঝর্ণা নিজের গরু বলে দাবী করেন। দুই জনের দাবীর বিষয়ে স্থানীয় ব্যক্তিবর্গসহ থানা পুলিশ গরুটির প্রকৃত মালিক নির্ধারণের চেষ্টায় থাকা অবস্থায় গত ১২ আগষ্ট বিকালে আইনল হকের চাচা হাতেমের চুরি যাওয়া গরুটি হাতেম তার স্ত্রী খুদেজা এবং বোন আসতারা বেগম পূর্ব পাবিয়াজুড়ির ঝর্ণার নিজ বাড়ির গোয়াল ঘরে দেখতে পায়। পরে স্থানীয় ব্যক্তিসহ চারজন চৌকিদার গরুটি উদ্বার করে ।

পরবর্তীতে চুরি যাওয়া গরুটি ঝর্ণার বাড়ি থেকে উদ্বার হওয়ার কারণে হাতেম আলী বাদী হয়ে ঝর্ণাসহ চোরাই সিন্ডিকেট চক্রের ১১ জন সদস্যের নামে হালুয়াঘাট থানায় মামলা দায়ের করেন। যার নং-৮।
হালুয়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সঙ্গীয়ফোর্স নিয়ে গত ১২ আগষ্ট শনিবার সন্ধায় ঝর্নার নিজ বাড়ি থেকে অভিযান চালিয়ে ৫ টি চোরাই গরুসহ তাকে আটক করেন। ঝর্ণাসহ চোরাই সিন্ডিকেট চক্রের অন্যান্য সদস্যরা হলেন, হালুয়াঘাট্ উপজেলার ধারা ইউনিয়নের করুয়াপাড়া গ্রামের কামরুজ্জামান (৩৭),ধুরাইল ইউনিয়নের ধরাবন্নি গ্রামের কফিল উদ্দিন(৪০), আয়েশা বেগম (৩৫), হাকিম (৫৫), ও ফুলপুর উপজেলার ধনারভিটা গ্রামের সোহেল (২৫), জহুরুল (৩০), রাকিব (২৩), রোবেল (২৭), নজরুল (৪৫), জাকারিয়া (২৫)। অতপর ঝর্ণার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত তিনটি গরুচুরি মামলার তৎকালীন তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই ছানোয়ার হোসেন,এসআই দেলোয়ার হোসেন ও এসআই প্রদীপ কুমার রায় আদালতে রিমান্ড আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২১ আগষ্ট ময়মনসিংহ বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্টেট্র ৫নং আমলী আদালত উভয়কে এক দিনের রিমান্ড মঞ্চুর করেন। ২৩ আগষ্ট অপরাহ্নে হালুয়াঘাট থানা পুলিশ ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাগণ জানিয়ে ছিলেন, উক্ত ব্যক্তিদের নামে তিনটি গরুচুরির মামলা রয়েছে এ ঘটনায় ঝর্ণা,কামরুজ্জামান ও নায়েব আলী নামে তিন জনকে আটক করেছেন। রিমান্ডে থাকা আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। উক্ত মামলায় ঝর্ণা থানা হাজতে থাকা অবস্থায় পুলিশকে জানায়, গরু দুটি তাহার সহযোগীদের ধারা চুরি করানো এবং একটি গরু আসামি কামরুজ্জামানের মাধ্যমে বিক্রি করতে দেয় মর্মে স্বীকার করেন। আটককৃত ঝর্ণা পুলিশকে আরো জানায়, গরু দুটি পূর্বে নিজের মালিকানা দাবী করলেও প্রকৃত পক্ষে গরুগুলির মালিক সে নয়।

এ ঘটনা সমুহ সংক্রান্তে সংশ্লিষ্ট গরুর মালিকগণ বাদী হয়ে পৃথক পৃথক ভাবে হালুয়াঘাট থানায় ১২ ও ১৪ আগষ্ট তারিখে যথাক্রমে মামলা নং ৮,৯,১০, ধারা ৪৫৭/৩৮০/৪১১ দায়ের করেন। এ ছাড়্ওা ১৬ আগষ্ট সিংহেশ^র ইউনিয়নের পুরাপুটিয়া গ্রামের আবছর আলীর পুত্র রফিক বাদী হয়ে ফুলপুর থানায় ঝর্ণাসহ ১৩ জনকে বিবাদী করে আরো একটি মামলা দায়ের করে। যার নং- ১৫।

এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান ওয়ারেছ উদ্দিন সুমন তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যা বলে আখ্যায়িত করেছেন একটি কুচক্রীমহল রাজনৈতিক ও সামাজিক ভাবে হেয় পতিপন্ন করার জন্য ঝর্ণাকে দিয়ে মিথ্যা মামলাটি দায়ের করেছেন। প্রসাশনের নিকট ষড়যন্ত্র মূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবী জানান।

পাশাপাশি তিনি আরো জানান, ধোরাইল ইউনিয়নবাসীসহ সর্বস্তরের জনগণ মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবীতে মানববন্ধনসহ বিক্ষোভ মিছিলের প্রস্তোতি নিয়েছেন। আগামী মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) সকালে ধোরাইল বাজারে এ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে।

(জেসিজি/এসপি/ডিসেম্বর ৩১, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

০৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test