E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শ্বশুরকে হত্যার অভিযোগে শ্যালকসহ সাত জনের নামে জামাতার মামলা

২০২১ মার্চ ২২ ১৭:০৫:০০
শ্বশুরকে হত্যার অভিযোগে শ্যালকসহ সাত জনের নামে জামাতার মামলা

আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : বরিশালের আগৈলঝাড়ায় সম্পত্তির লোভে মারা যাওয়া শ্বশুরকে হত্যার অভিযোগ এনে শ্যালক, তাদের স্ত্রী, ছেলেসহ সাত জনের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগে মেয়ে জামাতার মামলা দায়ের। আদালতে দায়ের করা অভিযোগ এজাহার হিসেবে গন্য করতে থানাকে আদালতের নির্দেশ।

এজাহার সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ফুল্লশ্রী গ্রামের বিশিষ্ট প্রবীন ব্যবসায়ি আব্দুল মালেক হাওলাদার চলতি বছর ৮মার্চ রাতে নিজ বাড়িতে মারা যান। পরদিন সকালে যথাযথ ধর্মীয় রীতি মেনে তাকে দাফন করা হয়।

এদিকে আ. মালেক হাওলাদারের একমাত্র মেয়ে জামাতা একই গ্রামের আইয়ুব আলী পাইকের ছেলে আসাদুল হক পাইক ওরফে বুলু তার শ্বশুর আব্দুল মালেক মিয়ার মৃত্যু স্বাভাবিক নয়; বরং তাকে হত্যা করা হয়েছে এমন অভিযোগ এনে গত ১৫মার্চ বরিশাল অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে তিন পুত্র, তাদের স্ত্রী, ছেলেসহ সাত জনকে আসামী করে দঃ বিঃ ৩০২/ ৩৪ নালিশী মামলা দায়ের করেন, নং-১৮।

আদালতের বিজ্ঞ বিচারক আমিনুল ইসলাম বাদীর আবেদনে আগৈলঝাড়া থানার ওসিকে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গন্য করে তদন্তের নির্দেশ প্রদান করেন। ১৭মার্চ রাতে ওসি মো. গোলাম ছরোয়ার নালিশী অভিযোগটি হাতে পেয়ে মামলা হিসেবে থানায় রেকর্ড করেন, যার নং ৪ (১৭.৩.২১)। ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয় ওসি (তদন্ত) মাজহারুল ইসলামকে।

ওসি মো. গোলাম ছরোয়র এজাহারের বরাত দিয়ে জানান, আব্দুল মালেক হাওলাদারের তিন পুত্র এক কন্যা থাকা সত্বেও একমাত্র মেয়ে লাইলী পারভীন নিজের ইচছায় বাদী বুলুকে বিয়ে করায় তাকে সম্পত্তি থেকে বাদ রেখে তার জীবদ্দশায় তিনি তার তিন ছেলের নামে সমস্ত সম্পত্তি লিখে দেন। বাদী তা অস্বীকার করে ওই সম্পত্তি জোর পূর্বক তিন ছেলে লিখে নিয়েছে বলে আদালতে অভিযোগ করেন।

বাদী তার অভিযোগে আরও জানান, ছেলেরা তার বাবার কাছ থেকে জোর পূর্বক সম্পত্তি লিখে নেয়ার কারণে ব্যবসায়ি মালেক হাওলাদারের স্ত্রী (বাদীর শ্বাশুরী) জাহান আরা বেগম সম্পত্তি থেকে মেয়ে বঞ্চিত হওয়ার শোক ও পরিবারের মানসিক যন্ত্রনা সহ্য করতে না পেরে ২০১৯ সালের ১৩ জানুয়ারি হার্ট ফেল করে মারা যান।

ছেলেদের নামে সম্পত্তি লিখে দেয়ার পরে আব্দুল মালেক হাওলাদার তার তিন ছেলেকে বোন লাইলীর নামে কিছু সম্পত্তি লিখে দেয়ার কথা বললেও ছেলেরা তাদের বোনের নামে কোন সম্পত্তি লিখে দেয়নি। ঘটনার দিন ৮মার্চ রাতে আব্দুল মালেক হাওলাদার তিন ছেলেকে ডেকে তাদের বোন লাইলী পারভীনের নামে কিছু সম্পত্তি লিখে দিতে বললেও তার ছেলেরা তা না দেয়ায় পিতা-পুত্রদের মধ্যে রাতে বাকবিতন্ডা হয়। ওই রাতেই মালেক হাওলাদারকে তার পুত্ররাসহ অন্যান্যরা বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাস রোধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরদিন তরিঘরি করে মালেক হাওলাদারের লাশ দাফন করে তার পরিবার।

নালিশী অভিযোগের বিবাদী আব্দুল মালেক হাওলাদারের বড় ছেলে ব্যবসায়ি মাসুদ হাওলাদার ওরফে খোকন বলেন, মামলার বাদীর সাথে তাদের ৪৫বছর পর্যন্ত পূর্ব বিরোধ চলে আসছে। তার একমাত্র বোন লাইলী বেগমকে বিয়ে দিলে মামলার বাদী আসাদুজ্জামান বুলু শুধু সম্পত্তির লোভে আমার বোনকে ৮৮সালে অপহরণ করে। তার বিরুদ্ধে অপহরণ মামলাও করা হয়। সেই থেকেই আমার পিতাসহ আমাদের বিরুদ্ধে হয়রানীর জন্য অন্তত ৪০টি মামলা দায়ের করেছে ওই বুলু।

এছাড়াও এলাকার লাল মিয়া, রেজাউল পাইকসহ বিভিন্ন হিন্দুদের জায়গা জাঁল জাঁলিয়াতির মাধ্যমে জবর দখল করেছে। ক্ষতিগ্রস্থরা বুলুর বিরুদ্ধে আদালতে মামলাও দায়ের করেছে। হত্যার অভিযোগ এনে উদ্যেশ্য প্রণোদিতভাবে যে মিথ্যা মামলাটি করেছে তা আমার পিতার ও আমাদের সুনাম ক্ষুন্ন করা এবং সার্বিক ক্ষতি সাধনের জন্যই করেছে বলেও জানান মাসুদ হাওলাদার খোকন।

বাকাল ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড সদস্য ও ফুল্লশ্রী গ্রামের বাসিন্দা ইসহাক আলম পাইক বলেন, মালেক হাওলাদারের দীর্ঘদিন যাবত শ্বাসকস্ট ছিল। বয়সের কারনে তার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। বাদী বুলুর সাথে তাদের পরিবারের পুর্ব বিরোধ থাকায় হয়রানী করার জন্য সম্পূর্ণ মিত্যা মামলাটি দায়ের করেছেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওসি (তদন্ত) মাজহারুল ইসলাম জানান, মামলার তদন্ত চলমান রয়েছে। হত্যা না স্বাভাবিক মৃত্যু তা নির্ধারনের জন্য কবর থেকে লাশ উত্তোলনের অনুমতি চেয়ে আদালতে আবেদন করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশ পেলে লাশ পোষ্ট মর্টেম করা হবে। পোষ্ট মর্টেমের রিপোর্ট পাবার পরেই বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

থানা অফিসার ইন চার্জ মো. গোলাম ছরোয়ার বলেন, বাদী-বিবাদীদের সাথে পূর্ব দীর্ঘ দিনের বিরোধ বিদ্যমান বলে জানা গেছে। লাশের ময়না তদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলে সেই অনুযায়ি ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঘটনায় মমামলার বাদী বা অন্যকোন প্রত্যক্ষদর্শীর কথা জানা যায়নি। সুনির্দ্দিষ্ট কোন তথ্য প্রমান না পাওয়া পর্যন্ত অভিযোগ দিলেই পুলিশ অযথা কাউকে হয়রানী করবে না বলেও জানান তিনি।

(টিবি/এসপি/মার্চ ২২, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

০৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test