E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সড়ক ব্রিজ নব্যতা সংকটে কাঙ্খিত সেবা দিতে পারেছে না মোংলা সাইলো

২০১৯ জানুয়ারি ২৩ ২৩:৪৩:০৩
সড়ক ব্রিজ নব্যতা সংকটে কাঙ্খিত সেবা দিতে পারেছে না মোংলা সাইলো

বাগেরহাট প্রতিনিধি : বাগেরহাটের মোংলা নদীর উপর ব্রিজ আর সড়ক ভালো না থাকাসহ নব্যতা সয়কটের কারনে কাঙ্খিত সেবা দিতে পারছেনা মোংলা সাইলো কর্তৃপক্ষ। সরকারের এই মেগা প্রকল্প তিন বছরেও শুরু হয়নি। জেলার মোংলা উপজেলার চিলা ইউনিয়নের জয়মনির ঘোল এলাকায় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম আধুনীক খাদ্য গুদাম থেকে সড়ক পথে এখনো খাদ্য সরবরাহ শুরু করতে পারেনি। মোংলা শহর থেকে জয়মনির ঘোল সাইলো পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার সড়কটির বেহাল দশা। এরপর মোংলা নদীতে নেই কোন ব্রিজ। এছাড়া প্রযুক্তিগত ত্রুটি, জেটি সংলগ্ন নদীর নব্যতা সংকট, রোডিং এর ধীরগতী, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থর কারনে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ এই সাইলোর সুবিধা ভোগ করতে পারছে না।

সরকারের এই মেগা প্রকল্পে দে্েযশর আপাতকালীন দূর্যোগ মোকাবেলায় প্রায় সাড়ে ৫ শত কোটি টাকা ব্যয়ে মোংলা উপজেলার জয়মনির ঘোলে ৫০ হাজার মেট্রিকটন খাদ্য শস্য ধারন ক্ষমতা অত্যাধুনিক এ সাইলোটি নির্মিত হয়। ২০১৩ সালে ১৩ নভেম্বর নির্মান কাজ শুরু হওয়া এ সাইলোটি গত ২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। এ সময় লাইটার যোগে পরীক্ষামূলক ভাবে ৪ শত ৬ মেট্রিক টন গম গুদামজাত করা হয়। এ সাইলোর জন্য সরকারিভাবে বিদেশ থেকে আমদানীকৃত গমের প্রথম চালান নিয়ে গত ২০১৭ সালের ৯ মার্চ মোংলা বন্দরে ভিড়ে গম বোঝাই জাহাজ।

রাশিয়া থেকে আসা গম নিয়ে পানামার পতাকাবাহী এমভি নর্ডলে জাহাজটি বন্দরের পশুর চ্যানেলের হারবাড়িয়া বহিঃনোঙ্গরে অবস্থান করে। প্রথমবারের মতো আসা গমবাহী জাহাজটি নাব্যতা সমস্যার কারণে সাইলোর জেটিতে তখনই ভিড়তে পারেনি। ফলে মাদার ভ্যাসেল থেকে ছোট লাইটার যোগে খালাসের পর সাইলো জেটিতে লোডিং কাজ শুরু করে কর্তৃপক্ষ। গম লোডিং শুরু হলেও ধীর গতি নিয়ে বিড়ম্বনার মধ্যে পড়ে সাইলো সংশ্লিষ্টরা। সাইলো জেটির দুটি লোড পয়েন্টের একটি অচল হয়ে আছে। অপরটি চললেও কিছুক্ষন পর পর বন্ধ হয়ে থাকছে। দক্ষ জনবল না থাকায় এ অবস্থা বিরাজ করছে বলে জানান সাইলো সংশ্লিষ্টরা।

চিলা ইউপি চেয়ারম্যান গাজী আকবার হোসেন বলেন, মোংলায় নির্মিত খাদ্যসষ্য মজুদ রাখার জন্য সরকারের মেগা প্রকল্প এ সাইলোর প্রধান সমস্যা হলো টেকসই সড়ক নির্মান ও মোংলা নদীতে একটি ব্রিজ। এখানে ম্যাদার ভ্যাসেল থেকে কার্গো বা লাইটারে দ্রুত গতিতে গম খালাস করা হলেও সাইলোর কারিগরি ত্রুটির কারণে লোডিংয়ে ধীর গতি চলছে। তিনি আরো জানান, অত্যাধুনিক এ সাইলোর প্রযুক্তি অনুযায়ী চব্বিশ ঘন্টায় ২ হাজার মেট্রিকটন গম লোডিং করার কথা থাকলেও তা পেরে উঠছে না সাইলো কর্তৃপক্ষ।

গম নিয়ে একাধিক লাইটার সাইলো জেটির লেডিং পয়েন্টে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকতে হয় কিন্তু গম লোডিংয়ের ধীর গতিতে নির্ধারিত সময় খালাস করা সম্ভব হয়না কার্গো বা লাইটার থেকে। আর এ জন্য তিনি সাইলোর কারিগরি ত্রুটি ও দক্ষ জনবল সংকটকে দায়ী করেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে গমবাহি ম্যাদার ভ্যালেস কর্তৃপক্ষ,আমদানীকারক, শিপিং এজেন্ট ও স্টীভিডরর্স এবং লাইটার কর্তৃপক্ষকে মোটা অংকের অর্থিক ক্ষতি গুনতে হবে।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার জানান, নব্যতা সংকটের কারনে মোংলা সাইলোতে সরকারের বিদেশ থেকে আমদানী করা গম নিয়ে মাদার ভ্যাসেল ভিড়তে পারছেনা। সাইলো জেটি এলাকায় নাব্যতা সংকটের কারনে গম নিয়ে বহিঃনোঙ্গরে অবস্থান করেই গম খালাস করে তা ছোট ছোট লাইটার বা কার্গোতে করে নিয়ে আসতে হয় এখানে। এ ছাড়া নতুন এ সাইলোর দক্ষ জনবল না থাকা ও কারিগরি সমস্যার কারণে ধীর গতীতে চলছে লোডিং কাজ। কারিগরি ত্রুটির কারণে গম লোডিংয়ে ৪টি পয়েন্টের দুইটি মাত্র সচল থাকলেও অপর ২টি অচল হয়ে পরে আছে।

এ অবস্থায় সাইলো উদ্বোধনের পর গম নিয়ে আসা জাহাজ গুলো খালাস কাজে বিড়ম্বনায় পড়ে। এতে জাহাজ কর্তৃপক্ষ, শিপিং এজেন্ট, স্টীভিডরস সহ সংশ্লিষ্টরা মোটা অংকের টাকার অর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। এখানে বড় সমস্যা হলো সড়ক পথে, সাইলো সংলগ্ন রাস্তা ও মোংলা নদীতে ব্রিজ নির্মান। সাইলো প্রকল্পে রাস্তা নির্মানের অর্থ বরাদ্ধ থাকায় সরকারের পক্ষ থেকে নতুন করে উদ্যোগ নেয়া হয়নি সড়ক ও ব্রিজ নির্মানে। তবে নদীতে ব্রিজ ও সড়ক নির্মানে নতুন সরকারের শুরুতেই বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখা হবে এমনটি জানালেন স্থানীয় এমপি উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার। এ সাইলোকে কেন্দ্র করে ১শত ২৫ মিটার ব্রিজের সাথে ২’শ ৫০ মিটার দীর্ঘ জেটি টারমিনাল নির্মান করা হয়েছে।

মোংলা সাইলো’র সহকারী রক্ষন প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম জানান, খাদ্য গুদামটি শুরু হয়েছে প্রায় ৩ বছর, তবে এখনো সম্পুর্নভাবে এর সুফলতা ভোগ করতে পারছেনা দক্ষিনাঞ্চলবাসী। এখানে বেশ কয়েকটি কারিগরি ত্রুটি রয়েছে, এছাড়াও জয়মনি থেকে মোংলা পর্যন্ত্য ২২ কিলোমিটার সড়ক, এটি মানুষ চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে কয়েক বছর ধরে। তার পরও সাইলো থেকে সড়ক পথে মালামাল আনা-নেয়ার জন্য মোংলা নদীতে ব্রিজ না থাকায় কাংখিত সেবা দেয়া যাচ্ছেনা

(এসএকে/এসপি/জানুয়ারি ২৩, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test