E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দিনাজপুর ১

আ. লীগে কোন্দল, জোটভিত্তিক নির্বাচনে এগিয়ে জামায়াত

২০১৮ এপ্রিল ১৩ ১৬:৩৮:৫২
আ. লীগে কোন্দল, জোটভিত্তিক নির্বাচনে এগিয়ে জামায়াত

শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দিনাজপুর-১ (বীরগঞ্জ-কাহারোল) নির্বাচনী এলাকায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগে কোন্দল মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। বর্তমান সংসদ সদস্য ছাড়াও আরো অন্তত ৫ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী মাঠে নেমেছেন। এলাকা ঘুরে সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপালের সমর্থন ও বিরোধিতায় দুই ধরনের চিত্র পাওয়া গেছে। আওয়ামী লীগের এক পক্ষ মনে করছেন, আগামী নির্বাচনে এ আসনে নতুন প্রার্থী না দিলে দল হেরে যেতে পারে। বর্তমান সংসদ সদস্যের পক্ষ বলছেন, মনোরঞ্জন শীল গোপালের বিকল্প প্রার্থী নেই এ নির্বাচনী এলাকায়। অন্যদিকে বিএনপিরও এশাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন। তবে জামায়াতের একজন শক্তিশালী  নেতার নাম শোনা যাচ্ছে। তার পক্ষেই জামায়াত মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। জোটভিত্তিক নির্বাচনে গেলে বিএনপি ও জোটের শরিক জামায়াত হয়ে উঠতে পারে দলটির মূল প্রার্থী নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বী।

জানা গেছে, জাতীয় সংসদের এ আসনটিতে ২০০১ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জামায়াত নেতা আব্দুল্লাহ আল কাফী। মেয়াদকাল শেষ হওয়ার আগেই তিনি মারা যান। ওই সময় উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মনোরঞ্জন শীল গোপাল। এক সময় জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) এর নেতা পরে যোগ দেন আওয়ামী লীগে। ২০০৮ সালে দলটির টিকিটে আবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আবারো সংসদ সদস্য হন।

একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে বর্তমান সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপাল ছাড়াও রয়েছেন,সাবেক সংসদ সদস্য ও বর্তমান বীরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম, সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল মালেক, বীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি জাকারিয়া জাকা, বীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. শিবলী সাদিক ও ছাত্রলীগের কেন্দীয় নেতা আবু হুসাইন বিপু।

অন্যদিকে বিএনপি মনোনয়ন প্রত্যাশী বীরগঞ্জ উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি নেতা মনজুল ইসলাম মঞ্জু,বিএনপি নেতা অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম, কাহারোল উপজেলা চেয়ারম্যান মামুন উর রশীদ মামুন ও কাহারোল উপজেলা বিএনপি নেতা মো. মেহেদী হাসান সুমন। তবে জামায়াত একমাত্র সম্ভাব্য প্রার্থী বীরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র জামায়াত নেতা মাওলানা মোহাম্মদ হানিফ।

বর্তমান সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপালের বিরোধী আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বীরগঞ্জ-কাহারোল নির্বাচনী এলাকায় সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপাল নিজের কপাল গুছিয়েছেন। এতে দলীয় নেতা-কর্মীর সঙ্গে তাঁর দূরত্ব তৈরি হয়েছে। দিন দিন তাঁর সঙ্গে বিরোধ বাড়ছে। অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ছাড়াও স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করেছেন বলে মনোরঞ্জন শীল গোপালের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন তারা। সে কারণে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে তাঁকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতে পারে। অনেকে এমন কথাও বলেছেন, এ আসনে এবার প্রার্থী বদল না করা হলে আসনটি হাত ছাড়া হয়ে যেতে পারে।

এক সময় এ আসনটি পরিচিত ছিল জামায়াতের দুর্গ হিসেবে । যদি জামায়াত নেতা মোহাম্মদ হানিফ বিএনপি জোটের প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেন তাহলে বিএনপি-জামায়াতের পাশাপাশি নৌকার ভোটও নাকি বিএনপি জোটের বাক্সে পড়বে বলে তারা মনে করছেন।

বর্তমানে এ আসনে আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ নয়,বিভক্ত হয়ে পড়েছে। তৈরি হয়েছে গ্রুপে । বর্তমান এমপি গোপালের এশটি গ্রুপ থাকলেও আর একটির নেতৃত্বে দিচ্ছেন, বীরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাবেক সংসদ সদস্য আমিনুল ইসলাম। অপরটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন, বীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাকারিয়া জাকা। ছাড়াও কাহারোল উপজেলায় সাবেক এমপি আব্দুল মালেকের নেতৃত্বে রয়েছে আরোকটি গ্রুপ।

তবে মনোরঞ্জন শীল গোপালের অনুসারীরা জানান, ‘এমপি সাহেব রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্টসহ এলাকার জন্য ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। তাঁর কোনো বিকল্প তৈরি হয়নি। প্রতিটি লোকের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক আছে।ডাকলে পাওয়া যায় সহজেই তাঁকে । বিপদে-আপদে পাশে থাকেন তিনি। ’

সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধচারণ বীরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাবেক এমপি আমিনুল ইসলাম ইতিমধ্যে দলীয় লোকজনকে নিয়ে মাঠে কাজ শুরু করেছেন।

অপরদিকে মনোরঞ্জন শীল গোপালের নানা দুর্বলতার কারণে এক সময় ছাত্রলীগ করা বীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাকারিয়া জাকা আলাদা একটি অবস্থান তৈরি করেছেন। সাধারণ নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে তিনি দলীয় কর্মকান্ডসহ বিভিন্ন কাজে সম্পৃক্ত রয়েছেন। নির্বাচনে তিনি মনোরয়ন প্রত্যাশী। ইতিমধ্যে তিনি তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী এ দু’জন প্রতিনিয়ত সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপালের বিরুদ্ধে বলছেন। বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির অভিযোগ তুলেছেন তারা।

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপাল বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে কেউ কোনো অনিয়মের অভিযোগের তথ্য-প্রমাণ দিতে পারবে না। আর নেতাকর্মীদের মনোমালিন্য যা রয়েছে তা দ্রুত সময়ের মধ্যে মিটে যাবে। যারা বলেছে, দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে সমন্বয় করি না, এটা ঠিক নয়। সবার সঙ্গে সমান আচরণ করা হয়। ’

এদিকে বিএনপি-জামায়াত জোটের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে বীরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র জামায়াত নেতা মাওলানা মোহাম্মদ হানিফ। তিনি একজন শক্তিশালী প্রার্থী। ইতিমধ্যে তিনি দলীয় লোকজনকে নিয়ে মাঠে কাজ শুরু করেছেন। যদিও জামায়াত থেকে এককভাবে তিনি প্রার্থী হতে পারবেন কি না এ নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেছেন তিনি। এরই মধ্যে এলাকা ছাড়া হওয়া নেতাকর্মীদের সংগঠিত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি। তিনি বিএনপি-জামায়াত জোটের প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।

অন্যদিকে বীরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মনজুল ইসলাম মনজু আওয়ামী লীগের জন্য বড় ফ্যাক্টর। বীরগঞ্জ-কাহারোলে তাঁর শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে। আগামী নির্বাচন ঘিরে তৃণমূলের জনসমর্থন নিয়ে তিনি এলাকায় সরকারবিরোধী বিভিন্ন প্রচার চালাচ্ছেন। সাধারণ মানুষকে সহযোগিতার ব্যাপারে তিনি সব সময় অগ্রণী ভূমিকাও পালন করেন।

পেশায় ব্যবসায়ী এ বিএনপি নেতা মনজুল ইসলাম মনজু বলেন, ‘সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে আমি একজন। আমি ছাড়া বীরগঞ্জ-কাহারোলে বিএনপির অন্য কোনো প্রার্থী নেই। যদি সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হয় তাহলে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী আমি।’

জাতীয় পার্টির এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী বীরগঞ্জ উপজেলা জাপার সাধারণ সম্পাদক শাহীনুর ইসলাম। তিনি দলের মনোনয়ন পেতে লবিং করে যাচ্ছেন।

(এসএএস/এসপি/এপ্রিল ১৩, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

০৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test