E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আগৈলঝাড়ায় বিতর্কিত বীরাঙ্গনা নারী মুক্তিযোদ্ধাসহ ১৪ জনের গেজেট বাতিল ও ভাতা বন্ধের দাবি

২০২০ ডিসেম্বর ১৫ ২২:৪৯:২০
আগৈলঝাড়ায় বিতর্কিত বীরাঙ্গনা নারী মুক্তিযোদ্ধাসহ ১৪ জনের গেজেট বাতিল ও ভাতা বন্ধের দাবি

আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : মুজিব বর্ষে আগৈলঝাড়ায় বিতর্কিত বীরঙ্গনা নারী মুক্তিযোদ্ধাসহ ১৪জন বিতর্কিত কথিত মুক্তিযোদ্ধাকে বয়কট ও প্রতিহত করার করার ঘোষণা দিলেন উপজেলার প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা। 

মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের সামনে জনাকীর্ণ সাংবাদিক সম্মেলনে এই ঘোষণা দিলেন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের নেতৃবৃন্দ। কথিত মুক্তিযোদ্ধাদের বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী ও সচিব, জামুকার কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক, ইউএনওসহ সংশ্লিষ্ঠদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বরিশাল জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সহকারী ইউনিট কমান্ডার (প্রচার), আগৈলঝাড়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটির সাবেক সভাপতি (মুক্তিবার্তা{১৯৯৮-১৯৯৯}) ও উপজেলা ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক, উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রইচ সেরনিয়াবাত।
এর আগে বীর মুক্তিযোদ্ধারা জাতির পিতার ভাস্কর্য ভাংচুরের প্রতিবাদ জানিয়ে উপজেলা পরিষদ চত্তরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন।

ঘন্টা ব্যাপি সংবাদ সম্মেলনে আব্দুর রইচ সেরনিয়াবাত অভিযোগে বলেন, ২০১৪ সালের ৫মে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের তৎকালীন কমান্ডার আইয়ুব আলী মিয়া, ডেপুটি কমান্ডারগনসহ গেজেটভুক্ত ৪১জন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা আগৈলঝাড়া উপজেলা এলাকায় বিতর্কিত বীরঙ্গনা নারী মুক্তিযোদ্ধা মমতাজ বেগমসহ ১৪জন বিতর্কিত মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে তৎকালীন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা বিতরণ কমটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার (তারিক সালমন) বরাবরে বিতর্কিতদের ভাতা বন্ধসহ ভোটার েেক বাদ রাখার দাবি জানিয়ে অভিযোগ দাখিল করেছিলেন। যার অনুলিপি মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী, সচিব, মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্রিয় কমান্ড কাউন্সিল, জেলা প্রশাসক ও জেলা ইউনিট কমান্ডার বরাবরে প্রেরণ করা হয়।

১৪ জন বিতর্কিত মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে ৪১জন মুক্তিযোদ্ধা লিখিত অভিযোগে জানিয়েছিলেন, “অধিকতর যাচাই বাছাই না করা পর্যন্ত বিতর্কিত ১৪জনের সম্মানী ভাতা প্রদান স্থগিত করাসহ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধাদের নির্বাচনে ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভূক্ত না করার দাবি করেন তারা।

১৪ জন বিতর্কিত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৪১জন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার আরও অভিযোগ ছিলো- তারা “মুক্তিযোদ্ধার সঠিক তথ্য ব্যাতিরিকে ভুয়া সনদ সংগ্রহ করেন এবং সরকারের যাচাই বাছাইয়ের বিধি-বিধান উপেক্ষা করে নিয়ম বহির্ভূতভাবে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)র মাধ্যমে গেজেট ভুক্ত হয়ে মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা পাবারও আবেদন করেছেন। অথচ মুক্তিবার্তা ও লাল মুক্তি বার্তায় তাদের নামও নেই। কিভাবে ওই বিতর্কিত ১৪জন মুক্তিযোদ্ধা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের তৎকালীন ভোটার হলেন তা নিয়েও বিস্ময় প্রকাশ করেন অভিযোগকারী বীর মুক্তিযোদ্ধাগন।

৪১ জন মুক্তিযোদ্ধা স্বাক্ষরিত অভিযোগ পত্রে ১৪জন বিতর্কিত মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ছিলেন- চৌদ্দমেধা গ্রামের মতি লাল মন্ডলের ছেলে জগদীশ চন্দ্র মন্ডল, বড়বাশাইল গ্রামের আ. আলী ফকিরের স্ত্রী রাবেয়া বেগম, বসুন্ডা গ্রামের লেহাজ উদ্দিন মোল্লার ছেলে আ. আজিজ মোল্লা, পশ্চিম সুজনকাঠী গ্রামের আকফাত আলী মৃধার ছেলে আইয়ুব আলী মৃধা, চেঙ্গুটিয়া গ্রামের আব্দুল বাতেন তালুকদারের স্ত্রী নাছিমা বেগম, বাগধা গ্রামের বলু উদ্দিন মিয়ার ছেলে আ. রহমান মিয়া, নগড়বাড়ি গ্রামের আ. লতিফ ভূইয়ার ছেলে জিএম আবু বকর সিদ্দিক, পূর্ব সুজনকাঠী গ্রামের আ. মালেক তালুকদারের স্ত্রী আমিরন্নেসা বেগম, একই গ্রামের আ. রশিদ তালুকদারের ছেলে তালুকদার আ. আজিজ, এসমাইল সরদারের স্ত্রী মোসাম্মৎ মমতাজ বেগম, কালুপাড়া গ্রামের সোনামুদ্দিন সরদারের ছেলে আ. আজিজ সরদার, মোল্লাপাড়া গ্রামের আজাহার উদ্দিন মিয়ার ছেলে মো. শাহজাহান মৃধা, চেঙ্গুটিয়া গ্রামের দলিল উদ্দিন সরকারের ছেলে আ. খালেক সরদার ও ফুল্লশ্রী গ্রামের কার্তিক দাসের ছেলে সঞ্জয় দাস।

মুক্তিযোদ্ধাদের অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন উপজেলা ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক, উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রইচ সেরনিয়াবাত।

মুক্তিযোদ্ধারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আগামী তিন মাসের মধ্যে বিতর্কিত মুক্তিযোদ্ধাদের বিষয়ে রাষ্ট্রীয় প্রশাসন ব্যবস্থা না নিলে বিতর্কিত ব্যক্তিদের সামাজিকভাবেও বয়কটেরও ঘোষনা দেন মুক্তিযোদ্ধারা। এসময় বিতর্কিত ১৪জন মুক্তিযোদ্ধা নামধারীদের গেজেট বাতিলেরও আবেদন জানান মুক্তিযোদ্ধারা।

এসময় মুক্তিযোদ্ধা বক্তারা বলেন, ২০১৭ সালে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রনালয়ের অনলাইন তালিকা যাচাই-বাছাইয়ের সময়ে কথিত নারী বীরঙ্গণা মুক্তিযোদ্ধা মমতাজ বেগমের ছেলে লেলিন তালুকদার স্থানীয় মন্ত্রী আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, এমপি তালুকদার মো. ইউনুসসহ বিভিন্ন ব্যক্তির স্বাক্ষর জাঁলিয়াতির আশ্রয় নিয়ে তার মা মমতাজ বেগমসহ ওই সকল ব্যক্তিদের মুক্তিযোদ্ধা বানানোর বিষয়টি ধরা পরলে যাচাই বাছাই কমিটি থেকে দ্রুত সটকে পরেন লেলিন। জাঁলিয়াতির ঘটনায় তৎকালীন ইউএনও গাজী তারিক সালমন বাদী হয়ে লেলিন তালুকদারের বিরুদ্ধে থানায় মামলাও দায়ের করেন। অথচ পরবর্তি ইউএনওদের অজ্ঞাত নিস্কৃয়তা ও পুলিশী পক্ষপাতিত্তর কারনে ওই মামলাটি একতরফা ভাবে রায় হয়। যা পরে জেনে ক্ষেভে ফেটে পরেন মুক্তিযোদ্ধারা।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক (অব) লিয়াকত আলী হাওলাদার, বখতিয়ার সিকদার, সিরাজুল ইসলাম সরদার, ফারুক আহম্মেদ, মোজাম্মেল হক, বাবুল আহম্মেদসহ কমান্ডের সদস্যবৃন্দছাড়াও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের আহ্বায়ক লিটন আবদুল্লাহ, সন্তান মুরাদ সিকদার প্রমুখ।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত কমান্ডারের দ্বায়িত্বে থানা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবুল হাশেম মন্ডল জানান, তিনি উপজেলায় নতুন এসেছেন। আগে কোন বিষয়ে কি আপত্তি, অভিযোগ ছিল তা তিনি জানেন না। তবে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের কাগজপত্র দেথে তাদের সাথে কথা বলে আইনগত বিষয়ে কিছু করণীয় থাকলে তিনি তা অবশ্যই করবেন বলেও জানান।

(টিবি/এসপি/ডিসেম্বর ১৫, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

০৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test