E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শব্দ দূষণে অতিষ্ঠ দিনাজপুরবাসী

২০২১ এপ্রিল ২৮ ১৭:১৫:০৯
শব্দ দূষণে অতিষ্ঠ দিনাজপুরবাসী

শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : উচ্চ শব্দের মধ্য দিয়ে দিনাজপুরে আজ বুধবার পালিত হলো আন্তর্জাতিক শব্দ সচেতনতা দিবস। দিবসটি উপলক্ষে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় দিনাজপুর পরিবেশ অধিদপ্তর,পরিবহণ মালিক এবং কয়েকজন মিডিয়া কর্মীকে নিয়ে ঘরে বসে দায়সারভাবে ভার্চুয়ালি জুম মিটিং এর আয়োজন করে। যে মিটিং এ পরিবেশ অদিদপ্তরের স্থানীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকতা সিনিয়র কেমিষ্ট এ.কে.এম.ছামিউল আলম কুরসি অগছালোভাবেই নিজেই বলে সময় পার করেন। 

সকাল ১১ টা থেকে বেলা ১২ টা পর্যন্ত ঘন্টাব্যাপি এই মিটিং চলে। ধান সংগ্রহ অভিযানের আরেকটি ভার্চুয়ালি জুম মিটিং থাকায় পরিবেশ অদিদপ্তরের স্থানীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকতা সিনিয়র কেমিষ্ট এ.কে.এম.ছামিউল আলম কুরসি’র দীর্ঘ উপস্থাপনার পর জেলা প্রশাসক প্রথমেই বক্তব্য রাখেন। পরে এক পরিবহণ মালিক,দু’জন সাংবাদিক এবং শেষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) সভাপতি’র সমাপনি বক্তব্যে রাখলেও অন্যরা কেউ সুযোগ পায়নি বক্তব্য রাখার।

পরিবেশ অদিদপ্তরের স্থানীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকতা সিনিয়র কেমিষ্ট এ.কে.এম.ছামিউল আলম কুরসি অগছালো দীর্ঘ বক্তব্য দিয়ে শেষ করেন অনুষ্ঠান। বক্তব্য দিতে চেয়েও বক্তব্য না দিতে পেরে ভার্চুয়ালি জুম মিটিং এ অংশ নেয়া অনেকে ক্ষুব্ধ হন।


উচ্চ শব্দের মধ্য দিয়ে এভাবেই দিনাজপুরে আজ বুধবার পালিত হয়েছে আন্তর্জাতিক শব্দ সচেতনতা দিবস। করোনার লকডাউন পরিস্থিতিতেও দিনাজপুরের সড়কে দিব্যি চলছে, বালু ও ইট বহণে যন্ত্রদানব ট্রাক্টর,ট্রাক, শ্যালো মেশিন চালিত নসিমন, অটো-বাইক। চালু রয়েছে, অসংখ্য অটো-বয়লার রাইস মিল,কারখানা। দিব্যি নির্মাণ কাজ চলছে। মোটর সাইকেলে হাইড্রোলিক হর্ণের পাশাপাশি অনেক যুবক-তরুণ সাইলেন্সর পাইপে যন্ত্র সংযোগ করে বিকট শব্দ ছড়াচ্ছে। পাড়া-মহল্লার অলি-গলিতে মহিলার মাথার চুল থেকে শুরু করে লোহা-লক্কও, ভাংড়ি সংগ্রহ এবং পণ্যবিক্রিতে রিক্সা-ভ্যান, অটো-বাইক এবং বাইস-সাইকেলে ব্যবহার করছে,মাইক এবং সাউন্ডবক্স। বাজছে বিকৃতি রুচির গান। আহবান করা হচ্ছে,পণ্য ক্রয়ের। এভাবেই ছড়াচ্ছে, উচ্চ শব্দ সন্ত্রাস।অথচ, এই শব্দদূষণকে চিহ্নিত করা হয়েছে, নীরব ঘাতক হিসেবে। যানবাহনের হর্ন, উচ্চ শব্দে গান ও মাইক বাজানো, কলকারখানার আওয়াজ, পাথর ভাঙ্গার যন্ত্রের শব্দ,মিক্সার যন্ত্রের শব্দ প্রভৃতির মাধ্যমে এই নীরব ঘাতক মানবদেহে প্রবেশ করছে। বিশেষ করে দিনাজপুর শহরের বাসিন্দারা প্রতিনিয়তই কম-বেশি এই শব্দদূষণের শিকার হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, মানুষের জন্য শব্দের সহনীয় মাত্রা ৩৫ থেকে ৫০ ডেসিবেল। অন্যদিকে ক্ট্রাক্টরের চলাচলের শব্দ, যানবাহনের হাইড্রোলিক হর্ন এবং মোটর সাইকেলের সাইলেন্সর পাইপে স্থাপিত শব্দ মানুষের জন্য সহনীয় এই শব্দের তুলনায় অনেকগুণ বেশি। এই শব্দদূষণের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মূখীন হয় শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিরা।

শব্দদূষণের ফলে অন্যান্যদের তুলনায় শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিদের শ্রবণশক্তি হ্রাস পায় সবচেয়ে বেশি। পাশাপাশি এই নীরব ঘাতক মানবদেহে ছড়াচ্ছে নানা ধরণের রোগব্যধী। শ্রবণশক্তি হ্রাসসহ হৃদরোগ, আলসার, উচ্চ রক্তচাপ, মেজাজ খিটখিটে হওয়া, হজম শক্তি ব্যাহত এমনকি বধির হয়ে যাওয়ারও সম্ভাবনা দেখা দেয় এই ঘাতকের কারণে।

১৯৯৭ সালে প্রণীত পরিবেশ সংক্রান্ত বিধিমালায় নীরব এলাকায় দিনে এবং রাতে যথাক্রমে ৪০ ও ৩৫ ডেসিবেল শব্দের সীমা নির্ধারিত আছে। এছাড়া শব্দদূষণ বিধিমালা-২০০৬ অনুযায়ী নীরব, আবাসিক, মিশ্র, বাণিজ্যিক ও শিল্প এলাকা চিহ্নিত করে শব্দের মাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া আছে। শব্দের এই নির্ধারিত মাত্রা ভোর ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত নীরব এলাকায় দিনে ও রাতে যথাক্রমে ৫০ ও ৪০ ডেসিবেল, আবাসিক এলাকায় দিনে ৫৫ এবং রাতে ৪৫ ডেসিবেল, মিশ্র এলাকায় দিনে ৬০ ও রাতে ৫০ ডেসিবেল, বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে ৭০ ও রাতে ৬০ ডেসিবেল এবং শিল্প এলাকায় দিনেও রাতে যথাক্রমে ৭৫ ও ৭০ ডেসিবেলের মধ্যে শব্দের মাত্রা থাকতে হবে।

এই আইন অনুযায়ী হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকার নির্ধারিত কিছু প্রতিষ্ঠান থেকে ১০০ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকাকে নীরব এলাকা ধরা হয়। এই নির্ধারিত শব্দের বাইরে কেউ উচ্চ শব্দের প্রয়োগ ঘটালে প্রথমবার অপরাধের জন্য এক মাস কারাদন্ড বা অনধিক পাঁচ হাজার টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত করার বিধান আছে।পরবর্তী অপরাধের জন্য আছে ছয় মাস কারাদন্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ড। তবে অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এটাই যে, শব্দদূষণের বিরুদ্ধে আইন থাকলেও দিনাজপুরে নেই আইনের প্রয়োগ।আর তাই যেখানে কলকারখানা নির্মাণের কথা লোকালয়ের বাইরে সেখানে নিয়ম-নীতির তুয়াক্কা না করেই কলকারখানা নির্মাণ চলছে লোকালয়ের অভ্যন্তরে।

পারিবারিক অনুষ্ঠান ও বিশেষ দিনগুলোতে অনেক বাসা ও বাড়িতেই আনন্দের নামে জোরে গান বা মাইক বাজিয়ে প্রতিবেশিদের করা হচ্ছে হয়রানি। আবাসিক এলাকায় মিক্সার মেশিনসহ নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত অন্যান্য মেশিন সকাল সাতটা থেকে সন্ধ্যে সাতটা পর্যন্ত চালানোর কথা থাকলেও তা চালানো হয় অনেক রাত অবধি। পাশাপাশি যানবাহনগুলো যত্রতত্র হাইড্রোলিক হর্ণের অপপ্রয়োগ ঘটিয়ে মানবদেহে প্রবেশ করাচ্ছে, নীরব ঘাতক। এভাবেই দিনাজপুরবাসী প্রতিনিয়ত শিকার হচ্ছে শব্দ সন্ত্রাসের।

(এস/এসপি/এপ্রিল ২৮, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

০৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test