E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

লঞ্চের ময়লা-বর্জ্যে নদী দূষণ বাড়ছে

২০২১ মার্চ ২৪ ১৪:২৬:১৭
লঞ্চের ময়লা-বর্জ্যে নদী দূষণ বাড়ছে

* লঞ্চ কর্তৃপক্ষ আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে রাখলে পৌর-কর্মীরা নিয়ে যাবে : চাঁদপুর পৌর মেয়র

* আমরা পৌরসভাকে নির্দিষ্ট একটি ডাস্টবিন রাখতে বহুবার বলেছি : লঞ্চ মালিক প্রতিনিধি

উজ্জ্বল হোসাইন, চাঁদপুর : সারাদেশে নদী নিয়ে নানা কথা। এ নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রচারণাও কম নয়। ‘বাঁচলে নদী-জলাভূমি, তবেই বাঁচবো তুমি-আমি’। এ দায়িত্ব কারও একার নয়। বাঁচাই নদী বাঁচাই দেশ-সবাই মিলে থাকি বেশ। যদি আন্তরিক না থাকি তাহলে একদিন বুড়িগঙ্গার মতো চাঁদপুরের নদীগুলোও ভয়াবহ পরিণতি বরণ করবে। নদী রক্ষা এখন সময়ের দাবি। নদীদূষণ ঠেকাতে যৌথ উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে নৌপুলিশ ফাঁড়ি, পরিবেশ অধিদপ্তর, নদীবন্দর বিআইডাব্লিউটিএ, পৌরসভা ও নৌযান মালিক কর্তৃপক্ষকে। এমনটাই মনে করছেন নাগরিক সমাজ।

চাঁদপুর-ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন রূটে অসংখ্য লঞ্চ-স্টিমার তথা বিভিন্ন জলযান চলাচল করে । আর এ সকল জলযানে স্বাভাবিকভাবেই অনেক ময়লা-আবর্জনা জমে। সেখানে চিপস্, বিস্কুটের প্যাকেট, পানির বোতলসহ অপচনশীল বস্তু থাকে। বিশেষ করে যাত্রীবাহী লঞ্চে এর আধিক্য বেশি। এতে লঞ্চের ময়লা-বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে নদীর পানি। অথচ নেই দূষণ ঠেকানোর উদ্যোগ।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ খান জানান, লঞ্চঘাটে এলে যাত্রীসাধারণ নেমে যাওয়ার পরে লঞ্চের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা ঝাড়ু দিয়ে লঞ্চের ময়লা-বর্জ্য প্রতিনিয়ত নদীতে ফেলছে। ময়লা-আবর্জনায় রয়েছে প্লাস্টিক-পলিথিন জাতীয় অপচনশীল দ্রব্য। যা ৫শ’ বছরেও নষ্ট হবে না। এতে একদিকে যেমন প্রাকৃতিক পরিবেশ হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে, অপরদিকে নদীর নাব্যতা হ্রাসে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। সেই সাথে মাছ ও জলজ জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

লঞ্চ মালিক প্রতিনিধি মোঃ বিপ্লব সরকার জানান, লঞ্চের ময়লা-আবর্জনাই শুধু নদীতে ফেলানো হয়, অন্যরাও ফেলে। অথচ লঞ্চ কর্তৃপক্ষ লঞ্চের ভেতর একাধিক ডাস্টবিন রেখেছেন। কিন্তু মানুষ সচেতন না হওয়ায় বিভিন্নভাবে ময়লা-আবর্জনা ফেলে। লঞ্চঘাটে ভাসমান কিছু দোকান আছে এবং হোটেল রয়েছে তাদের বর্জ্যগুলো নদীতেই ফেলা হয়। আমরা বহুবার পৌরসভাকে বলেছি নির্দিষ্ট একটি ডাস্টবিন রাখতে। কিন্তু সেটা এখনও হয়নি। পৌরসভা যদি নির্দিষ্ট স্থান রাখে তাহলে আমরা নির্দিষ্ট জায়গায় ময়লা ফেলতে পারবো।

চাঁদপুর শহর পরিবেশ সংরক্ষণ আন্দোলনের সভাপতি অ্যাডঃ মোঃ বদরুল আলম চৌধুরী জানান, দেশের অন্যান্য জেলার মতো চাঁদপুরেও ডাকাতিয়া নদীর মতো বিভিন্ন নদীগুলোর সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। আমরা যদি নদী সংরক্ষণে না এগিয়ে আসি তাহলে একদিন চাঁদপুরের নদীগুলো বিলীন হয়ে যাবে। চাঁদপুর-ঢাকা-বরিশাল রূটে প্রতিদিন ২০/২৫টি লঞ্চ যাতায়াত করে থাকে। প্রতিটি লঞ্চ থেকে এভাবে ময়লা ফেলা হচ্ছে বহু আগে থেকেই। এ কারণে নদীগুলো দিন দিন করুণ থেকে করুণতর অবস্থার শিকার হচ্ছে।

সংগঠক ও সমাজকর্মী এএসএম শফিকুর রহমান জানান, লঞ্চের ময়লা-বর্জ্যে নষ্ট হচ্ছে নদীর পানি। নেই দূষণ ঠেকানোর উদ্যোগ। দেশকে শুধু মুখে ভালোবাসলেই হবে না। দেশকে সুন্দর ও দূষণমুক্ত রাখতে সকলকে আন্তরিক হতে হবে। লঞ্চের ময়লা-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়টি দ্রুত একটি সুনির্দিষ্ট শৃঙ্খল-নিয়মের মধ্যে আনার দাবি জানাচ্ছি।

চাঁদপুর নদী বন্দর বিআইডব্লিটিএ চাঁদপুরের উপ-পরিচালক একেএম কায়সারুল ইসলাম বলেন, নদীর পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে আমরা বিভিন্নভাবে কাজ করছি। তবে নতুনভাবে লঞ্চ মালিক কর্তৃপক্ষকে অবগত করে লঞ্চের বর্জ্য আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে চিঠি দেয়া হয়েছে। ওই চিঠিতে উল্লেখ আছে তারা লঞ্চঘাটের নির্দিষ্ট এরিয়ায় ময়লা-আবর্জনা ফেলবেন। কোনো অবস্থাতেই যেনো নদীতে ফেলা না হয়। আর ওই চিঠির অনুলিপি হিসেবে পৌরসভা, পরিবেশ অধিদপ্তর, নৌপুলিশ ফাঁড়িসহ বিভিন্ন দপ্তরে প্রেরণ করা হবে।

এ বিষয়ে কথা হয় চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মোঃ জিল্লুর রহমান জুয়েলের সাথে। তিনি জানান, কোনো অবস্থাতেই লঞ্চের বর্জ্য নদীতে ফেলা ঠিক হবে না। লঞ্চ কর্তৃপক্ষ ময়লা-আবর্জনা বস্তাবন্দী করে লঞ্চঘাটের নির্দিষ্ট স্থানে রেখে দিবে। সেখান থেকেই পৌর কর্মীরা নিয়ে যাবেন। আমরা পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে কাজ করছি। যিনি বর্জ্য করবেন তিনি এই পৌরসভার নির্দিষ্ট স্থানে এ বর্জ্য ফেলবেন।

(ইউ/এসপি/মার্চ ২৪, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test