E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ছয় সিনিয়র শিক্ষককে ডিঙিয়ে জুনিয়র শিক্ষককে পদায়ন নিয়ে তোলপাড়!

২০১৮ মে ২৮ ১৬:০৭:৪৬
ছয় সিনিয়র শিক্ষককে ডিঙিয়ে জুনিয়র শিক্ষককে পদায়ন নিয়ে তোলপাড়!

মিলন কর্মকার রাজু, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) : ছয়জন সিনিয়র শিক্ষককে ডিঙিয়ে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় বিধি লংঘন করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে পদায়ন করা হয়েছে। গত ২০ মে পৌরশহরের মংগলসুখ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদে নতুন শিক্ষক পদায়ন করা নিয়ে এখন শিক্ষক মহলে চলছে তোলপাড়। এই শিক্ষক পদায়নে অনিয়মের বিরুদ্ধে গত ২৪ মে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর পদায়ন বঞ্চিত সাতজন প্রধান শিক্ষক লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ও শিক্ষকদের সূত্রে জানা গেছে, কলাপাড়ার ঐতিহ্যবাহি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খেপুপাড়া মংগলসুখ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ স্কুলটি ১৯৫৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে এ স্কুল থেকে শত শত শিক্ষার্থীরা শিক্ষালাভ করে পর্যায়ক্রমে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহন করেছেন। যারা দেশের বিভিন্ন সময় সরকারের উচ্চ পদে কর্মরত আবার অনেকে অবসর জীবন-যাপন করছেন। যুগের পর যুগ এ স্কুল শিক্ষা ও সাংস্কৃতিতে তার ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছে। পাশাপাশি প্রতিবছর এ স্কুলটি ফলাফলে তার শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রেখেছেন। ফলে এ স্কুলটি শিশু শিক্ষার জন্য অন্যতম একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

এ স্কুলের সর্বশেষ প্রধান শিক্ষক ছিলেন মো.আবুল হোসেন । তিনি গত ৭ মে অবসর নেন। পরে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ১৩ মে শিক্ষকদের মাসিক সভায় মংগল সুখ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের শূন্যপদে আগ্রহীদের আবেদনের কথা মৌখিক ভাবে জানিয়ে দেয়। এতে আট জন প্রধান শিক্ষক ওই পদে পদায়নের জন্য আবেদন করেন।

এরা হলেন কনা রানী বিশ্বাস উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের দক্ষিন টিয়াখালী (২) স্কুলের প্রধান শিক্ষক। তিনি ১৯৯৩ সালের ১ নভেম্বর ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে প্রথম যোগদান করেন। মো.মজিবুর রহমান উপজেলার বালিয়াতলী ইউনিয়নের আউয়ুমপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে ১৯৯৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর যোগদান করেন। মো.আক্তার ফারুক উপজেলার ডালবুগঞ্জ ইউনিয়নের ডালবুগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৯৯৫ সালের ১২ জুন প্রথম প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।

মো.হাবিবুর রহমান মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নের চরপাড়া পক্ষিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে ১৯৯৬ সালের ৫ জুন যোগদান করেন। মো.মোতালেব নীলগঞ্জ ইউনিয়নের পাখিমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৯৯৮ সালের ২৬ এপ্রিল যোগদান করেন।

মো.জাহাঙ্গীর আলম ২০০০ সালের ৩০ মার্চ পৌরশহরের রহমতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম যোগদান করেন। মো.জহিরুল ইসলাম আর্শ্বেদ লালুয়া ইউনিয়নের চারিপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০০০ সালের ৩০ আগষ্ট প্রথম প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। মামানৈ পৌরশহর সংলগ্ন বাদুরতলী কলোনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০০৩ সালে প্রথম যোগদান করেন।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিপত্র অনুযায়ী প্রধান শিক্ষকদের অন্য প্রতিষ্ঠানে পদায়নের ক্ষেত্রে জেষ্ঠ্যতার ভিত্তিতে পদায়ন করার বিধান থাকলেও কলাপাড়া পৌরশহরের মংগলসুখ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে পদায়নের ক্ষেত্রে জেষ্ঠ্যতা লংঘন করে লালুয়া ইউনিয়নের চারিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো.জহিরুল ইসলাম আর্শ্বেদকে গত ২০ মে ওই স্কুলে প্রধান শিক্ষক পদে পদায়ন করা হয়েছে। বিধি’র তোয়াক্কা না করে পদায়ন করায় এলাকার শিক্ষক ও সুধী সমাজে চলছে তোলপাড়।

শিক্ষকদের অপর একটি সূত্র সাংবাদিকদের জানায়, কলাপাড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মনিলাল সিকদার সম্প্রতি বদলি হওয়ার পর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে কোন প্রকার অফিসিয়াল দায়িত্ব না পেয়ে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা কোন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক পদায়ন করতে পারেন না। অথচ ভারপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো.আবুল বাশার সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের দায়িত্ব না পেয়ে তিনি শিক্ষক পদায়ন করেছেন যা বিধি সম্মত নয় বলেও ওই শিক্ষকরা জানিয়েছেন।

দক্ষিণ টিয়াখালী (২) সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কনা রাণী বিশ্বাস বলেন, মংগলসুখ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদে পদায়নের ক্ষেত্রে যারা আবেদন করেছেন, তাদের মধ্যে তিনি সিনিয়র। বিধি মোতাবেক ওই পদে তিনিই যোগ্য। তাকে পদায়ন না নিয়ে অবৈধ উপায়ে ছয় জন সিনিয়র শিক্ষককে ডিঙিয়ে জুনিয়র শিক্ষককে পদায়ন করা হয়েছে ।

কলাপাড়া পৌর শহরের রহমতপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো.জাহাঙ্গীর আলম, পাখিমারা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল মোতালেব খানসহ অন্যান্য আবেদনকারী শিক্ষকবৃন্দ একই রকমের অভিযোগ করেন।

কলাপাড়া উপজেলা ভারপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো.আবুল বাশার বলেন, তার দায়িত্বের বিষয়ে অধিদপ্তর থেকে কোনো চিঠি আসেনি। তবে দু-এক দিনের মধ্যে আসবে। মংগলসুখ সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদায়নের বিষয়টি শিক্ষা কুমিটির সুপারিশে করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

পটুয়াখালী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো.শহীদুল ইসলাম বলেন, উপজেলা পর্যায়ে শিক্ষক পদায়ন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় করে থাকে। সেখান থেকে যে নামটি প্রেরণ করা হয়, সেটাই আমি উপ-পরিচালকের কাছে অগ্রায়ন করে থাকি। তবে বিধি মেনেই সব কিছু করা উচিত বলে তিনি স্বীকার করেন।

বরিশাল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো.এস এম ফারুক সাংবাদিকদের বলেন, মংগলসুখ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিধি লংঘন করে প্রধান শিক্ষক পদায়নে কোনো অনিয়ম হয়ে থাকলে তা দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(এমকেআর/এসপি/মে ২৮, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test