E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

টাঙ্গাইলের সব নদীতে ফের পানি বাড়ছে, বানভাসি মানুষের দুরবস্থা চরমে

২০২০ জুলাই ২৪ ১৬:৫১:৪৫
টাঙ্গাইলের সব নদীতে ফের পানি বাড়ছে, বানভাসি মানুষের দুরবস্থা চরমে

রঞ্জন কৃষ্ণ পন্ডিত, টাঙ্গাইল : টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে টাঙ্গাইলের সব নদীর পানি তৃতীয় দফায় বাড়ছে। জেলার ৯টি উপজেলার প্রায় তিন লাখ বানভাসি মানুষ চরম দুরবস্থায় পড়েছে। কেউ কেউ বাড়ি-ঘর ছেড়ে রাস্তার পাশে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। নতুন নতুন গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় গবাদীপশু ও হাঁস-মুরগী নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে।

টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, শুক্রবার(২৪ জুলাই) গত ২৪ ঘণ্টায় টাঙ্গাইলে যমুনা নদীর পানি ১১ সেণ্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৭৬ সেণ্টিমিটার, ধলেশ্বরী নদীতে বিপৎসীমার ১৪৯ সেণ্টিমিটার ও ঝিনাই নদীর পানি ৭৫ সেণ্টিমিটার বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এরইমধ্যে বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলি জমি, কাঁচা-পাকা রাস্তা, ব্রিজ এবং পুকুরের মাছ ভেসে গেছে।

টাঙ্গাইল পৌর সভার এনায়েতপুর, মীরের বেতকা, বোয়ালী, বাজিতপুর, অলোয়া ভাবানী, চরজানা(পূর্ব সাবালিয়া), বিশ্বাস বেতকা, দেওলা, কোদালিয়া, কাগমারা সহ বিভিন্ন এলাকায় পানি ঢুকে ঘর-বাড়ি ও পাকা রাস্তা তলিয়ে গেছে। বন্যা কবলিত এলাকায় রিকশা-অটোরিকশার পরিবর্তে ছোট ছোট নৌকায় সীমাবদ্ধতার মধ্যে লোকজন চলাচল করছে। উপ-শহর এলেঙ্গা পৌরভবন সহ বাসস্ট্যান্ডে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানাগেছে, টাঙ্গাইলের ৯টি উপজেলার ৪২ ইউনিয়নের ৩০৫টি গ্রামের ৩২৫ বর্গকিলোমিটার এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে এক লাখ ৯৩ হাজার ৪১ জন মানুষ প্রত্যক্ষ ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছেন। ৩৮ হাজার ৪৭৮টি পরিবার এখনও পানিবন্দি। এছাড়া জেলার ৫ হাজার ২২৬ হেক্টর ফসলি জমি বন্যার পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।

জেলা ত্রাণ ও পূর্ণবাসন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ পর্যন্ত টাঙ্গাইল সদর, কালিহাতী, ভূঞাপুর, গোপালপুর, নাগরপুর, বাসাইল, দেলদুয়ার, ধনবাড়ী ও মির্জাপুর উপজেলার ৪২ ইউনিয়নের ৩০৫টি গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। সরকারি হিসেবে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এক লাখ ৯৩ হাজার ৪১জন। এক লাখ ৫৩ হাজার ৯১২জন মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। ৭৫২টি সম্পূর্ণ ও ৬২৮১টি ঘর-বাড়ির আংশিক নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। ১৫টি টিউবওয়েল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলার একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। ৩৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আংশিক ক্ষতি হয়েছে। একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ নদী গর্ভে চলে গেছে এবং ১৯টি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

জেলায় এ পর্যন্ত দুই কিলোমিটার সম্পূর্ণ ও ১৯৭ কিলোমিটার আংশিক কাঁচা সড়ক এবং ৫৫ কিলোমিটার পাকা সড়কের আংশিক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও ৪টি ব্রিজ সম্পূর্ণ ও ২৩টি ব্রিজের আংশিক ক্ষতি হয়েছে। আড়াই কিলোমিটার নদীর বাঁধ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সূত্রমতে, জেলায় ৪০০ মে.টন জিআর চাল, নগদ ১৩ লাখ টাকা, দুই লাখ টাকার শিশু খাদ্য, দুই লাখ টাকার গো-খাদ্যসহ ৬ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ পাওয়া গেছে। বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানাগেছে, প্রথম দফার বন্যায় জেলায় ৩ হাজার ৮৩৯ হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ২৭ হাজার ২৩৩ জন। দ্বিতীয় দফার বন্যায় নতুন করে ৫ হাজার ২২৬ হেক্টর ফসলি জমি নিমজ্জিত হয়েছে। নিমজ্জিত জমিগুলোর ফসলের মধ্যে রয়েছে বোনা আমন, রোপা আমন (বীজতলা), সবজি ও তিল।

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের(পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, জেলার প্রধান নদীগুলোর পানি কমতে থাকায় অব্যন্তরীণ নদীতে পানি কিছুটা বাড়ছিল। এরইমধ্যে তৃতীয় দফায় প্রধান নদীগুলোর পানি বিপৎসীমার উপরে রয়েছে। পানি আরো বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আগামি ২৫ ও ২৬ জুলাই জেলার প্রধান নদীগুলোতে পানি আরও অধিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

(আরকেপি/এসপি/জুলাই ২৪, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test