E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

অস্ত্র মামলায় ৩ দিনের রিমান্ডে টাঙ্গাইলের পৌর কাউন্সিলর মোর্শেদ 

২০২১ আগস্ট ২১ ১৮:২৬:১৭
অস্ত্র মামলায় ৩ দিনের রিমান্ডে টাঙ্গাইলের পৌর কাউন্সিলর মোর্শেদ 

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি : টাঙ্গাইল পৌরসভার কাউন্সিলর ও সাবেক যুবলীগ নেতা আতিকুর রহমান মোর্শেদের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। শুক্রবার (২০ আগস্ট) বিকালে অস্ত্র মামলায় সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা হাসানাত তার রিমান্ড মঞ্জুর করেন। টাঙ্গাইলের আদালত পরিদর্শক তানভীর আহমেদ রিমান্ডের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আতিকুর রহমান মোর্শেদ ১৭নং ওয়ার্ডের বিশ্বাস বেতকা এলাকার আব্দুর রহিমের ছেলে। 

এদিকে শনিবার (২১ আগস্ট) দুপুরে টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু অডিটরিয়ামে মৌসুমী মাহমুদা নামে এক নারী গ্রেপ্তারকৃত কাউন্সিলর আতিকুর রহমান মোর্শেদের বিরুদ্ধে ২০০ সদস্যের একটি কিশোরগ্যাং গঠনের দাবি করেছেন।
এরআগে বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) একটি চাঁদাবাজির মামলায় আতিকুর রহমান মোর্শেদকে পৌর ভবনের সামনে থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। পরে তাকে নিয়ে শহরের বিশ্বাস বেতকা এলাকায় তার বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে তার শয়ন কক্ষ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, ছয় রাউন্ড গুলি ও দু’টি ম্যাগজিন উদ্ধার করা হয়। এদিন রাতে টাঙ্গাইল সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সাইদ ইবনে রাজীব বাদী হয়ে আতিকুর রহমান মোর্শেদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করেন।

শুক্রবার বিকালে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শামীম হোসেন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে মোর্শেদকে টাঙ্গাইলের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করেন।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, আতিকুর রহমান মোর্শেদ টাঙ্গাইলের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মধ্যে অন্যতম। তিনি দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, ভূমিদস্যুতা সহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করে আসছিলেন। পুলিশের হাতে একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়ে কারাভোগও করছেন। কারাগার থেকে বেড়িয়ে তিনি আবারও শুরু করেছেন বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড। টাঙ্গাইল পৌরসভার নির্বাচনে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েও তার সন্ত্রাসী কর্মকান্ড থেমে থাকেনি। তার বিরুদ্ধে চারটি হত্যা মামলাসহ এক ডজন মামলা রয়েছে বলে পুলিশ জানায়।

বৃহস্পতিবার টাঙ্গাইল পৌর সভার সাবালিয়া এলাকার আশিকুর রহমান আশিক নামে এক ব্যক্তি তার বিরুদ্ধে টাঙ্গাইল সদর থানায় পাঁচ লাখ টাকা চাঁদাদাবির অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় আতিকুর রহমান মোর্শেদ ছাড়া আরও পাঁচজনকে আসামি করা হয়। এছাড়া অজ্ঞাত আরও ১৫-২০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। মামলার পরেই পুলিশ আতিকুর রহমান মোর্শেদকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালায়।

টাঙ্গাইল সদর থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মীর মোশারফ হোসেন জানান, কাউন্সিলর আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধে দুই যুবলীগ নেতা হত্যা, ছাত্রদল নেতা রেজা হত্যা, ব্যবসায়ী তুহিন হত্যা মামলাসহ চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের অভিযোগে বিভিন্ন সময়ের এক ডজন মামলা হয়েছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, আতিকুর রহমান মোর্শেদ এক সময় টাঙ্গাইল শহর ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। পরে জেলা আওয়ামী যুবলীগের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে দলীয় পদ না থাকলেও শহর আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে দলীয় বিভিন্ন কর্মকান্ডে অংশ নিতেন। মোর্শেদের বিরুদ্ধে একটি সন্ত্রাসী বাহিনী গঠন করে শহরের বেশ কয়েকটি এলাকা নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ছাত্রদল নেতা রেজা হত্যা মামলা ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।

কিশোর গ্যাং গঠনের অভিযোগ

টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু অডিটরিয়ামে শনিবার (২১ আগস্ট) দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে মৌসুমী মাহমুদা নামে এক নারী অভিযোগ করেছেন, টাঙ্গাইল পৌরসভার ১৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রিমান্ডে থাকা আতিকুর রহমান মোর্শেদ স্থানীয় পর্যায়ে ২০০ সদস্যের একটি কিশোরগ্যাং গঠন করেছেন। ওই নারী কাউন্সিলর আতিকুর রহমান মোর্শেদের চাচাতো ভাতিজি ও মোহাম্মদ আলী শাহজাদার মেয়ে।

সংবাদ সম্মেলনে মৌসুমী মাহমুদা পৌরসভার কাউন্সিলর আতিকুর রহমান মোর্শেদকে গ্রেপ্তার করায় পুলিশ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি অভিযোগ করেন, কাউন্সিলর মোর্শেদের সহযোগী মুন্সি তারেক পটন, বাপ্পি, টুন্ডা রনি, রাফসান, অন্তর, সাদ্দাম গংরা তাকে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। কাউন্সিলর মোর্শেদ জামিনে এলে তাকে ও তার পরিবারের সবাইকে দেখে নিবে বলে শাসাচ্ছে। তিনি জানান, তাদের পরিবারের সদস্যরা কেউ বাইরে বের হলেই কাউন্সিলর মোর্শেদের কিশোরগ্যাংয়ের মাদকাসক্ত সদস্যরা মোটরসাইকেল নিয়ে পিছু ধাওয়া করে নানা রকম কুৎসিত মন্তব্য ছুঁড়ে দিচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত কাউন্সিলর মোর্শেদের অপর সহযোগী রাফসানের স্ত্রী সুমাইয়া আক্তার তিশা অভিযোগ করেন, কাউন্সিলর মোর্শেদ তার স্বামী রাফসানকে দিয়ে নানা বেআইনী কাজ করান। তিনি স্বামীর বেআইনী কাজে বাঁধা দেওয়ায় তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার পায়তারা করছে। সংবাদ সম্মেলনে তারা কাউন্সিলর আতিকুর রহমান মোর্শেদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

(আরকেপি/এসপি/আগস্ট ২১, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

০৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test