E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরেও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি মেলেনি শহীদ হরকুমার বৈদ্যর!

২০২০ জানুয়ারি ০৫ ১৬:০৬:১২
স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরেও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি মেলেনি শহীদ হরকুমার বৈদ্যর!

পাবনা প্রতিনিধি : মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে নিহত  পিতার (হরকুমার বৈদ্য) নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি না হওয়ায় হতাশ তার কন্যা সুমতি বৈদ্য । সুমতি বৈদ্য দ্রুত তার পিতাকে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি প্রদানের দাবী জানান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রানালয় সহ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে। 

মুক্তিযুদ্ধে নিহত হরকুমার বৈদ্যর কন্যা সুমতি বৈদ্য জানান, তাঁর পিতা হরকুমার বৈদ্যকে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে রাজাকাররা পাবনা জেলার চাটমোহর উপজেলার ফৈলজানা গ্রামস্থ্য বাসা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে। তিনি জানান স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরেও এখনও তার পিতার নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি।

সুমতি বৈদ্য বলেন, তার পিতা হরকুমার বৈদ্য ১৯৫০ সালে গোপালগঞ্জ জেলার কোটালী পাড়া থানার ধারাবাসাই কান্দি গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। এরপর কাজের সূত্রে পাবনা জেলায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। হরকুমার বৈদ্য পেশায় ছিলেন একজন কাঠ মিস্ত্রী। নিজ কাজের ফাঁকে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত হন। ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে দক্ষ সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন। এ সময় তিনি এলাকার যুবকদের মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করেন এবং ট্রেনিং এর জন্য ভারতে পৌছানোর বিষয়ে সহযোগিতা করেছেন ।

১৯৭১ সালে ফৌলজানা ব্যাপিষ্ট চার্চে মুক্তিযোদ্ধাদের সার্বক্ষণিক দেখভাল করতেন হর কুমার বৈদ্য। পাকিস্তানীদের দোসর রাজাকার, আলবদর, আল শামসদের বিরুদ্ধে অপারেশনে যাওয়ার জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের দিকনির্দেশনা দিতেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে হর কুমার বৈদ্যকে রাজাকাররা নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে ।

তিনি অভিযোগ করেন যে, মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তি স্বাধীনতা বিরোধী তৎকালীন শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান রাজাকার পয়গম্বর হোসেন পাচু, পিতা: পাচাই পরামানিক, গ্রাম: পাইকপাড়া, পোঃ দেবোত্তর, থানা: আটঘটিয়া, জেলা- পাবনা, তার পিতার হত্যার জন্য দায়ী। ফৈলজানা খ্রীষ্টিয়ান পাড়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রায় তিন মাস ব্যাপি আশ্রয় ও তাদের ভরন-পোষন করা এবং এর নেতৃত্ব দেন শহীদ হর কুমার বৈদ্য। তার নেতৃত্বের কারণে আশ-পাশের রাজাকার বাহিনীর অসুবিধা হত এবং তারা (রাজাকার বাহিনী) বেকায়দায় পড়ত। যার জন্য সেই রাজাকার বাহিনী হরকুমার বৈদ্যর বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র করে এবং সরিয়ে দেওয়ার জন্য তাকে হত্যা করে।

রাজাকার আলবদর এর প্রধান পয়গম্বর হোসেন পাচু নিরিহ-নিরাপরাধ পাশের ন্যাংড়ি গ্রামের আবদুল আজিজের ছেলে জলিলকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে শহীদ হরকুমার বৈদ্যকে নিজ ঘর থেকে ডেকে নিতে বাধ্য করে। সদ্য জাত ছেলে জয়কে নিয়ে বিশ্রামরত অবস্থায় থাকাকালীন জলিলকে দিয়ে পাচু রাজাকার শহীদ হর কুমার বৈদ্যকে আর্মিদের হাতে তুলে দেয়।

পাকিস্তানী সেনাদের নির্দেশ মতো রাজাকার পাচু ও তার লোকেরা হর কুমার বৈদ্যকে প্রথমে নির্মমভাবে শারিরীক নির্যাতন করে। এরপর আর্মিদের কথামতো মাথা-পা এবং বুকে বুলেটের আঘাতে ঝাঝরা করে দেয়। ১৯৭১ সালের ৭ই নভেম্বর রাতে তার পিতা শহীদ হন বলে কন্যা সুমতি বৈদ্য জানান।

হরকুমার বৈদ্যর হত্যার বিচার আজ পর্যন্ত হয় নাই।

তিনি আরো বলেন ১৯৭১ সালের ৩ই নভেম্বর ফৈলজানা গ্রামের (কাটাজোলা) খ্রীষ্টিয়ান পাড়া পাক বাহিনী আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। ঐদিন এলাকা বাসীর সমস্ত ঘর-বাড়ী পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা আজো ক্ষতিপূরণ পায়নি।

সুমতি বৈদ্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন যাতে তার পিতার নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় আসে। এাছাড়াও তিনি তার পিতার হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় আনার জোর দাবী জানান।

(পিএস/এসপি/জানুয়ারি ০৫, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test