E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ধর্ষিতার ভাইকে অপহরণের পর হত্যা চেষ্টা, ৩৬ দিনেও গ্রেপ্তার নেই

২০২০ ডিসেম্বর ২৪ ১৮:২০:৫৮
ধর্ষিতার ভাইকে অপহরণের পর হত্যা চেষ্টা, ৩৬ দিনেও গ্রেপ্তার নেই

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার শ্যামনগরে ধর্ষিতার ভাইকে অপহরণের পর শরীরে বিষাক্ত ইনজেকশান পুশ করে হাত, পা ও মুখ বেঁধে নির্যাতনের পর বস্তায় ভরে হত্যার চেষ্টার ঘটনায় ৩৬ দিনেও কোন আসাামীকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। উপরন্তু আসামী  আবু বক্করের ভাই হাফিজুল ইসলাম,মাহাবুব, সুকুমারের ভাই মনোজ মণ্ডলসহ কয়েকজন ভিকটিম পরিবারের সদস্যদের হুমকি দিচ্ছে। ঘটনা মিথ্যা বলে আসামীদের স্বজনরা টাকা দিয়ে মামলা মিটিয়ে নেওয়ার জন্য নির্যাতিতদের সহায়তাকারি সংগঠণের প্রধানদের কাছে যাচ্ছেন।

মামলার বিবরণে জানা যায়, সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার যাদবপুর গ্রামের আবু বক্কর ছিদ্দিক একই গ্রামের এক নারীকে বিয়ের নাটক করে অন্তঃস্বতা হওয়ার পর স্ত্রী হিসেবে বাড়িতে নিয়ে যেতে বলায় তাকে ২০১৮ সালের ১১ জুন সাতক্ষীরা কোর্টে এফিডেফিডের কথা বলে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে খুলনার গল্লামারি ভুতের বাড়ি এলাকায় নিয়ে যায় আবু বক্কর ছিদ্দিক, গোলাম মোস্তফা ও সুকুমার মণ্ডল। গর্ভপাত ঘটাতে রাজী না হওয়ায় তাকে একটি ঘরে আটক রেখে ওই তিনজন গণধর্ষণ করে। পরদিন তার গর্ভপাত ঘটানোর কয়েকদিন পর আবু বক্কর ছিদ্দিকের বোন রোজিনার মাধ্যমে বাড়ির পাশে ফেলে রেখে যাওয়া হয়।

এ ঘটনায় ধর্ষিতা ওই নারী ওই তিনজনের নাম উল্লেখ করে ওই বছরের ২৬ জুলাই সাতক্ষীরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করে। মামলাটি এক বছর যাবৎ (নাঃ শিশু-৪৯/১৮) রায়ের অপেক্ষায় আছে। মামলা তুলে নেওয়ার জন্য আসামীরা বাদি ও তার পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন সময় হুমকি ধামকি দিয়ে আসছিল। সবশেষ গত ১৩ নভেম্বর যাদবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে রহিমের দোকানে ধর্ষিতার ভাইেেক মোবাইলে ডেকে মামলা তোলার জন্য হুমকি দেয় দেবীপুর গ্রামের অমেদ আলীর ছেলে ফজলুর রহমান।

মামলার বিবরনে আরো যানা যায়, ধর্ষিতার ছোট ভাই ১৭ নভেম্বর মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে অসুস্থ মায়ের জন্য ঔষধ কিনে ফকির গাজীর মোড়ে নামার পরপরাই অজ্ঞাতনামা তিনজনসহ ধর্ষণ মামলার মামলার আসামী আবু বক্কর ছিদ্দিক, সুকুমার মণ্ডল ও গোলাম রসুল তার গলায় দা ধরে পার্শ্ববর্তী আজিবরের মেশিন ঘরের পিছনের বাগানে নিয়ে যায়। শরীরের বিভিন্ন স্থানে নির্যাতনের পর সেখানে গলায় দা ধরে তার বাম হাতে দু’টি ইনজেকশান পুশ করা হয়। এরপর একটি ইঞ্জিনচালিত গাড়িতে করে তাকে সোয়ালিয়াা ব্রীজের পাশে নিয়ে যেয়ে হাত , পা ও মুখ বেঁধে ফেলে দ্বিতীয় দফায় মারপিট করা হয়।

পরে তাকে একটি বস্তার মধ্যে ঢুকিয়ে ব্রীজের সাথে ঝুলিয়ে দেওয়ার সময় একটি পিকআপের আলো দেখতে পেয়ে অপহরণকারিরা পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে স্বজনরা মঙ্গলবার দিবাগত রাত দু'টোর দিকে সোয়ালিয়া ব্রীজের পাশ থেকে দু’ হাত, দু’ পা ও মুখ বাঁধা বস্তায় ভরা মুমূর্ষ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করা হয়। বাম পায়ের শিরার টান পড়া ও সমস্ত গায়ে ফোস্কা ওঠার পরও আসামীদের দারা প্রভাবিত হয়ে সার্জিকাল ওয়ার্ডের চিকিৎসক ডাঃ আসিফ কওছারের নির্দেশে গত ৫ ডিসেম্বরে ওই যুবককে ছাড়পত্র ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ধর্ষণের মামলা তুলে না নেওয়ায় ওই যুবককে পরিকল্পিতভাবে অপহরণের পর নির্যাতন চালিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে বলে নির্যাতিত পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ। তবে মামলার তদন্তকাাির কর্মকর্তা শ্যামনগর থানার উপপরিদর্শক আইনদ্দিন গত ৩৬ দিনেও মামলার কোন আসামীকে গ্রেপ্তার করতে পারেননি। এমনকি আসামীরা প্রভাব খাটিয়ে চুড়ান্ত প্রতিবেদন নেওয়ার চেষ্টা করছে।

এদিকে র‌্যাব- ৬ এর সাতক্ষীরা শাখার কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর ও শফিকুল ইসলাম, পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশনের সাতক্ষীরার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লস্কর জায়াদুল হক বলেন, তারা পুলিশের পাশপাশি ছায়া তদন্ত করেছেন।

নির্যাতিত ওই যুবকের দায়েরকৃত মামলায় বর্ণিত অভিযোগ যথার্থ বলে উল্লেখ করে তারা বলেন, ধর্ষণ মামলা তুলে নিতে নির্যাতিতার ভাই ও মামলার সাক্ষীকে এভাবে অপহরণ করে হত্যার চেষ্টা দণ্ডনীয় অপারাধ। তারা মামলায় বর্ণিত ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। এখনো নির্যাতিত ওই যুবক স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা ও খাওয়া দাওয়া করতে পারছে না উল্লেখ করে তারা বলেন, তার উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন।

মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা শ্যামনগর থানার উপপরিদর্শক আইনুনদ্দিন রোববার সকালে সাংবাদিকদের জানান,আসামীদের ধরার জন্য অভিযান অব্যহত রয়েছে। এজাহার নামীয় আসামীরা পলাতক রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

প্রসঙ্গত, ধর্ষিতার ভাইকে অপহরণ করে নির্যাতনের পর হত্যার চেষ্টার ঘটনায় শ্যামনগর উপজেলার যাদবপুর গ্রামের খোকন মণ্ডলের ছেলে সুকুমার মণ্ডল (৩৮), একই উপজেলার দেবীপুর গ্রামের আব্দুল আজিজের ছেলে মাদ্রাসা শিক্ষক গোলাম রসুল(৩৯) ও ফুলবাড়ি গ্রামের আব্দুল মোমিনের ছেলে আবু বক্কর ছিদ্দিকসহ(৪০) অজ্ঞাতনামা তিনজনের বিরুদ্ধে ওই যুবক বাদি হয়ে থানায় ২০.১১.২০ তারিখে ২০ নং মামলা দায়ের করেন।

(আরকে/এসপি/ডিসেম্বর ২৪, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

০১ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test