E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কৃষককে অস্ত্র দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা 

অবশেষে প্রতিবাদকারী দুই সহোদরকে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার দেখিয়ে মামলা দিয়েছে র‍্যাব!

২০২১ জুলাই ১৬ ১৮:৩৩:০৫
অবশেষে প্রতিবাদকারী দুই সহোদরকে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার দেখিয়ে মামলা দিয়েছে র‍্যাব!

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : অবশেষে এক কৃষককে অস্ত্র দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টার প্রতিবাদকারী এক কলেজ ছাত্র ও তার ভাইকে দেশী পিস্তল ও ছয় রাউন্ড গুলিসহ গ্রেপ্তার দেখিয়ে থানায় মামলা করেছে র‍্যাব। শুক্রবার র‍্যাব-৬ এর ডিএডি  মোঃ গফফার হোসেন বাদি হয়ে সাতক্ষীরা সদর থানায় এ মামলা দায়ের করা হয়। মামলার ওই কৃষককে পলাত দেখিয়ে  আসামী শ্রেণীভুক্ত করা হয়েছে। 

মামলার উল্লেখ করা হয়েছে যে, বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ৮টার দিকে ভোমরা বন্দরে অবস্থানকারি র‍্যাব সদস্যরা গোপন খবরের ভিত্তিতে বৈচানা গ্রামের আশা মোড় এলাকার আব্দুস সবুরের সতাতা ফার্নিচারের দোকানের পাশে অভিযান চালালে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা কতিপয় ব্যক্তি পালানোর চেষ্টা করে। তারা নায়েক হামিদুর ও নায়েক আহ্দুজ্জামানকে কিল ঘুষি মারে। এ সময় বৈচানা গ্রামের আব্দুল গফফারের ছেলে আব্দুল কাদের ও তার ভাই সীমান্ত ডিগ্রী কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের মাষ্টার্স চুড়ান্ত বর্ষের ছাত্র আবুল কাশেমকে আটক করা হয়। পালিয়ে যায় বৈচানা গ্রামের মনিরুল। আব্দুল কাদেরের লুঙ্গির সঙ্গে কোমরে জড়িয়ে রাখা একটি দেশী তৈরি ওয়ান শুটার গান ও কাশেমের লুঙ্গির সঙ্গে কোমরে জড়িয়ে রাখা ছয় রাউণ্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।

এদিকে শুক্রবার বিকেলে জেলখানায় নিয়ে যাওয়ার সময় আদালত চত্বরে আবুল কাশেম ও আব্দুল কাদের সাংবাদিকদের জানান, র‍্যাব এর এফএস মিজানুর রহমান ও তাদের সোর্স চোরাচালানকারি লক্ষীদাঁড়ি গ্রামের ছাদেক আলীর দারা প্রভাবিত হয়ে মনিরুলকে অস্ত্র দিয়ে ফাঁসানোর প্রতিবাদ করেন। এ সময় মনিরুল হাতকড়া নিয়ে পালিয়ে যাওয়ায় পরিকল্পিতভাবে তাদের দু’ ভাইকে মিথ্যা অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠিয়েছে।

সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেলোয়ার হুসেন জানান, র‌্যাব -৬ এর ডিএডি মোঃ গফফার হোসেন বাদি হয়ে আব্দুল কাদের, আবুল কাশেম ও মনিরুলকে পলাতক দেখিয়ে শুক্রবার সরকারি কাজে বাধা ও অস্ত্র আইনে একটি মামলা দায়ের করেছেন। গ্রেপ্তারকৃতদের শুক্রবার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে সদর উপজেলার বৈচানা গ্রামের ফৈমুদ্দিন গাজীর মেয়ে নার্গিস পারভিন ওরফে ময়না জানান, লক্ষীদাঁড়ি গ্রামের জবেদ আলীর ছেলে বহু বিবাহের নায়ক ও কুখ্যাক চোরাকারবারি ছাদেক আলীকে গত বছরের ৭ সেপ্টেম্বর ছাদেককে তালাক দেন তিনি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ছাদেক তাকে ও তার ভাই মনিরুলকে মিথ্যা মামলায় জড়ায় ও পুলিশ দিয়ে হয়রানি করে। এরপর তাকে ও তার ভাই মনিরুলকে বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়া হতো।

সর্বশেষ ভাই মনিরুলকে র‍্যাব দিয়ে অস্ত্রসহ ফাঁসানোর হুমকি দেয়। প্রতিকার চেয়ে তিনি সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক, সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার ও খুলনা র‍্যাব-৬ এর অধিনায়ক বরাবর লিখিত আবেদন করেন। এর পরও তার ভাই মনিনরুল বৃহষ্পতিবার সকাল আটটার দিকে শাঁখরা বাজারে বেগুন বিক্রি করে সাইকেলে বাড়ি ফেরার সময় আব্দুল গফফার সরদারের বাড়ির পাশে সাদা পোশাকে দু’জন নিজেদেরকে র‍্যাব পরিচয়ে মনিরুলের সাইকেলের গতিরোধ করে। সাইকেলের ক্যারিয়ারে রাখা বেগুন বহনকারি খালি ক্যারেটে কাগজে মোড়ানো একটি ছুরি ও কাপড়ে মোড়ানো একটি পিস্তল জোরপূর্বক ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। নিজেকে বাঁচানোর জন্য চিৎকার করলে তড়িঘড়ি করে মনিরুলের হাতে হাতকড়া লাগান সাদা পোশাকে থাকা র‍্যাব এর এফএস(ডিএডি) মিজানুর রহমান।

এ সময় পার্শ্ববর্তী গফফার সরদারের ছেলে আব্দুল কাদের ও আবুল কাশেমসহ স্থানীয়রা ছুঁটে এলে উভয়পক্ষের মধ্যে কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে মনিরুল হ্যাণ্ডকাপ নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে খবর পেয়ে পোশাকধারি দু’ র‍্যাব সদস্যসহ কয়েকজন ঘটনান্থলে এসে কাদের ও কাশেমকে আটক করে। এক ঘণ্টা পর ভোমরা ইউপি চেয়ারম্যান ইজরাইল গাজী ও ইউপি সদস্য সাহেব আলীর মাধ্যমে হাতকড়া ফেরৎ দেওয়া হয়।

নার্গিস পারভিন জানান, বিষয়টি তিনি তাৎক্ষণিক সাতক্ষীরা র‍্যাব অফিসের সহকারি পুলিশ সুপার শরিফুল আহসান, র‍্যাব- ৬ এল অধিনায়ক মোঃ রৈৗশনুল ফিরোজ, সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সজীব হোসেন ও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেলোয়ার হুসেনকে অবহিত করে ন্যয় বিচার দাবি করেন। শুক্রবার রাতেই তিনি জানতে পারেন যে কাশেম ও কাদেরকে অস্ত্র এবং গুলির মামলা দিয়ে আদালতে পাঠানো হবে। পলাতক দেখিয়ে আসামী করা হবে ভাই মনিরুলকে।

(আরকে/এসপি/জুলাই ১৬, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

১০ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test